খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের এখলাস হত্যা মামলায় ২ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ২ জনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

রোববার খুলনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবীর পারভেজ এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজা পাওয়া আসামিরা হলো- দামোদর পশ্চিমপাড়া এলাকার আজিজুল চৌধুরী এবং একই এলাকার রুবেল সরদার। খালাস পাওয়া আসামিরা হলো- আলাউদ্দিন চৌধুরী, মো.

হারুন অর রশিদ ওরফে মো. হারুন খা, জহিরুল খা, আশরাফুল আলম ওরফে কচি সরদার।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাড়ির সামনে এখলাসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয় ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ফুলতলা থানায় মামলা করেন। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহাবুদ্দিন চৌধুরী ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এদিকে মাদক মামলায় ২ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম করাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ২ জনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। ২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস প্রদান করেন আদালত।

রোববার খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক নীলা কর্মকার এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজা পাওয়া আসামিরা হলো- যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ইছাপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন এবং একই উপজেলার শংকরপুর গ্রামের ফরিদ বিশ্বাস। খালাস পাওয়া আসামিরা হলো- আবদুর রহিম ও আব্দুল্লাহ আল বাকী। সাজা পাওয়া ২ আসামি পলাতক রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল ৪৬০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এসআই হান্নান শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। একই বছরের ২৯ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই ইলিয়াস ফকির ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ