১০০ বছর আগের যে মহামারিতে মরদেহ সৎকারেরও লোক ছিল না
Published: 11th, March 2025 GMT
সারা বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ে মহামারির কথা উঠলে প্রথমেই করোনাভাইরাসের নাম আসবে। ২০২০ সালে এই মহামারির প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বে প্রাণ গেছে ৭০ লাখের বেশি মানুষের। তবে এর ১০০ বছর আগেও এ ধরনের একটি মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। যার নাম দেওয়া হয়েছিল স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু। যে মহামারিতে পাঁচ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মহামারি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কখনো এত মানুষের মৃত্যু হয়নি।
মহামারির শুরু
সময়টা তখন ১৯১৮ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ হয়ে আসার পথে। যুদ্ধ শেষে সৈন্যরা যাঁর যাঁর দেশে প্রিয়জনদের কাছে মাত্রই ফিরতে শুরু করেছেন। ঠিক এমন সময় তাঁদের বাড়িতে অপেক্ষা করছিল নীরব এক ঘাতক। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা’।
করোনার সঙ্গে বোধ হয় এই মহামারির অনেকটা মিল আছে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এর ঠিক ১০০ বছর আগে ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত রোগটির দাপট ছিল।
স্প্যানিশ ফ্লুর প্রথম খবর আসে ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে। যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প থেকে। প্রথম দিকে এটি মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেখা দিয়েছিল।এই মহামারিকে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়। প্রথম ধাপে দ্রুতই এটি পশ্চিম ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। জুলাই মাসে পোলাল্ডে রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম দিকে অনেকেই এটিকে সাধারণ সর্দি–কাশি মনে করছিলেন। তা ছাড়া এর প্রভাবও তেমন একটা দেখা যায়নি।
তবে দ্বিতীয় ধাপে এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে শুরু করে। আগস্ট নাগাদ অর্থাৎ গ্রীষ্মকালের শেষ দিকে পুরো ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ভাইরাসটি। প্রথম দিকে রোগীর নিউমোনিয়া শনাক্ত হতো। এর দুই–তিন দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হতো।
এরপরের ধাপটি ছিল শীতকালে। শীত মৌসুমের পর বসন্তকালে এটি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে থাকে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মুত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকেন।
স্প্যানিশ ফ্লু নামকরণের কারণ
এই মহামারির নাম স্প্যানিশ ফ্লু কেন হলো, স্বভাবতই সেই প্রশ্ন আসতে পারে। মহামারির সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এতে অংশ নেয়। তারা তখন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক এমন সময় মহামারি শুরু হওয়ায় প্রথম দিকে এসব দেশ ভাইরাসটির দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি।
অপর দিকে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন তখন বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়নি। মহামারি শুরুর পর দেশটির সংবাদপত্রগুলো তাই এই রোগ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করে। তাদের মাধ্যমেই সারা বিশ্বের নজরে আসে নতুন এই রোগ।
এ নিয়ে লন্ডনের কুইন ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েলকাম ট্রাস্টের একজন গবেষক মার্ক হনিগসবাউম ১৯১৮ সালে এই মহামারি নিয়ে একটি বই লেখেন। যার নাম ‘লিভিং উইথ এঞ্জা’।
মার্ক হনিগসবাউম বলেন, স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলো এই রোগের খবর প্রকাশ করছিল। এটাই স্প্যানিশ ফ্লু নামকরণের পেছনের কারণ। মহামারি শুরু হলে স্পেনের রাজপরিবার এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার খবর দেশটির সংবাদমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করেছিল। কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশে এ ধরনের সংবাদ তেমন গুরুত্ব পায়নি। তাই স্পেনের নামানুসারেই রোগটির নামকরণ হয়েছিল।
ফ্লু কখন ছড়াল
স্প্যানিশ ফ্লুর প্রথম খবর আসে ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে। যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প থেকে। প্রথম দিকে মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে প্রথম স্প্যানিশ ফ্লু শনাক্ত হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম দ ক ন র একট ইউর প র হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’