হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিলেন দুজন। আশপাশের কিছু লোক তা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পর অপর একজন এসে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে পেটাতে থাকেন।

শুক্রবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন ভিডিও দেখে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। তবে তাঁরা পলাতক থাকায় কাউকে আটক করা যায়নি।

ঘটনাটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আসামপাড়া বাজারের। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করতে পারলেও ভারসাম্যহীন ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি চুনারুঘাটের আসামপাড়া বাজারে ঘুরে বেড়াতেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল মোতালেব মিয়ার ধাক্কা লাগে। তখন মোতালেব মিয়া গালি দেন। ভারসাম্যহীন ব্যক্তি মোতালেব মিয়াকে লাথি দেন। এ খবর পেয়ে আবদুল মোতালেব মিয়ার তিন ছেলে বকুল, মুকুল ও শেকুল এসে লাঠি দিয়ে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পেটাতে থাকেন। এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান চুনারুঘাট থানা-পুলিশকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পেরেছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক থাকায় এ বিষয়ে কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

নুর আলম বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে চলে যান। আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছেন, যাঁরা ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়েছেন, তাঁরা চুনারুঘাট উপজেলার আসামপাড়া বাজারের স্থানীয় লোকজন; কিন্তু পুলিশ পৌঁছার আগেই হামলাকারীরা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যান।

ওসি নূর আলম আরও বলেন, যে ব্যক্তিকে পেটানো হয়েছে, তিনি ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ধরনের মানুষের সঙ্গে কারও শত্রুতা থাকতে পারে না; কিন্তু কেন এমনটি তাঁরা করলেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এখন এলাকায় নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ