সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগে এ দুটি মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন। এ দিন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, তাঁর পালিত মেয়ে সুমাইয়া হোসেন ও শ্যালিকা সৈয়দা হক মেরীর বিরুদ্ধে আলাদা তিনটি মামলা করেছে দুদক।
পুতুলের বিরুদ্ধে করা প্রথম মামলায় বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সদস্যভুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনকে টাকা দিতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। পরে ২০টি ব্যাংক থেকে মোট ৩৩ কোটি ৫ টাকা প্রদানে বাধ্য করা হয়; যা আত্মসাতের শামিল। এই মামলায় বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় বলা হয়েছে, পুতুল ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালে সিভি দাখিল করেছিলেন। তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।) শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি বা বিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশ না নিয়েও নিজেকে ওই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত মর্মে মিথ্যা দাবি করেছিলেন তিনি। এর পর আবেদন জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করেন পুতুল।
সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। আমুর পালিত মেয়ে সুমাইয়ার বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর নামের ১৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়েছে।
আমুর শ্যালিকা সৈয়দা হক মেরীর বিরুদ্ধে তাঁর ভগ্নীপতির সহায়তার অবৈধ উপায়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর নামের ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। এই মামলায় আমুকেও আসামি করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।