মায়ের প্রেমিকের গরম ছুরির ছ্যাঁকায় ঝলসে গেল মানহার শরীর
Published: 10th, March 2025 GMT
মানহা বিবি মরিয়মের দুরন্তপনা যেন থেমে গেছে। শিশুটি কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, কিছুই বলে না। নরম শরীরে গরম ছুরির ছ্যাঁকার ভয় যেন তাড়া করছে চার বছরের এ অবুঝ শিশুটিকে। মায়ের প্রেমিকের অমানবিক নির্যাতনে শিশু মানহা ছটফট করছে অসহ্য যন্ত্রণায়। দিনের পর দিন মানহা ও তার মায়ের ওপর প্রেমিক শামসুজ্জামান নির্যাতন চলেছে। কখনও জ্বলন্ত চুলায় ছুরি গরম করে তার শরীরে ছ্যাঁকা দিয়েছে, কখনও বেত্রাঘাত।
ছোট্ট মানহার শরীর জুড়েই শামসুজ্জামানের নির্যাতনের চিহ্ন। অসংখ্য পোড়া দাগ। প্রতিবাদ করলেই মানহার মাকে পেটাত শামসুজ্জামান। গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা সংলগ্ন কলাবাগান এলাকার ফজলুল হকের বাড়িতে ভাড়া থেকে এভাবেই মা-মেয়ের ওপর চালত শামসুজ্জামানের নির্যাতন।
অবশেষে শামসুজ্জামানের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছে শিশুটি। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশ মানহা ও তার মাকে উদ্ধার করেছে। রোববার রাতে তাদেরকে উদ্ধারের পর শামসুজ্জামানকে আটক করে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জানা যায়, স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর রুমি আক্তার মেয়ে মানহাকে নিয়ে বেশ ভালো দিন কাটাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে ফেসবুকে পরিচয় হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় তলিয়াচাঁদপুর গ্রামের ইউসূফ আলীর ছেলে শামসুজ্জামানের সঙ্গে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাস চার আগে মাওনার চৌরাস্তার এলাকার ফজলুল হকের বাড়ির একটি রুম ভাড়া নেন তারা। সঙ্গে ছিল মানহাও। রুমি তার মেয়েকে বাবা বলে শামসুজ্জামানকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে মেয়েটি শামসুজ্জামানকে আব্বু আব্বু বলে পুরো ঘর মাতিয়ে রাখত।
এ দিকে বিয়ে না করেই সংসার করছিল রুমি ও শামসুজ্জামান। কিছুদিন যেতে না যেতেই বেরিয়ে আসে শামসুজ্জামানের আসল চরিত্র। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতো বাসায়। ঘুম থেকে উঠেই শিশুটির ওপর চালাতো নির্যাতন।
রুমি আক্তার বলেন, প্রতিবাদ করলেই আমাকে মারধর করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখত। গত চার মাস ধরে শিশুটির ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চলেছে। গত শুক্রবার রাতেও গ্যাসের চুলায় ছুরি গরম করে শিশু মানহার কাঁধ, হাত, ঘাড়, গলা, গাল ও কানে ছ্যাঁকা দেয় শামসুজ্জামান। ঘরেই আটকে রাখা হয় তাকে। রোববার সন্ধ্যার পর প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পান। রাতেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। জানানো হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
মানহার মা রুমি আরও বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মেয়েকে পাশের কক্ষে দরজা বন্ধ করে ছুরি গরম করে শরীরে ছ্যাঁকা দেয়। আমাকে ঘরে আটকে রাখে। কাউকে কিছু বলতে পারিনি। পাশের ভাড়াটিয়ারা জেনে আমাদের উদ্ধার করে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শামসুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হয় রুমির। পরে তারা বিয়ে না করেই এক সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। মাদকাসক্ত শামসুজ্জামান শিশুটির ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। রোববার রাতেই তাকে পুলিশ আটক করে নিয়ে আসে। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতাহার শাকিলের ভ্রাম্যমাণ আদালত তার ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি