ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘পাঠাও’ প্রকাশিত ‘অগ্রযাত্রার অগ্রদূত’ একটি অনুপ্রেরণামূলক সংকলন গ্রন্থ, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন মানুষের জীবনের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সফলতার বাস্তব গল্প। পাঠাও দীর্ঘ এক দশক ধরে শুধু একটি রাইড শেয়ারিং, কুরিয়ার সার্ভিস বা ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই নিজেকে তুলে না ধরে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। বইটিতে সংকলিত গল্পগুলো এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর সাক্ষ্য বহন করে, যা মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা ও সাহস জোগাবে।

বইটির শুরুতেই রয়েছে পাঠাওয়ের শুরুর দিনগুলোর ঝলক। প্রথম গল্পের শিরোনাম ‘পাঠাও ও আমি’। যেখানে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ তুলে ধরেছেন কীভাবে সাধারণ একটি আইডিয়া থেকে দাঁড় হয়ে গেল বিশাল এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। পাঠাওয়ের যাত্রাপথ যে খুব একটা মসৃণ ছিল, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার করেই তাদের আজকের অবস্থান। কোভিড মহামারি চলাকালে বিভিন্ন ঝড়ঝাপটা থেকে শুরু করে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হার মানিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি, লেখায় সেই গল্পই তুলে ধরেছেন তিনি। পাশাপাশি ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনে জনসাধারণের সঙ্গে রাজপথে থেকে পুরো গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ও ভূমিকার ওপরও আলোকপাত করেছেন তিনি।

১০ বছরের পথচলায় পাঠাওয়ের সঙ্গে অনেকের জীবনেই তৈরি হয়েছে দারুণ কিছু গল্প। কখনো ফুডম্যান কিংবা রেস্টুরেন্টকে কেন্দ্র করে, কখনো আবার একজন ব্যবসায়ী এবং একজন ডেলিভারি এজেন্টকে কেন্দ্র করে। এমনকি গল্পগুলোতে উঠে আসে ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনে পাঠাওয়ের এমপ্লয়ি, রাইডার, ক্যাপ্টেন ও ফুডম্যানের অংশগ্রহণের কথাও। এত সব গল্পের ভিড়েও থেকে যায় কিছু এগিয়ে যাওয়ার, ভিন্ন কিছু করার, সবার সামনে একটি উদাহরণ তৈরি করার মতো গল্প। পাঠাওয়ের সঙ্গে কাজ করে অনেকেই এই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করছেন দারুণ কিছু বলার মতো গল্প। এমনই উদাহরণ তৈরি করার মতো একটি গল্পের নায়ক মাসুমা আক্তার। তিনি একজন বাইক রাইডার। মাসুমা তাঁর গল্পে তুলে ধরেছেন, কীভাবে সমাজের প্রচলিত সংস্কার ভেঙে তিনি পাঠাওয়ে রাইডার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তথাকথিত টিউশনি কিংবা অন্য খণ্ডকালীন চাকরির পেছনে না ছুটে, এমনকি সমাজের বাঁকা চোখকে তোয়াক্কা না করে নিজের মতো এগিয়ে যাচ্ছেন। যা অন্য সব নারীর জন্য দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হিসেবেই কাজ করছে।

সেই সঙ্গে বইটিতে রয়েছে আরও কিছু নারীর সফলতার গল্প। ‘আয়েশা’স কিচেন’ গল্পের আয়েশা লেখায় তুলে ধরেছেন কীভাবে তাঁর স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পর নিজেই সংসারের হাল ধরলেন নিজের তৈরি বিরিয়ানি ঘরে ঘরে ডেলিভারি করে। তবে পাঠাওয়ে ‘ফুড ডেলিভারি সার্ভিস’ না থাকলে আজ হয়তো তাঁর এই সফলতার গল্প খানিকটা দমেই যেত। কারণ, তিনি যখন অন্য সব ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের কমিশনের ঝক্কি পোহাতে শুরু করলেন, তখনই খুব অল্প কমিশনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় পাঠাও।

আয়েশার মতো অসংখ্য বেকার তরুণ-তরুণী তাঁদের ভাগ্য বদলাতে কাজ করছেন পাঠাওয়ের সঙ্গে। ‘আদনান দ্য বাইকার’ শিরোনামের গল্পটিতে আদনান নামের এক যুবকের জীবনসংগ্রামের কথা উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন, কীভাবে পাঠাও রাইডার হয়ে নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করে মা–বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এমনই ২৫টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প স্থান পেয়েছে ‘অগ্রযাত্রার অগ্রদূত’ বইয়ে। যা দেশের শত শত তরুণ-যুবককে সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা জয় করে নিজ নিজ স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে।

পাঠাও শপ, বুকওয়ার্ম, রকমারি, ওয়াফিলাইফ, বইসদাই, পিবিএসসহ বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং দেশজুড়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে ‘অগ্রযাত্রার অগ্রদূত’ বইটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম সফলত র ক জ কর র জ বন

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।

ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’

আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগে

পরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।

খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।

জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনী

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের পরিবর্তে উচ্চশিক্ষায় ভারতীয়রা কেন ঝুঁকছেন বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর–উজবেকিস্তান–রাশিয়ার দিকে
  • ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
  • পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি
  • তরুণদের শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে: জবি উপাচার্য
  • রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল