ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে অপরিচিত এক দম্পতিকে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া। তারা হলেন– রংপুরের তরুণ মো. নাসিম (২০) ও তার স্ত্রী ফরিদপুরের রূপা (২২)। তাদের মধ্যে নাসিমকে গাড়িচালক ও রূপাকে বাসা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এরপর নানারকম ভয় দেখিয়ে তাদের বাসায় আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে ঘটনার দিন রূপাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান সাইফুর। তখন স্বামী–স্ত্রী মিলে তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।

রাজধানীর উত্তরখানে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দম্পতি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই দাবি করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার ফরিদপুর সদর রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে ওই হত্যার ঘটনা ঘটে।

উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই লুৎফুর রহমান ভুঁইয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে উত্তরখান থানায় মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দম্পতিকে বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার তিন–চারদিন আগে রেলস্টেশন থেকে ওই দম্পতিকে এনে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন সাইফুর রহমান। তারা নীলফামারী থেকে ট্রেনে ভোরে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের আট নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামেন। এরপর নাসিম স্ত্রীকে স্টেশনে রেখে নাস্তা কিনতে গেলে ঘুমিয়ে পড়েন রূপা। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, সঙ্গের জিনিসপত্র কেউ নিয়ে গেছে। তখন তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। ওই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন সাইফুর। তিনি কান্নার কারণ জানতে চান। সব শোনার পর তিনি দুজনকে কাজ দেওয়ার কথা বলে বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে কার্যত তাদের বন্দি করে রাখা হয়। তিনি বাসার বাইরে গেলে বাসার দরজায় তালা ঝুলিয়ে যেতেন। এদিকে বাসায় শিক্ষকের পরিবারকে না পেয়ে রূপা এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন সাইফুর জানান, তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে আছেন। তবে কয়েকদিনেও তারা বাসায় না আসায় স্বামী–স্ত্রীর সন্দেহ হয়। মাঝেমধ্যে নাসিমের সামনেই তার স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন অংশ বাজেভাবে হাত দিতেন সাইফুর। এ নিয়ে ক্ষোভের মধ্যেই ঘটনার দিন ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার দম্পতি সাইফুরকে কুপিয়ে ফেলে যাওয়ার সময় তার মোবাইল ফোন ও বাসার সব চাবি সঙ্গে নিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার দম্পতি প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে করে ৭ মার্চ বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় তাদের কোনো আশ্রয় না থাকায় কমলাপুর স্টেশনে বসে পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করছিলেন। সেখানেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় নিহত শিক্ষকের। গ্রেপ্তারের পর তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, বাসায় দুটি রুম থাকার পরও সাইফুর নিজের বিছানাতেই স্বামী–স্ত্রীকে রাখতেন।

সোমবার ভোর রাতে উত্তরখান এলাকার পুরান পাড়ার একটি ছয়তলা বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সাইফুরকে। তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বাথরুমে আটকে রেখে পালিয়ে যায় দম্পতি। পরে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের হয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা উত্তরার একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমান রাজধানীর শান্তিনগর পীর সাহেবেরে গলিতে একটি বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন। উত্তরখানের ভাড়া বাসাটিতেও মাঝেমধ্যে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার বাসুদেব গ্রামে। তার বাবা মৃত খলিলুর রহমান ভুঁইয়া।

নিহত শিক্ষকের স্ত্রী সাদিয়া রেহমান জানান, তার স্বামী বেশ কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বাসায় আসতেন। আবার চলে যেতেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলতেন না। কোথায় থাকেন জানতে চাইলে বলতেন- বন্ধুর বাসায় থাকেন। কোন বন্ধু তাও বলতেন না। পরে সোমবার বিকেলে থানার ওসি কল করে হত্যার বিষয়টি জানান। মঙ্গলবার তার লাশ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে।

এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, সাইফুর রহমানের ভাড়া বাসার পাশে তার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য ৩-৪ মাস ধরে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। সোমবার বিকেলে তার সহকর্মী কবির ফোন করে বিষয়টি জানান।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার নাসিম এ-গুলশান সমকালকে বলেন, শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও হামিদচর এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে এক স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে লাশটি উদ্ধার হয়। পুলিশ বলছে, পরিকল্পিতভাবে মারধরের পর ওই স্কুলছাত্রকে নদীতে ফেলে দেয় তার কয়েকজন সহপাঠী। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।

নিহত স্কুলছাত্রের নাম রাহাত ইসলাম (১২)। সে নগরের চান্দগাঁও সানোয়ারা বয়েজ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে চান্দগাঁও থানার পূর্ব ফরিদেরপাড়া এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে। সকালে হামিদচর এলাকায় নদীতে রাহাতের লাশ দেখতে পেয়ে বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেন। এরপর তার লাশ উদ্ধার হয়।

নিহত রাহাতের বাবা লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়। এরপর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক স্থানে সন্ধানের পরও খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি রাতেই পুলিশকে জানানো হয়েছিল। সকালে ছেলের লাশ পাওয়া যায়। তিনি অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে বন্ধুরা রাহাতকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) জাহাঙ্গীর আলম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রের চার সহপাঠীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাচ্চাটি যাবে না, ম্যাডাম’: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৯ মাসের সন্তানের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ
  • প্রযোজক তার সঙ্গে রাত কাটাতে বলেন: অঞ্জনা
  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক