টাঙ্গাইলে শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে ডাকাতি, টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট
Published: 18th, March 2025 GMT
টাঙ্গাইলের সখীপুরে শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে উপজেলার কাঁকড়াজান ইউনিয়নের চকচকিয়া শ্রীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাত দলের সদস্যরা বাড়ির কেয়ারটেকারকে হাত–পা বেঁধে মুখে টেপ পেঁচিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যান।
ডাকাতি হয়েছে ওই গ্রামের নাজমুল হুদা ও কাজল আক্তার দম্পতির বাড়িতে। নাজমুল হুদা ঢনঢনিয়া ছোটচওনা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। কাজল আক্তার স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নাজমুল শিক্ষকতার পাশাপাশি উপজেলার বড়চওনা বাজারে পোলট্রি খাদ্য ও ওষুধের ব্যবসা করেন।
নাজমুল হুদা স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বড়চওনা বাজারের একটি বাসায় থাকেন। ডাকাতির খবর পেয়ে তিনি গতকাল রাতেই গ্রামের বাড়িতে যান। রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাত সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর বাবা মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়তে যান। তাঁর মা পাশের পুরোনো বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় বাড়িতে শুধু কেয়ারটেকার জয়ন্ত বর্মণ ছিলেন। রাত পৌনে ৮টার দিকে ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল বাড়িতে ঢুকে জয়ন্তকে খাটের সঙ্গে বেঁধে মুখে টেপ পেঁচিয়ে রাখে। ডাকাতেরা দুটি আলমারি ভেঙে লক্ষাধিক টাকা ও আনুমানিক ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
জয়ন্ত বর্মণ বলেন, ডাকাতদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। মুখে মাস্ক পরা ছিল। তাঁকে বাঁধার সময় একজন ডাকাত তাঁকে চড় থাপ্পড় মারে। ডাকাত দল বাড়িতে ঘণ্টাখানেক ছিল।
নামাজ শেষে নাজমুল হুদার বাবা বাড়িতে গিয়ে কেয়ারটেকারকে বাঁধা অবস্থায় দেখে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
কাঁকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মাস আগে আমাদের এ গ্রামে আবদুস সালাম নামের এক ব্যবসায়ী খুন হন। পুলিশ এখনো কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। আবার সন্ধ্যা রাতে ডাকাতি হলো। এ অবস্থায় গ্রামের সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, রাতেই নাজমুল হুদা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।