Prothomalo:
2025-05-01@05:09:33 GMT

সাহ্‌রির ফজিলত ও বিধিবিধান

Published: 5th, March 2025 GMT

সাহ্‌রি রোজা ও রমজানের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাহ্‌রি শব্দের অর্থ শেষরাতের খাবার। ইসলামি পরিভাষায় রোজা বা সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ভোররাতে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে আহার গ্রহণ করা হয়, তা হলো সাহ্‌রি। সাহ্‌রি একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নত। ইসলামি বিধান সহজ, সাবলীল, যৌক্তিক ও মানবিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সত্তাকে তার সামর্থ্যের অধিক দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।

পূর্ববর্তী উম্মতদের রোজায় সাহ্‌রির বিধান ছিল না। তখন নিয়ম ছিল, সন্ধ্যারাতে এশার ওয়াক্তের মধ্যে ঘুমানোর আগেই পানাহার শেষ করতে হতো। ইসলামের প্রাথমিক যুগেও ওই নিয়ম বিদ্যমান ছিল। সাহাবি হজরত কয়েস ইবনে সারমাহ আনসারি (রা.

) সারা দিন পরিশ্রমের পর ইফতার করে আহারের পূর্বেই ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরদিন রোজা রেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বিষয়টি প্রিয় নবীজি (সা.)–এর সমীপে পেশ করা হলে সাহ্‌রির নতুন বিধান–সংবলিত এই আয়াত নাজিল হয়, ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী মিলন হালাল করা হয়েছে।

সাহ্‌রি একটি ইবাদত, এই ইবাদতকে ‘সাহ্‌রি পার্টি’র মতো কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা এমন কোনো রসুম রেওয়াজ বা প্রথায় পরিণত করা যাবে না, যাতে এর ধর্মীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, ইবাদতের ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট হয়

তারা তোমাদের পরিচ্ছদস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদস্বরূপ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তা কামনা করো। আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা হতে উষার শুভ্ররেখা সুস্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধানাবলি মানবজাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা মুত্তাকি হতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭; তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৯-১২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ৯৪-৯৬, সৌদি সংস্করণ)।

তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য সাহ্‌রির গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, কেননা সাহ্‌রিতে রয়েছে বরকত।’ (বুখারি, ১৮০১)। নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘আমাদের রোজা আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহ্‌রি খাওয়া আর না খাওয়া।’ (মুসলিম, আলফিয়াতুল হাদিস, পৃষ্ঠা: ১৩১)।

‘অর্ধরাত্রির পর থেকে সাহ্‌রির সময় শুরু হয়।’ (মোল্লা আলী কারি রা., মিরকাত শরহে মিশকাত)। ইমাম জামাখ্শারি (রহ.) ও ফকিহ আবুল লাইস ছামারকান্দী (রহ.)–এর মতে সাহ্‌রির সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহ্‌রি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা উচিত নয়, তার পূর্বেই সাহ্‌রির নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার শেষ করতে হবে। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও; যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও; যদি এক লুকমা খাদ্যও হয়।’ (মুসলিম)। অর্থাৎ যেকোনো প্রকার ও যেকোনো পরিমাণ খাদ্য বা পানীয় দ্বারাই সাহ্‌রির সুন্নত পালিত হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহ্‌রি গ্রহণ না করলে সুন্নত তরক হবে।

যদি কখনো ফরজ গোসল করে সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকে; তখন অজু করে বা হাত–মুখ ধুয়ে আগে সাহ্‌রি খেয়ে নিতে হবে। এরপর গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ, সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়; বরং সুন্নত; আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ। গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে নিতে হবে, বিনা ওজরে বেশি সময় অপবিত্র অবস্থায় থাকা সমীচীন নয়; আর রোজা অবস্থায় অনেকক্ষণ অপবিত্র থাকা মোটেও উচিত নয়, এটি মাকরুহ। সাহ্‌রি খাওয়া সম্ভব না হলেও রমজানের ফরজ রোজা রাখতে হবে।

সাহ্‌রি একটি ইবাদত, এই ইবাদতকে ‘সাহ্‌রি পার্টি’র মতো কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা এমন কোনো রসুম রেওয়াজ বা প্রথায় পরিণত করা যাবে না, যাতে এর ধর্মীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, ইবাদতের ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট হয় এবং শরিয়তের বিধান লঙ্ঘিত হয় অথবা কোনো গুনাহের কারণ হয়। তাই সাহ্‌রি পার্টির মতো ভুল প্রথা চালু করা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে রাতের নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতের আবহে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং নানান জটিলতা তৈরি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ র জন য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ