চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সৈকতকে ঘিরে আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স গড়ার স্বপ্ন দীর্ঘসূত্রতায় আটকে আছে। ২০১৮ সালে নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ ছয় বছরেও সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময়েও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেশলিংকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) নুর ই আলম।
গত মঙ্গলবার আনোয়ারার পারকি পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে নুর ই আলম বলেন, এই প্রকল্পে অন্যান্য ঠিকাদার কাজ শেষ করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেশ লিংকের গাফিলতি রয়েছে। বিষয়টি তাদের মাথায় রয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পে আরও বেশ কিছু কাজের টেন্ডার হবে। তখন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর অতীতের কাজের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ ও আদিলুর রহমান পারকি পর্যটন কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা প্রকল্পের কাজের মান ও অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এমনকি নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের কথাও বলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাসুদুল আলম বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। তাদের অনুরোধে দেশলিংক কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ২০১৮ সালে দেশলিংকের সঙ্গে ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় ছিল ১০টি সিঙ্গেল কটেজ, চারটি ডুপ্লেক্স কটেজ, একটি রিসিপশন এবং একটি মাল্টিপারপাস বিল্ডিং নির্মাণ। নির্ধারিত দুই বছরের মধ্যে এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর পর কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে প্রকল্পের ব্যয়। সংশোধিত ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়।
সবশেষ সময়সীমা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পারকি পর্যটন কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখনও প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র কমপ ল ক স
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’