মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা ও হাট ইজারা নিয়ে বিরোধের জেরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ৮০ থেকে ৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

আজ রোববার ভোরে নিহত সাইফুল ও আতাউর সরদারের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার পরিদর্শক মো.

মহসিন।

আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় পুলিশ আটক দুজনসহ এক নারীকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার খোয়াজপুর টেকেরহাট এলাকার মতিউর রহমান সরদারের স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫২), মৃত পানু ব্যাপারীর ছেলে সুজন মাহমুদ (২৮) ও মো. গনি ব্যাপারীর ছেলে মো. রুবেল ব্যাপারী (৩২)। আসামিদের আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ওই তিন ভাই হলেন আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫), সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০), তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার (১৭)। আতাউল ও সাইফুল সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়ি এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে ও পলাশ একই এলাকার মুজাম সরদারের ছেলে। নিহত সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত তাজেল হাওলাদার (১৮) ও অলিল সরদারকে (৪০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত অলিল সরদার প্রথম দুজনের বড় ভাই।

আরও পড়ুনমাদারীপুরে বালুর ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা২২ ঘণ্টা আগে

আজ সকালে সরেজমিন খোয়াজপুর টেকেরহাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাটবাজারে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম। আশপাশে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। নারীরা বাড়ির বাইরে বের হলেও পুরো গ্রামই প্রায় পুরুষশূন্য। এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো এলাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

মামলার বাদী সুফিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তিন সন্তানকেই পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। দুই সন্তানকে ওরা মাইরা ফালাইছে। এক সন্তান ঢাকায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আরেক ভাইয়ের ছেলেকেও ওরা কুপাইয়া মাইরা ফালাইছে। যারা আমার সন্তানদের মারছে, তাদের বিচার চাই, তাদের ফাঁসি চাই।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোকছেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে বালুমহাল ও টেকেরহাট এলাকার হাট ইজারাকে কেন্দ্র করে শাজাহান মোল্লা, মতিউর সরদার, হোসেন সরদারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই সাইফুলসহ তাঁর তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরদ র র র সরদ র এল ক র ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ