দ্বিতীয় দিনে আরও ১৬ হাজার শ্রমিক পেল ৫৫ কোটি টাকা
Published: 10th, March 2025 GMT
গাজীপুরে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের লে-অফ করা ১৪টি কারখানার আরও ১৬ হাজার ১৪২ শ্রমিককে পাওনা বাবদ ৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে পাওনা পরিশোধের দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার এই বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়। এর আগে গত রোববার প্রথম দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের ২৪৫ জন শ্রমিকের ৮০ লাখ টাকা পাওনা পরিশোধ করা হয়েছিল।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো.
বেক্সিমকোর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান খালিদ শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সোমবার বেক্সিমকোর সাতটি পোশাক কারখানার মোট ১৬ হাজার ১৪২ জন শ্রমিকের পাওনা দাবির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। গত দুদিনে ৯টি পোশাক কারখানার সকল পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে আজ সকালে বেক্সিমকো শিল্পপার্কে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে একের পর এক শ্রমিক তাঁদের আইডি কার্ড ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে পাওনা টাকার হিসাব বুঝে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কারখানার প্রধান ফটকের সামনে কথা হয় সুইং অপারেটর মমিন শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৮ বছর এখানে কাজ করেছি। তাঁর হিসাবে সব মিলিয়ে এক লাখ টাকার বেশি পাওয়ার কথা। কিন্তু পেয়েছেন ৭২ হাজার ৮০৮ টাকা।
বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকসংখ্যা ৩১ হাজার ৬৭৯ জন। আর কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৬৫ জন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ৬ মার্চ বেক্সিমকোর বন্ধ ঘোষিত এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে সরকার। ঋণ হিসেবে কোম্পানিটিকে এই অর্থ দিয়েছে সরকার। ওই দিন বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কায়সার চৌধুরীর কাছে ওই চেক হস্তান্তর করেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ওই সময় জানানো হয়, ৯ মার্চ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। সেই অনুযায়ী রোববার দুপুরের পর ২৪৫ জন শ্রমিককে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, শ্রমিকদের পাওনা বাবদ দেওয়া অর্থ নগদে পরিশোধ করা হয়নি। পাওনার পুরো অর্থ হয়, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা এমএফএস হিসাবে বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক কৃপা সিন্দু বালা প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার শ্রমিক–কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে বেক্সিমকো শিল্পপার্ক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। ১৩ আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠানটির ঋণপত্র বা এলসি–সুবিধাও বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো। কাঁচামালের সংকটে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এমন পটভূমিতে সরকারের পক্ষ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সিদ্ধান্তে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া অর্থে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৬ হ জ র রহম ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।
আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।