১৯৯০ সালের ২৯ জানুয়ারি ভারতের জয়পুরে জন্মগ্রহণ করেন সুহানী শাহ। ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও তার খ্যাতি ছড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার টিভি শোয়ে জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়েছেন ভারতীয় এই ‘মেন্টালিস্ট’।
এ শো চলাকালীন এক সঞ্চালকের ‘মন পড়ে’ তার গোপন প্রেমিকের নাম বলে দেন সুহানী। সঠিক নাম বলতে পারায় চমকে যান সেই সঞ্চালক। এরপর অন্য এক সঞ্চালকের ‘মন পড়ে’ তার আইফোনের লক খুলে দেন সুহানী। ৩৫ বছরের এই সুন্দরীর কীর্তি দেখে হাততালির ঝড় ওঠে। তার জন্য হইহই করে ওঠেন টিভি শোয়ের বিচারক থেকে দর্শকরাও। আর এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে অন্তর্জালে।
ভাইরাল ভিডিও দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার ওই টিভি শোয়ে সুহানী এক সঞ্চালককে এমন একজনকে নিয়ে ভাবতে বলেন, যাকে তিনি মনে মনে ভালোবাসেন এবং তিনি তার পরিবারের সদস্য নন। এরপর সুহানী ওই মহিলা সঞ্চালকের গোপন প্রেমিকের নাম সঠিকভাবে বলে দেন। এরপরই তাকে অন্য সঞ্চালকের চার সংখ্যার পাসকোড সঠিকভাবে অনুমান করতে দেখা যায়।
সুহানীর এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বেড়ে গেছে তার জনপ্রিয়তা। অন্তর্জালে চর্চাও কম হচ্ছে না। তাকে জানার আগ্রহ প্রকাশ করছেন অনেকে। সুহানী সচ্ছল পরিবারের কন্যা। তার বাবার আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা ছিল। সেখানেই ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন তার মা। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল না সুহানীর। তার যাবতীয় আকর্ষণ তৈরি হয় জাদুবিদ্যার প্রতি।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সুহানী স্কুল ছাড়েন। বাবা-মাকে রাজি করিয়ে জাদুবিদ্যার প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। শোয়ের জন্য সারা বিশ্বে সফরের কারণে সুহানী বাড়িতেই পড়াশোনা করতেন। তার কথায়— “একটি স্কুল যা শেখায় তারচেয়ে বেশি শেখায় অভিজ্ঞতা।”
১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর, অর্থাৎ মাত্র সাত বছর বয়সে অহমেদাবাদের ঠাকুরভাই দেশাই হলে প্রথম শো করেন সুহানী। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মহারাষ্ট্রের রাস্তায় চোখ বেঁধে গাড়ি চালানোর জন্য সুহানীকে জেলেও যেতে হয়েছিল। তখন তার বয়স আঠারোর গণ্ডি পেরোয়নি। সে সময় তাকে জুভেনাইল আদালতে তোলা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। জাদু দেখিয়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও জিতেছেন সুহানী। ‘অল ইন্ডিয়া ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে তাকে ‘জাদু পরি’ তকমাও দেওয়া হয়। সুহানীর লিঙ্কডইনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশ-বিদেশে ৫ হাজারের বেশি শো করেছেন সুহানী।
মায়াজাল বুনতে পারদর্শী সুহানী। ‘মেন্টালিস্ট’ হিসেবেও নাম কামিয়েছেন। গোয়ায় ‘সুহানী মাইন্ডকেয়ার’ নামে একটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্মোহন করার কাজ করেন তিনি। সুহানী করপোরেট প্রশিক্ষক, লেখিকা এবং পরামর্শদাতা হিসেবেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা বইয়ের নাম— ‘আনলিশ ইয়োর হিডেন পাওয়ার্স’।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।