সাতক্ষীরায় টিসিবির পণ্য বিক্রয় পয়েন্টে উপচে পড়া ভিড়, অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে
Published: 6th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় পয়েন্টে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও এক ভ্যানচালক পণ্য কিনতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তাঁর মতো অনেকে পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন কোর্ট মসজিদের সামনে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়।
গতকাল বুধবার থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে পাঁচটি পয়েন্টে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক ও স্টেডিয়াম গেটের সামনে কয়েক শ নারী-পুরুষকে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের দেখা না পেয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন। দুপুরের দিকে শহরের পুরাতন কোর্ট মসজিদের সামনে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে।
প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে প্রতি প্যাকেট ৪৫০ টাকা দরে ৪০০টি প্যাকেট বিক্রির সুযোগ আছে। কিন্তু কোর্ট মসজিদের সামনের বিক্রয়কেন্দ্রে হাজারখানেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফলে অধিকাংশ মানুষকে পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। ৪৫০ টাকার প্রতিটি প্যাকেটে আছে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি ডাল, এক কেজি ছোলা ও এক কেজি চিনি; যার বাজারমূল্য ৮০০ টাকার বেশি।
শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের পেছনে সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারেননি রাজারবাগান এলাকার আবদুল রশিদ। তিনি বলেন, তিনি লাইনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে যখন ট্রাকের কাছে পৌঁছেছেন, তখন পণ্য ফুরিয়ে গেছে। ফলে তিনি আর পণ্য কিনতে পারেননি। এই পণ্য কিনতে এসে সারা দিন ভ্যানও চালাতে পারেননি। এতে তাঁর দুই দিকেই লোকসান হয়েছে। তিনি পণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণয় বিশ্বাস বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জন্য রমজান উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রতিদিন শহরের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি পয়েন্টে দুই হাজার প্যাকেট টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু করা হয়েছে; যা চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত। যতক্ষণ পণ্য থাকবে, ততক্ষণ পণ্য বিক্রি করা হবে। যিনি আগে আসবেন, তিনি আগে পাবেন। তাঁরা বিষয়টি তদারকি করছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।