বাইডেনপুত্র হান্টারের বিরুদ্ধে তদন্তকারী দুই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিল ট্রাম্প প্রশাসন
Published: 19th, March 2025 GMT
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বেকায়দায় পড়া দুই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন রাজস্ব বিভাগের (আইআরএস) এ দুই কর্মকর্তা এখন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাঁদের নাম গ্যারি শাপলি ও জোসেফ জিগলার।
হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি–সংক্রান্ত একটি তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন গ্যারি শাপলি ও জোসেফ জিগলার। তাঁদের অভিযোগ, তদন্তকাজে সহযোগিতা করার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল।
শাপলি ও জিগলার বলেন, বিচার বিভাগ ও ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের সাবেক ইউএস অ্যাটর্নি ডেভিড ওয়েইস ধীরগতিতে তদন্ত চালাচ্ছেন এবং আইনি পদক্ষেপকে বিলম্বিত করছেন বলে তাঁরা তাঁদের ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছিলেন। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হান্টার বাইডেনের মামলার তদন্ত থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন শাপলিকে রাজস্ব বিভাগের অপরাধ তদন্তবিষয়ক উপপ্রধান হিসেবে এবং জিগলারকে রাজস্ব বিভাগে সংস্কার করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট গতকাল মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে বলেছেন, তিনি শাপলি ও জিগলারকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আনা এবং রাজস্ব বিভাগে যেসব অন্যায় অপকর্ম হচ্ছে, তা নিয়ে তদন্তের জন্য এক বছর সময় দেওয়ার কথা ভাবছেন।
বেসেন্ট বলেন, ‘রাজস্ব বিভাগে কী চলছে, কী ভুল হচ্ছে তা আমরা জানব। হান্টার বাইডেন–সংক্রান্ত ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটল, তা জানতে পারব। এবং আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আর কারও ক্ষেত্রে এমনটা না ঘটুক। তিনি রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাট কিংবা স্বতন্ত্র যাই হোন না কেন।’
জো বাইডেন তাঁর ছেলেকে ক্ষমা করে দিলে ওই তদন্ত শেষ হয়ে যায়। ক্ষমা না পেলে হান্টারকে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ও কর ফাঁকি–সংক্রান্ত অভিযোগে কারাদণ্ড ভোগ করতে হতো। যদিও শুরুতে বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি পরিবারের কারও স্বার্থে ক্ষমতাকে ব্যবহার করবেন না। পরে তিনি সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন।
শাপলি ও জিগলার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের অপচয় এবং জালিয়াতি নির্মূল করে প্রশাসনের কাজকে আরও এগিয়ে নিতে এবং ভিন্ন কিছু করতে নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর জন্য বেসেন্ট যে সুযোগ দিচ্ছেন, তার জন্য তাঁরা কৃতজ্ঞ।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’