হাবীবুল্লাহর উপাধ্যক্ষকে হত্যা করে আশ্রয় দেওয়া নবদম্পতি: পুলিশ
Published: 11th, March 2025 GMT
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে অপরিচিত এক দম্পতিকে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া। তারা হলেন– রংপুরের তরুণ মো. নাসিম (২০) ও তার স্ত্রী ফরিদপুরের রূপা (২২)। তাদের মধ্যে নাসিমকে গাড়িচালক ও রূপাকে বাসা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এরপর নানারকম ভয় দেখিয়ে তাদের বাসায় আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে ঘটনার দিন রূপাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান সাইফুর। তখন স্বামী–স্ত্রী মিলে তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
রাজধানীর উত্তরখানে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দম্পতি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই দাবি করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার ফরিদপুর সদর রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে ওই হত্যার ঘটনা ঘটে।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই লুৎফুর রহমান ভুঁইয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে উত্তরখান থানায় মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দম্পতিকে বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার তিন–চারদিন আগে রেলস্টেশন থেকে ওই দম্পতিকে এনে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন সাইফুর রহমান। তারা নীলফামারী থেকে ট্রেনে ভোরে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের আট নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামেন। এরপর নাসিম স্ত্রীকে স্টেশনে রেখে নাস্তা কিনতে গেলে ঘুমিয়ে পড়েন রূপা। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, সঙ্গের জিনিসপত্র কেউ নিয়ে গেছে। তখন তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। ওই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন সাইফুর। তিনি কান্নার কারণ জানতে চান। সব শোনার পর তিনি দুজনকে কাজ দেওয়ার কথা বলে বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে কার্যত তাদের বন্দি করে রাখা হয়। তিনি বাসার বাইরে গেলে বাসার দরজায় তালা ঝুলিয়ে যেতেন। এদিকে বাসায় শিক্ষকের পরিবারকে না পেয়ে রূপা এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন সাইফুর জানান, তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে আছেন। তবে কয়েকদিনেও তারা বাসায় না আসায় স্বামী–স্ত্রীর সন্দেহ হয়। মাঝেমধ্যে নাসিমের সামনেই তার স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন অংশ বাজেভাবে হাত দিতেন সাইফুর। এ নিয়ে ক্ষোভের মধ্যেই ঘটনার দিন ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার দম্পতি সাইফুরকে কুপিয়ে ফেলে যাওয়ার সময় তার মোবাইল ফোন ও বাসার সব চাবি সঙ্গে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার দম্পতি প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে করে ৭ মার্চ বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় তাদের কোনো আশ্রয় না থাকায় কমলাপুর স্টেশনে বসে পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করছিলেন। সেখানেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় নিহত শিক্ষকের। গ্রেপ্তারের পর তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, বাসায় দুটি রুম থাকার পরও সাইফুর নিজের বিছানাতেই স্বামী–স্ত্রীকে রাখতেন।
সোমবার ভোর রাতে উত্তরখান এলাকার পুরান পাড়ার একটি ছয়তলা বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সাইফুরকে। তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বাথরুমে আটকে রেখে পালিয়ে যায় দম্পতি। পরে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের হয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা উত্তরার একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমান রাজধানীর শান্তিনগর পীর সাহেবেরে গলিতে একটি বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন। উত্তরখানের ভাড়া বাসাটিতেও মাঝেমধ্যে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার বাসুদেব গ্রামে। তার বাবা মৃত খলিলুর রহমান ভুঁইয়া।
নিহত শিক্ষকের স্ত্রী সাদিয়া রেহমান জানান, তার স্বামী বেশ কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বাসায় আসতেন। আবার চলে যেতেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলতেন না। কোথায় থাকেন জানতে চাইলে বলতেন- বন্ধুর বাসায় থাকেন। কোন বন্ধু তাও বলতেন না। পরে সোমবার বিকেলে থানার ওসি কল করে হত্যার বিষয়টি জানান। মঙ্গলবার তার লাশ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে।
এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, সাইফুর রহমানের ভাড়া বাসার পাশে তার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য ৩-৪ মাস ধরে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। সোমবার বিকেলে তার সহকর্মী কবির ফোন করে বিষয়টি জানান।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার নাসিম এ-গুলশান সমকালকে বলেন, শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
কমিটি নেই, সবাই নেতা
কয়রা উপজেলা বিএনপির কমিটি নেই একযুগ। দীর্ঘদিন ধরে চলেছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৪ মাস আগে। কমিটি না থাকায় দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও। কেউ কারও কথা শুনছেন না। অবস্থা এমন, যেন সবাই নেতা– অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীর।
কমিটি না থাকলেও উপজেলার একশ মিটারের মধ্যে পৃথক দুটি কার্যালয় রয়েছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) নুরুল আমিন বাবুল। আরেকটি কার্যালয় চলছে খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসানের নেতৃত্বে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি নেই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচিতে কার্যক্রমও সীমিত। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি দেওয়ার দাবি দলীয় নেতাকর্মীর।
পৃথক কার্যালয়ের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান বলেন, উপজেলায় একটি দলীয় কার্যালয় ছিল। পরে স্থানীয় একজন নেতা তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আরেকটি কার্যালয় খুলেছেন; যা সংগঠনবিরোধী কাজ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কার্যালয়টি বন্ধ করেননি।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মনজুর আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর দুই নেতার বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। আগে দলে বিভক্তি থাকলেও আলাদা কার্যালয় ছিল না। এখন দুটি কার্যালয় থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা।
২০১৩ সাল পর্যন্ত উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল। এরপর দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ মোমরেজুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও নুরুল আমিন বাবুলকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। এরপর থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নুরুল আমিনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু।
এদিকে কমিটি না থাকায় বেশির ভাগ নেতা স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। কয়েকজনের বিরুদ্ধে হাট, ঘাট, খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সুবিধায় হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ আছে। এতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি গঠন করা জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুস সামাদ।
সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছি না। আশা করছি খুব দ্রুতই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে। তখন গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের চেষ্টা করব।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে কয়রায় বিএনপির কোনো কমিটি নেই। কমিটি হলে দলীয় সব বিরোধ মিটে যাবে বলে আশা করছি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, কয়রায় কমিটি গঠনের জন্য জেলা বিএনপি থেকে ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি নেতাকর্মীর বিরোধও নিষ্পত্তি করবে। দ্রুতই ঐক্যবদ্ধ একটি কমিটি উপহার দেওয়া হবে।