গ্যাসস্বল্পতায় দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি শিল্প খাতে যেই সংকট দেখা দিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। বুধবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্যাসের জন্য শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হইতেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় বিশেষ করিয়া পোশাকশিল্প কারখানায় উল্লেখযোগ্য যন্ত্রপাতি চলিতেছে না।
সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন করিতে না পারায় তাহারা আর্থিক লোকসানের শঙ্কায় রহিয়াছে। ইতোমধ্যে শতাধিক কারখানা বন্ধ হইয়াছে। কেহ কেহ বাধ্য হইয়া শ্রমিক ছাঁটাই করিতেছে। একদিকে বেকার হইয়া পড়া শ্রমিকরা বিবিধ দাবিতে প্রায় দিবসই সড়ক অবরোধ, ভাঙচুরসহ বিক্ষোভ করিতেছেন; অন্যদিকে উৎপাদন সমস্যায় পণ্য রপ্তানি হ্রাস পাইলেও বিদেশ হইতে কাঁচামাল আমদানি বর্ধমান। ইহার মধ্যে নূতন করিয়া কারখানার গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণকরণ প্রক্রিয়া শুরু হইয়াছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাইলে নূতন বিনিয়োগ না আসিবার পরিস্থিতি তৈয়ার হইবে। আমরা মনে করি, গ্যাস সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ লইতে হইবে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাইলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছাইবে।
আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই গ্যাসের সমাধান জরুরি। গ্যাস সংকটের কারণে উদ্যোক্তাদিগের রপ্তানি আদেশ বাতিলের শঙ্কা উড়াইয়া দেওয়া যায় না। তেমনটি ঘটিলে কিংবা গ্যাস সমস্যার দ্রুত সমাধান না হইলে সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে বাধ্য।
সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক খাতে বর্তমানে শ্রমিক অসন্তোষ, তৎসহিত যুক্ত হইয়াছে গ্যাস সংকট। রাজনৈতিক পালাবদলের পর কিছু কারখানা মালিকের অনুপস্থিতিও শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাঁধিতে ভূমিকা রাখিতেছে বলিয়া মনে করিতেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দাবিদাওয়া এবং অসন্তোষের আরেক কারণ ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। জুলাই বিপ্লবের পর তৈরি পোশাক কারখানায় ধারাবাহিক অস্থিরতা, গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত খাতে সংকট কাটিতেছে না।
আমরা জানি, জ্বালানি হইল শিল্পের প্রধান চালিকাশক্তি। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস না থাকিলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। সাভার ও আশুলিয়ায় অধিকাংশ কারখানায় গ্যাস সংকটে উৎপাদন লাটে উঠিয়াছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ প্রায় সর্বত্র শিল্পকারখানা গ্যাসস্বল্পতার ভুক্তভোগী। অনেক কারখানায় গ্যাসের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহার করিলেও উহাতে উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পায়। রমজানের পূর্বে গ্যাসের চাপ কিছুটা থাকিলেও এখন সমস্যা আরও প্রকট। যাহা হতাশার, জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলিয়াছেন, শীঘ্রই গ্যাস সংকট দূর হইবে না। পূর্বে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান অপেক্ষা আমদানিতেই সরকারের আগ্রহ ছিল অধিক। সম্ভাবনা থাকিবার পরও দীর্ঘদিন ধরিয়া গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করা হইয়াছে। ইহাতে গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পাইলেও চাহিদা প্রত্যহ ক্রমবর্ধমান এবং সংকট ঘনীভূত।
অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বারংবার তাগাদা দিয়া বলিয়াছি, জরুরি ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করিতে হইবে, নতুবা অদূর ভবিষ্যতে দেশ গ্যাস সংকটে পড়িতে পারে। আমদানি করিয়াও সেই সংকটের সমাধান সম্ভব হইবে না। গ্যাস সমস্যার সমাধান না করিয়া উহার মূল্য বৃদ্ধি প্রত্যাশিত নহে।
আমরা দেখিয়াছি, নূতন করিয়া শিল্পের জন্য গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের অধিক করিবার প্রস্তাবের উপর গণশুনানি হইয়াছে। পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলিয়াছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করিলে শিল্পের অস্তিত্বই কঠিন হইবে। গ্যাসের ক্ষেত্রে অনেক ‘সিস্টেম লস’ হইয়া থাকে। উহা হ্রাস করিতে পারিলে মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন হইবে না।
আমরা জানি, পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে লইবার প্রচেষ্টা চলিতেছে। তজ্জন্য যথায় নূতন নূতন কারখানা স্থাপন ও পুরাতন কারখানার সম্প্রসারণ জরুরি, তথায় গ্যাস সংকটের কারণে এই শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য গ্রহণযোগ্য নহে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হইবে শিল্পের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
ইসরায়েলি পুলিশ দেশটির সেনাবাহিনীর সাবেক একজন প্রসিকিউটরকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর ইসরায়েলি সেনাদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ওই সাবেক প্রসিকিউটরের নাম ইয়াফাত তোমের-ইয়েরুশালমি। গতকাল সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী।
জানা যায়, অনলাইনে ওই ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তখন তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর নিখোঁজ ছিলেন।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈন্যরা এক বন্দীকে আলাদা স্থানে নিয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুর রয়েছে। তাঁরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেদের কার্যকলাপ এমনভাবে আড়াল করে রেখেছেন, যাতে কেউ দেখতে না পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভিডিও ফাঁসের ঘটনাকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘জনসংযোগের ওপর সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস ঘিরে ইসরায়েলের শীর্ষ আইনি কর্মকর্তার পদত্যাগ০১ নভেম্বর ২০২৫অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে আল-জাজিরার নউর ওদেহ বলেন, ওই নারী প্রসিকিউটরের আটকের ঘটনা ইসরায়েলে ‘রাজনৈতিক ও আইনি ঝড়’ তৈরি করেছে। তবে আটক হওয়া ব্যক্তির ওপর বাড়তি মনোযোগ মূল ঘটনা থেকে নজর সরিয়ে দিচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারগুলোয় অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন‘স্বপ্ন ছিল বুকে জড়িয়ে ধরার, এখন আশা দাফনটা যদি অন্তত করতে পারি’২ ঘণ্টা আগে