আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির ব্যানার সরাতে বলায় হামলা, যুবদলকর্মী নিহত
Published: 16th, March 2025 GMT
স্থানীয় একটি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে টাঙানো ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের ছবিসংবলিত ব্যানার। ইউনিয়ন যুবদলের একটি অংশের নেতা সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে ডেকে সেটি সরাতে বলেন। এরপর অনুসারীদের নিয়ে সেখান থেকে ফেরার পথে ওই যুবদল নেতা ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি হয় স্থানীয় বিএনপির আরেকটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ওই যুবদল নেতা ও তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যুবদলকর্মী নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন।
গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের আমির হাটবাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত যুবদলকর্মীর নাম মোহাম্মদ কমর উদ্দিন (৩২)। তিনি হলদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্তা গ্রামের মুহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি দুই সন্তানের বাবা।
আহত ব্যক্তিরা হলেন জামাল উদ্দিন তালুকদার (৪০), ওসমান গণি (৩৯) ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৪১)। তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে জামাল উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে কমরসহ ইউনিয়ন যুবদলের নেতা-কর্মীদের একটি দল আমিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে যান। সেখানে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের ছবিসংবলিত ব্যানার টাঙানো দেখে তা সরাতে বলেন জামাল উদ্দিন তালুকদার। সেখান থেকে বের হয়ে কিছুদূর যেতেই দলের প্রতিপক্ষের ২০ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী জামাল উদ্দিন তালুকদার ও তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় চারজন আহত হন। এর মধ্যে কমর উদ্দিনকে আহত অবস্থায় গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হামলায় আহত ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। কমরের মাথায় তিনটি দায়ের কোপ এবং পেটে দুটি ছুরিকাঘাত করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রথম আলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি ৫০ থেকে ৬০ মানুষের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। তাঁদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শুনেছি এর আগের রাতেও একই ধরনের ঝামেলা হয়েছিল।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হলদিয়া ইউনিয়নে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে স্থানীয় সর্তা নদী থেকে বালু তোলা এবং পাহাড়-টিলা ও কৃষিজমির মাটি কাটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলমা ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে টাঙানো সাবেক সংসদ সদস্যের ছবিসংবলিত ব্যানার সরানো নিয়ে স্থানীয় মহিউদ্দিন নামের এক বিএনপি নেতার অনুসারীদের সঙ্গে একই দলের আরেকটি পক্ষের মধ্যে মারামারিতে একজন নিহত হয়েছেন। দুটি পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। তিনি আরও বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন স র দ র কর ম দ র সদস য য বদল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।