বড় ধরনের টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও আতঙ্ক ভর করেছে। টানা পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের কাছাকাছি চলে আসায় এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এ কারণে আজ রোববার ঢাকার বাজারে ক্রেতা না থাকায় অনেক কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন হয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান এই শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকটি আজ ৭৫ পয়েন্ট বা প্রায় দেড় শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৪ পয়েন্টে। গত প্রায় তিন মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ৯ জুলাই ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৩৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। শেয়ারবাজারে সূচকের ৫ হাজার পয়েন্টের অবস্থানকে মনস্তাত্ত্বিক সীমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে সূচক যখনই এ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সীমার কাছাকাছি নেমে আসে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে। সেই আতঙ্ক থেকে অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানেও শেয়ার বিক্রি করে দেন। তাতে সূচক আরও দ্রুত কমতে থাকে। বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে একধরনের অস্থিরতা দেখা দেয় বাজারে, যেটি এখন চলছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ৪০৪ পয়েন্ট বা সাড়ে ৭ শতাংশ কমে গেছে। চলতি মাসের প্রথম কার্যদিবসে অর্থাৎ ৫ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৪৪৮ পয়েন্টে। আর আজ তা কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৪ পয়েন্টে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে। ফলে নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করছেন না। উল্টো হাতে থাকা শেয়ারও লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে শেয়ারের দাম টানা কমতে থাকায় বাজারে জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলও বেড়েছে। শেয়ারের বিপরীতে যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিয়েছিল, এখন শেয়ারের দাম কমতে থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ে জোরপূর্বক শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। শেয়ারের বিপরীতে ঋণের ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরপূর্বক এই বিক্রির আইনি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা মানুষের মনে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও রাজনৈতিক অনৈক্যে মানুষের মনে নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিও কমে এসেছে। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়ছে। এ ছাড়া অতীতের নানা অনিয়ম তদন্ত ও একের পর এক শাস্তির বিধানে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে এসব পদক্ষেপের সুফল হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু স্বল্প মেয়াদে যে প্রভাব পড়ছে, সেটি কাটিয়ে ওঠা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন দিশাহারা অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের সঠিক পথ দেখাতে না পারলে বাজারের প্রতি আস্থা ফিরবে না।

এদিকে বড় দরপতনের বাজারে লেনদেনও কমে গেছে। আজ ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৪২ কোটি টাকা, গত পাঁচ মাসের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ ডিএসইতে সর্বনিম্ন ৪১৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল ২৫ জুন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড এসইএক স শ য় রব জ র ল নদ ন অবস থ আতঙ ক স চকট

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (১২ থেকে ১৬ অক্টোবর) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা কমলেও সিএসইতে বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৪০৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬৪.৩০ পয়েন্ট বা ৩.১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১৯ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬৫.১২ পয়েন্ট বা ৩.২০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৬৭ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪৭.৯৮ পয়েন্ট বা ৪.২৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৬ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ৭৭.০৮ পয়েন্ট বা ৭.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৭ হাজার ১২৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ২৮৫ কোটি  টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৭ হাজার ৮৪১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ২৮৫ কোটি ৬৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬৭৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৬টির, দর কমেছে ৩২৬টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৭টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৭৮.৮০ পয়েন্ট বা ৩.২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ২.২৮ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৬৮১ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ৩.১৫ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৩.৬৬ শতাংশ কমে ৯১৩ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ১.৯৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪ হাজার ২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৫৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, দর কমেছে ২৪৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে বড় পতনে সপ্তাহ শুরু
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে  ইন্টারন্যাশনাল লিজিং
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক
  • ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে ২.৬৬ শতাংশ
  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা