মসজিদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
Published: 7th, March 2025 GMT
পাবনার চাটমোহরে একটি মসজিদের দুই মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাদের হামলায় আহত হয়েছেন নারী শিশুসহ পাঁচজন। আহত নারী ও শিশুসহ তিনজনকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের কদমতলী মিনাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হলেন, কদমতলী মিনাজ মোড় গ্রামের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী সালমা খাতুন (৩৫), তার ছেলে সোহেল (১১) ও আলাউদ্দিন আলীর স্ত্রী আলপনা খাতুন (৩২)।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হলেন ফৈলজানা ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফল ইসলাম।
আহত সালমা খাতুন জানান, মিনাজ মোড় জামে মসজিদের দুই টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে সরকারিভাবে। সেই চাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন সাইফল ইসলাম ও মতিন গং। তার প্রতিবাদ করেছিলেন আমার স্বামীসহ এলাকার অনেকে। সেই ক্ষোভে সকালে এসে তারা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। তাদের বাধা দিতে গেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে আমাদের আহত করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলা থেকে দুজন অফিসার আমাদের এলাকায় গিয়ে বলেন- মিনাজ মোড় জামে মসজিদে সরকারিভাবে ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ দিন আগে। পেয়েছেন কিনা। কিন্তু আমরা কেউ কিছু জানি না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিএনপি নেতা সাইফুল, মনিরুল ইসলাম, মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আব্দুল মতিন মিলে চাল তুলে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তখন অফিসারের সামনে ক্যাশিয়ার মতিন বলেন- তিনি টাকা পাননি, এ বিষয়ে কিছু জানেনও না।
লোকমান হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে গ্রামের মুসল্লিরা ইউএনও অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ দেন। এসময় খবর পেয়ে মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মতিন ইউএনও অফিসে হাজির হয়ে সবার সামনে বলেন, তারা চাউল বরাদ্দ পেয়েছেন এবং তুলে বিক্রি করেছেন। চাউল বিক্রির ৭০ হাজার টাকা দিতে স্বীকারও করেন ইউএনওর সামনে। পরে টাকা মসজিদের তহবিলে জমা দেবেন বলেও জানান মতিন।
তিনি আরও জানান, ইউএনও অফিসে অভিযোগ দেওয়ার জেরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপি নেতা সাইফুল, তার সহযোগী মনিরুল, মসজিদের ক্যাশিয়ার মতিন, সাদিকুল, শামীম, জাহাঙ্গীরসহ ১৫/২০ জন অভিযোগকারীদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় তাদের বাধা দিতে গেলে শিশু নারীসহ অনেককে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করেন অভিযুক্তরা। এতে ৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফৈলজানা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, মসজিদে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। চাল তুলে বিক্রি করেছিলেন মসজিদের ক্যাশিয়ার। তিনি তো স্বীকার করেছেন যে তার কাছে টাকা আছে। তাহলে তো কোনও সমস্যা থাকার কথা না। এর আগে টাকার জন্য ক্যাশিয়ারকে ওই পক্ষ মারধর করেছিল। সে কারণেও আজকের মারপিটের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আজকের মারপিটের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার গ্রামবাসী একটি অভিযোগ দিয়েছেন। একইদিন মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মসজিদের তহবিলে টাকা দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের মারধরের ঘটনাটি দুঃখজনক। ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় এখন আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত ল ইসল ম মসজ দ র ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী
অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।
আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগেগতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।
ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’
সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।
আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে