রাজধানীর গুলশানে লোক জড়ো করে এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত করা এবং গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নাম জুয়েল রানা (৩১)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ব্যক্তির ছবি দেখে এক তরুণী তাঁকে শনাক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জুয়েলের হাতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনিও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

গুলশানের সড়কে এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত করার ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের। ওই ঘটনায় আজ শুক্রবার মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘণ্টাখানেক আগে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যে ব্যক্তিকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাঁর নাম মাহবুব আলম। তিনি একটি সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তিনি বৃহস্পতিবারের ঘটনা ধরে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন।

যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে ঘটনা জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি গুলশান-১ নম্বরে সিগন্যাল অমান্য করে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তিনি হঠাৎ গাড়ির সামনে এসে পড়েন।

মাহবুব বলেন, ‘আমি হর্ন (ভেঁপু) বাজিয়ে গাড়িটি ব্রেক করি। তখনই ওই ব্যক্তি (জুয়েল) গাড়ির বনেটে (সামনের অংশ) জোরে থাপ্পড় দেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, গুলশান তাঁর এলাকা। এখানে তিনি যখন খুশি, যেভাবে খুশি সেভাবেই রাস্তা পার হবেন।’

জুয়েল গাড়িটির গতি রোধ করে দাঁড়ান বলে জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘আমি গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক সার্জেন্টকে ডাকতেই তিনি দৌড়ে এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন। বলতে থাকেন, আমি নাকি তাঁকে গাড়ি চাপা দিতে চেয়েছি। আমাকে সে দেখে নেবে। গাড়িতে আমার সঙ্গে আরও তিন সহকর্মী ছিলেন। ঘটনার এক পর্যায়ে আমার এক সহকর্মী গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন্টদের ঘটনার বিষয়ে বলতে গেলে ওই ব্যক্তি তাঁকে (সহকর্মী) গালিগালাজ করতে থাকেন।’

‘ব্যস্ত সড়কে ওই ব্যক্তি এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে সার্জেন্টরা আমাদের চলে যেতে বলেন। তখন ওই ব্যক্তি কখনো গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন, কখনো বনেটে উঠে পড়েন’, বলেন মাহবুব।

ফেসবুকে মাহবুব আলম লিখেছেন, জুয়েলের আচরণে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট অসহায়ের মতো হয়ে পড়েন। পুলিশ সদস্যরা তাঁকে (মাহবুব) গাড়ি সড়কের এক পাশে নিয়ে থামাতে বলেন। যখন তিনি গাড়িটি সড়কের পাশে নিচ্ছিলেন, তখন জুয়েল তাঁর মুখে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করেন। এ সময় তাঁর মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।

মাহবুবের ভাষ্য, ঘটনার এ পর্যায়ে গুলশান-১ নম্বরে দায়িত্বরত সার্জেন্টরা তাঁকে (মাহবুব) ঘিরে ধরেন। তাঁরা তাঁকে চলে যেতে অনুরোধ করেন।

মাহবুব বলেন, ‘আমি গাড়ি নিয়ে গুলশান-২ নম্বরের দিকে চলে যেতে থাকি। গুলশান-২ নম্বরের সিগন্যালে গাড়ি থামতেই ওই ব্যক্তি কোথা থেকে দৌড়ে এসে আবার গাড়ির বনেটে উঠে পড়েন। আর চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। আমি নাকি সার্জেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গুলশান-১ নম্বর থেকে পালিয়ে এসেছি।’

মাহবুবের দাবি, তিনি গাড়ি চালিয়ে কিছু দূরে গুলশান-২–এর ৫২ নম্বর সড়কে পুলিশের ‘ডিপ্লোমেটিক ডিভিশনের’ ফটকের সামনে যান। জুয়েলও সেখানে যান। সেখানে গিয়েও জুয়েল চিৎকার করে লোক জড়ো করতে থাকেন। এ সময় জড়ো হওয়া কয়েকজনকে নিয়ে জুয়েল গাড়ির দরজা টেনে খোলার চেষ্টা করতে থাকেন। দরজা খুলতে না পেরে তিনি একটি ইট দিয়ে আঘাত করে গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা লোকেরাও মারমুখী ছিলেন।

গাড়ির কাচ ভাঙার পর মাহবুব তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে গাড়ি থেকে নামেন। তিনি বলেন, তিনি উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁর গাড়ির কাচ কেন ভাঙা হলো? জুয়েলের শরীরের কোথায় তিনি আঘাত করেছেন? বরং জুয়েলই তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন, গাড়ি ভেঙেছেন। তখন জড়ো হওয়া লোকদের কেউ কেউ জুয়েলকে নিয়ে গুলশান থানায় যেতে রাজি হন।

থানায় নেওয়ার পর কী হলো

মাহবুব আলম বলেন, ‘গুলশান থানায় যাওয়ার পর আমরা ওই ব্যক্তিকে নিয়ে থানার পরিদর্শকের (অপারেশন) কাছে যাই। তিনি সব শুনে আমাকে অভিযোগ লিখতে বলেন। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি থানাতেও চোটপাট দেখাতে থাকেন। পরিদর্শক আমাকে মামলার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট আনতে বলেন। আমি অভিযোগ লিখে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে রাত ১০টার দিকে ফিরে দেখি ওই ব্যক্তি আর থানায় নেই।’

‘পরে থানায় কথা বলে জানতে পারি হামলাকারী ওই ব্যক্তি উল্টো আমার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে গিয়েছেন’, বলেন মাহবুব।

মাহবুব বলেন, দ্বিতীয় দফায় গুলশান থানায় গিয়ে পরিদর্শকে (অপারেশন) না দেখে তিনি ওসির সঙ্গে দেখা করে সব খুলে বলেন। ওসিকে জুয়েলের ছবিও দেখান। তখন পাশে থাকা এক পুলিশ সদস্য ওসিকে বলেন, ছবিতে দেখানো লোকটি গুলশান-১ নম্বরের চিহ্নিত নেশাখোর-ছিনতাইকারী। ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির পেছনের গলিতে তিনি আড্ডা দেন। তাঁকে ধরলে ১৫-২০ জনের একটা ‘গ্যাংকে’ ধরা যাবে। ওসি তখন ডিউটি অফিসারকে ডেকে মামলা নিতে বলেন।

ওসি বলার পরও পরিদর্শক (অপারেশন) মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে গড়িমসি শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, পরিদর্শক বলছিলেন এসব ঘটনায় মামলা-জিডি করে কোনো লাভ নেই। মামলা করলে ওই ব্যক্তিও তাঁর (মাহবুব) বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।

মাহবুবের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মুকলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উভয় পক্ষই থানায় এসে অভিযোগ করেছিলেন। আমরা মাহবুব আলমের অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মামলার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি শুধু সকালে এসে একটি স্বাক্ষর দিলেই মামলা হয়ে যেত।’

ঘটনাটির ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পাল্টে যায় চিত্র। নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় ডাকা হয় ভুক্তভোগী মাহবুব আলমকে। মামলাও নেওয়া হয়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে এক তরুণী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারেন। তিনি শুক্রবার ফেসবুকে লেখেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যক্তিসহ তিনজন গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কের সামনে ছিনতাইয়ের জন্য তাঁর গলায় ছুরি ধরেছিলেন।

রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই তরুণী গুলশান থানায় ছিলেন। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি মোটরসাইকেলে এসে ওই ব্যক্তি তাঁর গলায় ছুরি ধরে হাতব্যাগ থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন।

ওই তরুণী আরও বলেন, শুধু তাঁর টাকা নয়, তিনি যে শরিকি যাত্রার (রাইড শেয়ারিং) মোটরসাইকেলে ছিলেন, সেটার চালকের টাকাও নিয়ে গেছেন জুয়েল ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁদের আঘাত করে আহত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমিও জুয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থানায় এসেছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক শ ক রব র সহকর ম র স মন য গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মধ্যরাতে শাহরুখের বাড়ির সামনে ভক্তদের ভিড়

বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে এখনো দারুণ সরব। শুধু তাই নয়, বক্স অফিসেও ঝড় তুলছেন তিনি। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করলেন এই অভিনেতা। যদিও তা দেখে বোঝার উপায় নেই।  

শনিবার (১ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সহকর্মী-ভক্তদের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছেন শাহরুখ খান। পাশাপাশি প্রিয় তারকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে হাজার হাজার ভক্ত ছুটে যান তার বাড়ি মান্নাতের সামনে। এ মুহূর্তের বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়।  

আরো পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

সারা ভারত তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাহরুখ খানের ফ্যান ক্লাব রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা মুম্বাইয়ের মান্নাতের (বাড়ি) সামনে জড়ো হন। শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতা থেকে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছেন প্রিন্স সিং ও তার দল।  

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে প্রিন্স সিং বলেন, “আমি কলকাতা থেকে আসছি। আমার সঙ্গে ‘এসআরকে ওয়ারিয়স’ টিম রয়েছে। ৩৩ ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে শাহরুখ খানকে একঝলক দেখার জন্য এখানে এসেছি। আশা করছি, আজকে তিনি একবারের জন্য হলেও দেখা দেবেন। আমরা নিশ্চিত, আজ অথবা কালকে তাকে দেখতে পাব। আমরা অনেক কিছু ম্যানেজ করে এখানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। কারণ হাজার হাজার মানুষ এখানে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ আসতে দিচ্ছেন না।” 

প্রিন্সের মতো হাজার ভক্ত-অনুরাগী মধ্যরাতে শাহরুখের বাড়ির সামনে জড়ো হন। কেউ প্রিয় অভিনেতার ছবি, কেউ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন—“আমরা আপনাকে ভালোবাসি। শুভ জন্মদিন এসআরকে।”  

তবে গতকাল রাতে শাহরুখের দেখা মেলেনি। কারণ শাহরুখ খান এখন বিলাসবহুল মান্নাতে বসবাস করেন না। গত মার্চের দিকে মান্নাত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অভিজাত একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন; সেখানেই বসবাস করছেন। কারণ মান্নাতে এখন সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষ হতে দুই বছর লাগবে বলে জানা গেছে। 

ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল রাতে শাহরুখ খান তার ৬০তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন আলীবাগের বাসায়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবরা। এ তালিকায় রয়েছেন—ফারাহ খান, করন জোহর, রানী মুখার্জিসহ অনেকে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জে নারী শ্রমিকের মৃত্যুতে দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ সহকর্মীদের
  • ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 
  • নাটোরে ঘোড়ার গাড়ি করে শিক্ষকের ‘রাজকীয়’ বিদায়
  • রাজশাহীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের ঘোষণা
  • চকবাজারে প্রিজন ট্রাকের ধাক্কায় ঠেলাগাড়ির শ্রমিক নিহত
  • মধ্যরাতে শাহরুখের বাড়ির সামনে ভক্তদের ভিড়