ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় আলোচিত হিটলারকে নিয়ে নতুন দুই বই
Published: 20th, October 2025 GMT
এ বছরের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় নাৎসি জার্মানির ইতিহাসভিত্তিক দুটি বই বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। গেটস আলির ‘এটা কীভাবে হতে পারে’ (ভি কোন্টে দাস গেশে-হেন?) এবং রিচার্ড জে. ইভান্সের ‘হিটলারের সহযোগী’ (হিটলার্স কম্পলিৎসেন)। দুটি বই-ই তৃতীয় রাইখের উত্থান, জার্মান সমাজের ভূমিকা ও সাধারণ নাগরিকদের নৈতিক দায়বোধের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হিটলার তাঁর রাজনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলত না এমন সব বই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতেন। ঘোষণা দিয়ে সেসব বই পুড়িয়েছিলেন। ১৯৩৩ সালের ১০ মে বার্লিনে প্রাক্তন অপেরা স্কয়ার, বর্তমানে বেবল স্কয়ারে হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা হাজার হাজার বই পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। জার্মানির বিভিন্ন শহরের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বা শহরের কেন্দ্রে ঘটে একই ঘটনা।
গেটস আলি তাঁর ‘এটা কীভাবে হতে পারে’ বইয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, জার্মানজুড়ে লাখ লাখ মানুষ কেন অ্যাডলফ হিটলারের পক্ষে সোল্লাসে চিৎকার করে সমর্থন দিয়েছিল? প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারণায় যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হবে প্রজাতন্ত্রের সংবিধান ধ্বংস করা? লাখ লাখ জার্মান সৈন্য কেন শেষ অবধি লড়াই করেছিল, যদিও বিজয় অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল?রাজধানী বর্লিনে বিভিন্ন বইয়ের দোকান, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলো থেকে জোর করে বই ছিনিয়ে আনা হতো। মার্ক্সবাদী, ইহুদি, বাম ঘরনা, শান্তিবাদী এবং অন্যান্য বিরোধী বা রাজনৈতিক মতবাদের লেখকদের বই সংগ্রহ করে ট্রাকে তোলা হয়েছিল। পরে এই বইভর্তি ট্রাকগুলো বার্লিনের বিখ্যাত ‘উন্টার দেন লিন্ডেন’ সড়কে এনে স্তূপ করে রাখা হতো। হিটলারের দলের ছাত্র ও যুব ফ্রন্ট মশাল মিছিলসহযোগে বইগুলো বহন করে বেবল স্কয়ারে এনে আগুনে নিক্ষেপ করত। নাৎসিদের এই বই বহ্নিশিখা উৎসব কয়েক মাস ধরে চলেছিল।
গেটস আলি তাঁর ‘এটা কীভাবে হতে পারে’ বইয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, জার্মানজুড়ে লাখ লাখ মানুষ কেন অ্যাডলফ হিটলারের পক্ষে সোল্লাসে চিৎকার করে সমর্থন দিয়েছিল? প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারণায় যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হবে প্রজাতন্ত্রের সংবিধান ধ্বংস করা? সালটি ছিল ১৯৩২-১৯৩৩।
লাখ লাখ জার্মান সৈন্য কেন শেষ অবধি লড়াই করেছিল, যদিও বিজয় অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল? আর ভাবনার বিষয়, এত লোক কীভাবে অন্যান্য সংখ্যালঘু ও ইহুদি গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল?
হিটলারের নেতৃত্বে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির নাৎসি শাসনের একটি প্রচলিত নাম ছিল ‘থার্ড রাইখ’। এই শাসনামলে জার্মানি একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং নাৎসি পার্টির অধীনে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো। হিটলারের সময়কালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ব্যাপক মানবতাবিরোধী দানবীয় কর্মকাণ্ড ঘটে। একটি সাংস্কৃতিক দেশ হিসাবে পরিচিত দেশে কীভাবে এসব সম্ভব হলো?
গেটস আলি তাঁর বইয়ে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত জার্মান সমাজ কীভাবে নাৎসি শাসনের সহায়কে পরিণত হলো, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর অনুসন্ধান ইতিহাসের ঘটনাকে শুধু রাজনৈতিক নয়, মানসিক ও সামাজিক এক প্রক্রিয়া হিসেবে বোঝার চেষ্টা করে।
রিচার্ড জে.ইভান্সের বই ‘হিটলারের সহযোগী’তে নাৎসি শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে সুপ্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলি উপস্থাপন করেছেন। বইটি হিটলারের সহযোগীদের অর্থাৎ রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী ও সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। ইভান্স দেখিয়েছেন, নাৎসি অপরাধ কোনো একক ব্যক্তির উন্মাদ সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গোটা ব্যবস্থার সম্মিলিত কার্যকলাপের ফল।
রিচার্ড জে. ইভান্সের বই ‘হিটলারের সহযোগী’তে ব্রিটিশ এই ইতিহাসবিদ নাৎসি শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে সুপ্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলি উপস্থাপন করেছেন। বইটিতে তিনি সাহায্যকারী ও বন্দীশিবিরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার ২৪ জনের প্রতিকৃতি একত্রিত করেছেন। বুখেনভাল্ড কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ‘কমান্ডার’ ইলসে কোচ এবং বার্গেন-বেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের একজন রক্ষী ইরমা গ্রেসের আচরণ কতটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছিল, তা বর্ণনা করেছেন ইভান্স। বইটি হিটলারের সহযোগীদের অর্থাৎ রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী ও সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। ইভান্স দেখিয়েছেন, নাৎসি অপরাধ কোনো একক ব্যক্তির উন্মাদ সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গোটা ব্যবস্থার সম্মিলিত কার্যকলাপের ফল।
এই দুটি বই সমকালীন জার্মান সমাজে নাৎসি অতীতের দায়বোধ ও আত্মসমালোচনার আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। পাঠক ও সমালোচকদের মতে, উভয় গ্রন্থই সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসচর্চায় নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তাগিদ ফিরিয়ে এনেছে।
এ বছরের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা চলেছে ১৫ থেকে ১৯ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত। গেটস আলির বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২৭ আগস্ট ২০২৫, অর্থাৎ মেলা শুরু হওয়ার প্রায় দেড় মাস আগে। অন্যদিকে রিচার্ড জে. ইভান্সের ‘হিটলারের সহযোগী’ প্রকাশের তারিখ ঠিক মেলার প্রথম দিন, ১৫ অক্টোবর ২০২৫।
২০২৫ সালের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ইতিহাসভিত্তিক এই দুটি বই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। সমালোচকদের মতে, নাৎসি অতীত, দায়বোধ ও ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান ইউরোপীয় রাজনৈতিক বাস্তবতার সম্পর্ককে নতুনভাবে দেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বই দুটি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক শ সন র কর ছ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে ফরম পূরণের সময় বৃদ্ধি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষার আবেদন ফরম বিলম্ব ফিসহ পূরণের সময় ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ডাটা এন্ট্রি নিশ্চয়নের শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর ২০২৫) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুনপরীক্ষা বন্ধ রাখলে শিক্ষকেরা শাস্তির মুখোমুখি হবেন : শিক্ষা উপদেষ্টা৯ ঘণ্টা আগেবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোনালী সেবার মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার শেষ সময় ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিবরণী ফরম ও অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ থেকে চার মাস পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কলেজে সংরক্ষণ করবেন। আঞ্চলিক কেন্দ্রে জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির অন্যান্য নিয়ম ও শর্তাবলি অপরিবর্তিত থাকবে।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কোর্স, আবেদনসহ জেনে নিন সব১১ ঘণ্টা আগে