সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
Published: 4th, March 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তিকে নাগরিক অধিকার হিসেবে দেখেছে। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি জানিয়েছেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ২(ভ) ধারা অনুযায়ী নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার সাইবার সুরক্ষা আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক আনার উদ্যোগ দিয়েছে সরকার। বস্তুত এর মাধ্যমে তথ্য এবং যোগাযোগে বৈশ্বিক কানেক্টিভিটিতে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় গত ১৭ জুলাই পুরো বাংলাদেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সাবেক হাসিনা সরকার। এরপরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দিয়ে পুরো দেশে ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট ঘটানো হয়। অবশেষে ৫ আগস্ট পতনের মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট সেবা পুনরায় সম্পূর্ণভাবে চালু হয়। সেসময় ব্ল্যাক আউটের কারণে মানবাধিকার তো লঙ্ঘিত হয়েছেই, অনলাইন নির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ এটিই প্রথম নয়। বিগত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত শেখ হাসিনার রেজিমে অসংখ্যবার ভিন্নমত-বিরোধী দলকে দমনে ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে। ইন্টারনেট সোসাইটি ‘পালস’ গত নভেম্বরে ‘শাটডাউন ওয়াচ: বিল্ডিং এ কমিউনিটি অ্যাগেইনস্ট ইন্টারনেট শাটডাউন ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বা সীমিত করা হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ১৭ বার ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
২০২৩ সালে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম, তার আগের বছর ২০২২ সালে ছিল পঞ্চম অবস্থানে। দুই বছরে যথাক্রমে তিনবার এবং ছয়বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডিজিটাল পরিসরের অধিকারবিষয়ক অ্যাকসেস নাউ ও ইন্টারনেট বন্ধবিষয়ক মানবাধিকার প্ল্যাটফর্ম কিপইটঅন কোয়ালিশনের ‘সংকুচিত গণমাধ্যম, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন ও বিরোধী দলগুলোর সমাবেশের সময় শেখ হাসিনা সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল।
ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার গত দশক থেকে আলোচিত একটি বিষয়। ২০১১ সালের ৩ জুন জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১০ সালে বিবিসি বিশ্বের ২৬টি দেশে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলে উঠে আসে, বিশ্বের ৭৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকারের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়ন ‘রাইট টু ইন্টারনেট’ ঘোষণার মাধ্যমে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ঘোষণার দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে।
অবশ্য জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেওয়ার আগেই বিশ্বের চারটি দেশ ইন্টারনেট ব্যবহারকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করে নিজেদের সংসদে আইনও পাস করে। ৪টি দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে এস্তোনিয়া। ২০০০ সালে এস্তোনিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করে আইন পাস করা হয়। ২০০৯ সালে ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ড এবং ২০১০ সালে কোস্টারিকার সংসদে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস করা হয়। জাতিসংঘের স্বীকৃতি দেওয়ার পর আরও ৪২টি দেশ ইন্টারনেট ব্যবহারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০২০ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় পাঁচমাস ইন্টারনেট বন্ধ রাখা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার তথ্যের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা ভারতের সংবিধানের ১৯(১)(এ) অনুচ্ছেদে সুরক্ষিত। রায়ে আদালত উল্লেখ করে, ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার মৌলিক অধিকার এবং এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা অসাংবিধানিক। বর্তমান সরকার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশের ১৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেটের গ্রাহক। ইন্টারনেট ব্যবহারের এই বৃদ্ধির পরেও, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রবেশাধিকার ও ব্যবহারে বৈষম্য রয়ে গেছে। বিশেষ করে, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট অবকাঠামো বেশ দুর্বল এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাবে প্রান্তিক জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহারে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশব্যাপী স্বনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সরকারি সেবাসমূহ সহজলভ্য হয়েছে, যা সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থা সাবমেরিন কেবলনির্ভর। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দেয়।
অন্যদিকে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্টারলিংকের ৬ হাজার ৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহককে টেলিভিশনের অ্যানটেনার মতো একটি ডিভাইস বসাতে হবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্টারলিংকের স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। অ্যানটেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংকের রাউটার স্থাপন করে গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা পাবেন। এরফলে একই সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেমন শক্তিশালী ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছাবে তেমনি পরবর্তী কোনো সরকার চাইলেও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে পারবে না।
আশার বিষয় হলো, অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেমন নানা উদ্যোগ নিচ্ছে একই সঙ্গে সিভিল সোসাইটি থেকে নানা উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে এবং হচ্ছে। অ্যাক্টিভিস্ট রাইটস প্লাটফর্মটি ‘শাটডাউন ওয়াচ’ নামে বাংলাদেশের প্রথম লাইভ ইন্টারনেট শাটডাউন মনিটরিং ড্যাশবোর্ড তৈরি করেছে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং অবাধ থাকবে।
প্লাটফর্মটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ডিজিটাল রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট শোয়েব আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে স্থানীয় সাংবাদিক, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারি টেলিযোগাযোগ সংস্থা, টেলিকম প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাথমিক যাচাই বাছাই করি। এরপর অধিকতর যথার্থতা নিশ্চিতে ক্লাউডফ্লেয়ার রাডার, আইওডিএ (ইন্টারনেট বিভ্রাট শনাক্তকরণ এবং বিশ্লেষণ) এবং ইন্টারনেট সোসাইটি পালস শাটডাউন ট্র্যাকারসহ বহিরাগত উৎসগুলির সঙ্গে আমাদের ডেটা ক্রস-রেফারেন্স করি। সবগুলো সম্পন্ন করে শাটডাউন ওয়াচ ড্যাশবোর্ডে যাচাইকৃত তথ্য যুক্ত করা হয়।
এ ধরনের সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আশা করা যায়- অচিরেই বাংলাদেশে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে অবাধে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট ত হয় ছ বন ধ র সরক র টফর ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমীরের বক্তব্য খণ্ডন করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমীরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। তাঁর এমন মন্তব্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডারই প্রতিফলন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে তানিয়া আমীরের বক্তব্য, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিফলিত হয়েছে।’
প্রেস উইংয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রেস উইং বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদ্ঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে:
তদন্ত কমিশন২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃ তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন কয়েক ডজন সাক্ষীর (এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন, যার মধ্যে অফিসার, বিডিআর কর্মী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার অন্তর্ভুক্ত) সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচন’, সমস্ত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং এমনকি যেকোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তদন্তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ১৮ এপ্রিল কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সাক্ষ্য থাকা যেকোনো ব্যক্তির কাছে তাদের ওয়েবসাইট বা ই–মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়।
সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকারস্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পুনঃ তদন্তের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিশন ইতিমধ্যেই কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে এবং প্রয়োজনে তারা এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের (যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ) ডাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ‘প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচিত’ হবে, মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সম্ভাব্য সব বিদেশি বা দেশীয় চক্রান্তের বিষয়টি খুঁজে দেখা হবে।
তথ্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদনপ্রাসঙ্গিক তথ্যসংবলিত যেকোনো নাগরিক বা সংস্থাকে তার ওয়েবসাইট বা ই-মেইলের মাধ্যমে এগিয়ে আসার জন্য কমিশন গত ১৮ এপ্রিল গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
এটি ১৬ বছর আগের একটি অপরাধের তদন্তের জটিলতা তুলে ধরে এবং তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। যা সরকার বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে—তানিয়া আমীরের এমন দাবির বিপরীতে এটি স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার একটি আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
আদালতের মামলা এবং মুক্তি২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েক শ সাবেক বিডিআর কর্মীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে তানিয়া আমীরের অভিযোগ কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন্দীদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নিহত কর্মকর্তাদের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায় যে যারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে বেঁচে যাওয়াদের পরিবারগুলো নতুন অভিযোগ দায়ের করেছে (যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে নতুন করে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।
নিহতদের স্মরণঅন্তর্বর্তী সরকার একই সঙ্গে নিহতদের সম্মান জানাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা প্রদান করে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমীরের সম্পৃক্ততা সুপরিচিত। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, তিনি এবং তাঁর বাবা আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪–এর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, যা দলের সঙ্গে সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত বহন করে।
‘তাঁর পারিবারিক পটভূমি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত: তাঁর বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও তিনি স্বাধীনভাবে আইনি মামলা করেছেন, তবু তাঁকে দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হিসেবে দেখা হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেসক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এবং ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা যেতে পারে।
জেনেভা সম্মেলনে তানিয়া আমীর এবং অন্য বক্তারা কোনো নতুন প্রমাণ উদ্ধৃত করেননি; বরং তারা বছরের পর বছর ধরে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে প্রচারিত দাবিগুলো (যেমন মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতিপূরণ আইন, বন্দীদের মুক্তি) পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।