দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে দেশে উৎপাদিত সরু চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর খুচরায় বেড়েছে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। সরু চাল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। তবে দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে মোটা চালের দাম। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা কাটারি চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরু চাল হিসেবে পরিচিত জিরাশাইল (জিরা) ও কাটারিভোগ (কাটারি) ধানের আমদানি বর্তমানে বাজারে নেই বললেই চলে। চাহিদার তুলনায় যে সামান্য ধান আমদানি হচ্ছে, তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। স্থানীয় বাজারে দুই থেকে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দামও বেড়েছে।

ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় চালের দাম বাড়লে বা কমলে সারা দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ে। নওগাঁর সবচেয়ে বড় চালের মোকাম শহরের আলুপট্টি এলাকার বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে যায়, বিভিন্ন মিল গেটে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর পাইকারিতে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। এক সপ্তাহ আগে মানভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) জিরাশাইল চালের দাম ছিল ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। বর্তমানে সেই দাম বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৮৫০ টাকা। একইভাবে কাটারিভোগ চালের প্রতি বস্তা এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা চালের বাজার দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) স্বর্ণা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। রনজিত ও ঊনপঞ্চাশ জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।

পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে সরু চাল হিসেবে পরিচিত জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোমবার সকালে নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে যায়, প্রতি কেজি জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৭৬ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। প্রায় দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল থাকা মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা চাল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি ঊনপঞ্চাশ ও রনজিত চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা কাটারি চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। এই চালের বাজারদর এক মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত জিরা ও কাটারি চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর পাইকারিতে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে চাল কিনে ক্যারিং (পরিবহন) খরচ, দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর খরচ যোগ হয়ে খুচরায় আমাদের প্রতি কেজি জিরা ও কাটারি চাল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার প্রথম আলোকে বলেন, শুধু দেশে উৎপাদিত জিরা ও কাটারি চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কারণ জিরা ও কাটারি ধান বর্তমানে শর্ট আইটেম। বাজারে কাটারি ও জিরা ধানের আমদানি নেই। চাহিদার তুলনায় আমদানি কমে যাওয়ায় প্রতি মণ (৪০ কেজি) জিরা ও কাটারি ধানের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ কারণে পাইকারিতে দেশে উৎপাদিত জিরা ও কাটারি চালের দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে ভারত থেকে আমদানি করা কাটারি চাল ও দেশে উৎপাদিত মোটা চালের বাজারদর স্থিতিশীল রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উৎপ দ ত ১০০ থ ক পর চ ত ৫০ ক জ স বর ণ ৮০ থ ক আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ