চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার চিকিৎসা সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৪ জন বাংলাদেশি রোগী উন্নত চিকিৎসা নিতে চীনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আজ সোমবার প্রথম দফায় তাদের পাঠানো হলো।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে দায়িত্বরত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, এই প্রথম দলে রোগীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, ট্যুর অপারেটর এবং সাংবাদিকসহ মোট ৩১ জন রয়েছেন।

বিমানবন্দরের সিআইপি আউটডোর পথে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশি রোগীরা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার চীনের সহায়তা চেয়েছিল এবং চীনা সরকার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চীনে ভ্রমণের বিমান ভাড়া কমানোর চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা নীতি নেই। আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে ভিসার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রতিনিধি দলের সদস্য ড.

রাশেদুল হাসান চীনে উন্নত চিকিৎসার সুযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন গুরুতর রোগ যেমন ট্রান্সপ্লান্ট এবং ক্যান্সারের মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উন্নত চিকিৎসা প্রদান করে। তবে অনেক বাংলাদেশি এই সুযোগগুলোর বিষয়ে অবগত নন। আমরা চিকিৎসকরা চীনে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাব, যা বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যাবে।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা একজন ট্র্যাভেল এজেন্ট বলেন, চীনে চিকিৎসা খরচ ভারতের চেন্নাই, দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু বা থাইল্যান্ডের মতো। কিছু ক্ষেত্রে চীনে চিকিৎসা আরও সস্তা।

পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমান এই উদ্যোগকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, রোগীদের প্রতিনিধিরা, চিকিৎসক এবং ভ্রমণ সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১৮ ফেব্রুয়ারি চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ঘোষণা দিয়েছিলেন, চীনের ইউনান প্রদেশের তিনটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের গ্রহণ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো চিকিৎসা সেবার প্রক্রিয়া সহজ করতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দোভাষীর দল গঠনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

সম্প্রতি চীন সফরের সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন, বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য খাতে। তিনি চীনকে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা এবং বাংলাদেশে হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য সহায়তা প্রদান করার অনুরোধ জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ