সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসী হামলা
Published: 19th, March 2025 GMT
দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের আইনজীবী সহকারী মাহাবুবুর রহমান মোল্লা'র (৬৫) উপর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী নাদিম তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়েছে।
বুধবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি পশ্চিম পাড়া এলাকার মাহাবুবুর রহমান মোল্লা'র নির্মাধীন নিজ বাড়ির সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন মাহাবুব মোল্লা।
জানাগেছে, জালকুড়ি পশ্চিশপাড়া নিজ বাড়িতে ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়া বিল্ডিং এর নির্মান কাজ করা কালীন সময়ে এলাকার জয়নাল আবেদীন এর পুত্র চিহ্নিত চাঁদাবাজ মাদক বিক্রেতা সন্ত্রাসি নাদিম (৩৫) তার সাথে থাকা সঙ্গীয় হাসান (৩৫), জয়নাল আবেদীন (৬০), সেলিনা আক্তার বেবি (৪৮), মাসুদ (৩৫), নুর ইসলাম (৬০), সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৭ জন সন্ত্রাসীরা বিল্ডিং এর নির্মান কাজে বাঁধা দেন এবং দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় বুধবার সকাল ৮ টার দিকে বিল্ডিং ফ্লোর ঢালাই এর জন্য নির্মান শ্রমিকরা কাজ শুরু করলে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা কাজে বাধা নিষেধ করায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কাজ বন্ধ করার কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে নাদিম উত্তেজিত হয়ে উঠে তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি ও সঙ্গীয়দের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র সন্ত্র চা পাতি, রাম দা, লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে আক্রমন করে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে। আহত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হন।
এক পর্যায়ে ডাক চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে বলে বিল্ডিং এর নির্মান কাজ বন্ধ থাকিবে এবং এ ঘটনার বিষয়ে কোনো মামলা মোকাদ্দমা করলে জানে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে।
পরে আহত মাহাবুবুরের ছোট ভাই জাহিরুল তাকে উদ্ধার করে নারায়নগঞ্জ তিনশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ব ব র রহম ন ম ল ল
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।