তিন দফা সময় পেলেও জমা দিয়েছেন অর্ধেক
Published: 6th, March 2025 GMT
প্রথমে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, পরে সেটি বাড়িয়ে করা হয় ৩১ ডিসেম্বর; সর্বশেষ সেই সময়সীমাও বাড়িয়ে করা হয় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও, তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দফা সময়সীমার ১৫ দিন পার হওয়ার পর জানা যাচ্ছে, মাত্র অর্ধেক সংখ্যক কর্মচারী তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। সারাদেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছেন। এর মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন আট লাখের মতো।
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমার বিষয়টি দেখভাল করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ। শৃঙ্খলা-৪ শাখা থেকে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। কতজন সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন– জানতে চাইলে অনুবিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, অনেকেই তাদের সম্পদ বিবরণী আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন। আমরা এখন তা বাছাই করছি। এটি শেষ হলে বলতে পারব, কী সংখ্যক বিবরণী জমা পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিবরণী জমা দেওয়ার সংখ্যা কম। সংশ্লিষ্ট ক্যাডারগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় এখনও বিবরণী জমা নিচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-৪ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ
নূর এ আলম সমকালকে বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সময় পার হলেও আমরা এখনও সম্পদ বিবরণী নিচ্ছি। তিনি বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং এই মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মচারীরা আমাদের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেবেন। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়গুলোতে জমা দিচ্ছেন।
‘সব সম্পদ বিবরণী একসঙ্গে করা হবে কিনা, কেউ অসত্য তথ্য দিয়েছেন কিনা, যাচাই কীভাবে হবে?’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমা নেওয়ার পর সেগুলো কী করা হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
নতুন করে আর বিবরণী জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হবে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিদ্যমান সরকারী চাকরি আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এর পর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ কমা বা বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু এই নিয়ম মানা হয় না বললেই চলে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ২৬ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড.
গত জুলাই মাসে হাইকোর্ট সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বিবরণীর ঘোষণা এবং সময়ে সময়ে তা দাখিল-সংক্রান্ত বিধি কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।
অন্যদিকে গত বছরের ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার পর বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তা তাদের সম্পদের হিসাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জমা দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারীদের সবাই এখনও তা দিতে পারেননি।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা আনতে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে এবং তথ্য গোপন করলে দুই ধরনের দণ্ড হবে– লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড। লঘুদণ্ড হচ্ছে তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা; কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ বেতন বা আনুতোষিক থেকে আদায় করা; বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ। আর গুরুদণ্ড হলো– নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত করা।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, তিন দফা সময় দেওয়ার পরও এখনও অর্ধেক লোক হিসাব দেয়নি– এ চিত্র হতাশার। সরকার চেয়েছে, তাই হিসাব দিতেই হবে। কেউ না দিলে তাকে বাধ্য করতে হবে। হিসাব না দেওয়া চাকরিবিধি ও আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। কেউ না দিলে বুঝতে হবে, কোনো ভেজাল আছে।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে জানি– মূলত দুটি কারণে হিসাব দিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনীহা থাকে। এক. আস্থাহীনতা। বৈধ আয়ের হিসাব দেওয়ার পরও অকারণে টানাহেঁচড়া করা হয় কিনা এবং দুই. আয়ের মধ্যে ‘ঘাপলা’ থাকা। তাই হিসাব দিতে ভয়। এই শ্রেণির কর্মচারীদের ধরতেই মূলত সরকারের এই উদ্যোগ।
একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, হিসাব নেওয়ার পর নিরপেক্ষভাবে তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলে সবাই হিসাব দিতে আস্থা পাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক য ড র র কর মকর ত র ব বরণ সরক র র গত বছর স থ বর বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াত-এনসিপি নাখোশ
শুধু বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় অসন্তুষ্ট জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। অন্যদিকে বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল।
জামায়াতে ইসলামী এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে দলটির এক শীর্ষ নেতা সমকালকে বলেছেন, শুধু বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে অবমূল্যায়ন ও ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। সর্বদলীয় আলোচনায় নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত ছিল।
এনসিপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির বর্ধিতাংশে পরিণত হয়েছে। তারা নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এ অবস্থায় সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা– সংশয় রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন তারেক রহমান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
এর আগে সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
আগামী বছরের ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি পবিত্র রমজান শুরু হবে। লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতির পর ধারণা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হতে পারে। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। গত ৬ জুন তিনি আরেক ভাষণে জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে।
এপ্রিলে তাপপ্রবাহ, পাবলিক পরীক্ষাসহ নানা কারণ দেখিয়ে বিএনপি ও তাদের সমমনারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল। বিএনপি আগের অবস্থান থেকে সরে রমজানের আগে বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট চেয়েছে লন্ডনের বৈঠকে।
বিএনপিকে ‘তোয়াজে ক্ষুব্ধ’ জামায়াত
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান গত এপ্রিলে দাবি করেছিলেন, রমজানের আগেই যেন ভোট গ্রহণ হয়। পরে দলটি অবস্থান নেয় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের। প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে স্বাগত জানায় জামায়াত।
ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে আগে থেকেই নীরব বিএনপির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার চেষ্টায় থাকা জামায়াত।
জামায়াতের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা গত রাতে সমকালকে বলেন, জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, বিএনপিকে তোয়াজ করতে লল্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে– ঠিক আছে। কিন্তু আলোচনার পর ঢাকায় সর্বদলীয় বৈঠক করে রমজানের আগে ভোটের ঘোষণা দিলে সব দল এবং সরকারের জন্য ভালো হতো। লন্ডন বৈঠকের পর ঘোষণা দেওয়ায় মানুষের কাছে বার্তা গেল– বিএনপিই একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপির কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে ইউনূস সরকার। এ বার্তার কারণে অন্য দলগুলো নির্বাচনের মাঠে প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিবন্ধকতায় পড়বে। তিনি বলেন, এক-এগারো সরকারের তথাকথিত ‘সেফ এক্সিট’ পরিকল্পনার কারণেই ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ অস্বাভাবিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল।
সরকার ও বিএনপির যৌথ বিবৃতি নিয়েও নাখোশ জামায়াত। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, এর মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।
লন্ডনের বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সমকালকে বলেন, জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় বক্তব্য জানাবে।
সরকার বিএনপির হয়ে গেছে– অভিমত এনসিপির
লন্ডনে বসে বাংলাদেশের নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি সমকালকে বলেন, শুধু বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারিত হতে পারে না। এর মাধ্যমে সরকার বিএনপির প্রতি ঝুঁকে গেছে। তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা– এ প্রশ্নও উঠবে।
এনসিপি আনুপাতিক পদ্ধতির সংসদীয় উচ্চকক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসসহ ‘মৌলিক সংস্কার’ কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে। নাসীরুদ্দীন বলেছেন, এনসিপি নির্বাচনের বিরোধী নয়। কিন্তু মৌলিক সংস্কার, জুলাই গণহত্যার বিচারে কোনো বার্তা নেই। একটি দলকে খুশি করতে সংস্কার; বিচারের চেয়ে নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা গণঅভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে যায় না।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যখন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছে, সেই সময়ে বিদেশে একটি দল বা ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত।
গত রাতে এক বিবৃতিতে এনসিপি বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন-সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত। এসব ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জনআকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।
‘যৌথ বিবৃতি’ নিয়ে প্রশ্ন ইসলামী আন্দোলনের
সরকার-বিএনপির বৈঠককে সমঝোতার জন্য ইতিবাচক আখ্যা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। দলটি নির্বাচনের সময়সীমা বিষয়ে অবস্থান পুনর্বিবেচনার জন্য ড. ইউনূস এবং তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানালেও যৌথ বিবৃতির সমালোচনা করেছে।
সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির নীতিগত সমর্থনকে স্বাগত জানিয়ে দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বিবৃতিতে বলেছেন, ড. ইউনূস সরকারপ্রধান, তারেক রহমান একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। তারেক রহমান দেশের রাজনীতির একক প্রতিনিধিত্ব করেন না। বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হলেও সরকারপ্রধানের সঙ্গে একজন রাজনৈতিক নেতার সংলাপকে যৌথ বিবৃতি আখ্যা দেওয়া বিস্ময়কর! বিএনপির একক মতামতের ভিত্তিতে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণও শোভনীয় নয়।
অন্যরা স্বাগত জানিয়েছে
বিএনপির সমমনা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বিবৃতিতে বৈঠককে ঐকমত্যের সূচনা আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। মৌলিক সংস্কারের জন্য দ্রুত জাতীয় সনদ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে জেএসডি। নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ‘কয়েকজন উপদেষ্টা ও বিএনপি নেতার অপরিণামদর্শী বক্তব্য সরকার এবং দলটির মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলছিল। লন্ডন বৈঠকে তা আপাতত কাটল।’ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা দূর হয়ে সমঝোতার পথ তৈরি হয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার ও সংস্কারে অগ্রগতি অর্জনের আলোচনা ইতিবাচক। এখন এসব বিষয় জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে মনোযোগ পাবে বলে আশা করি।
বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোট বিবৃতিতে বলেছে, জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা এনেছে লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি। স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব প্রমুখ।
যদিও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছে; দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে সমকালকে বলেন, বিচারের অগ্রগতি ও সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।