৩০ অক্টোবর, ১৯৭৪। প্রস্তুত কঙ্গোর কিনসাসায় টাটা রাফায়েল স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে ৬০ হাজার দর্শক, টিভির পর্দায় ১০০ কোটির বেশি। এতটুকুতে বুঝে ফেলার কথা, তবু বলার জন্য বলা; ম্যাচটি ছিল মোহাম্মদ আলী ও জর্জ ফোরম্যানের মধ্যে বিখ্যাত সেই ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ হেভিওয়েট লড়াই।

অনেকের চোখেই ‘তর্কযোগ্যভাবে বিংশ শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ইভেন্ট’। সেই কাঙ্ক্ষিত লড়াইয়ে জয় পাওয়া মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন ২০১৬ সালে। এবার মারা গেলেন জর্জ ফোরম্যানও। শুক্রবার এই বক্সিং কিংবদন্তির মৃত্যুর সংবাদ তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানানো হয়েছে।

মৃত্যুকালে ফোরম্যানের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ী ফোরম্যান ছিলেন দুবারের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। জায়গা পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বক্সিংয়ের হল অব ফেমে। ফোরম্যানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা জর্জ ফোরম্যান সিনিয়রের মৃত্যুর সংবাদ জানাচ্ছি। পরিবারকে পাশে রেখেই ২১ মার্চ তিনি শান্তির সঙ্গে মারা গেছেন।’

ফোরম্যান বেশি আলোচিত ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ ম্যাচটির জন্য। এই লড়াইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘হোয়েন উই ওয়্যার কিংস’(When We Were Kings) ১৯৯৬ সালে অস্কারে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে। টেক্সাসে ১৯৪৯ সালে জন্ম নেওয়া ফোরম্যান বেড়ে উঠেছেন হিউস্টনে। বক্সিংয়ে হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর ফোরম্যান জানতে পেরেছিলেন, যাঁর কাছে বড় হয়েছেন সেই জে, ডি ফোরম্যান তাঁর জন্মদাতা পিতা নয়। ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করা তাঁর আসল বাবার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

২৫ বছর বয়সী ফোরম্যান মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে হেরে যাওয়ার পর আরও পাঁচটি লড়াইয়ে অংশ নেন। এর মধ্যে ছিল জো ফ্রেজিয়ারকে পঞ্চম রাউন্ডে টেকনিক্যাল নকআউট ও রন লাইলকে পঞ্চম রাউন্ডে নকআউট করা স্মরণীয় জয়। কিন্তু মাত্র ২৮ বছর বয়সে সবাইকে অবাক করে হঠাৎ অবসর ঘোষণা করেন ফোরম্যান। নিজ শহরে টেক্সাসে ধর্মযাজক হিসেবে শুরু করেন নতুন জীবন।

ফোরম্যান আবার রিংয়ে ফেরেন ১০ বছর পর, যখন তাঁর বয়স ৩৮। এই যাত্রায় তাঁর শুরুটা হয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয় দিয়ে। তবে ১৯৯১ সালে ইভান্ডার হলিফিল্ডের বিপক্ষে হেভিওয়েট শিরোপা লড়াইয়ে তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। সেই ম্যাচে হেরে গেলেও, তাঁর প্রত্যাবর্তন তখন আলোচনায় আসে।

এরপর ১৯৯৪ সালে ৪৫ বছর বয়সে অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দেন ফোরম্যান। মাইকেল মুরারের বিপক্ষে লড়াইয়ে পয়েন্টে পিছিয়ে থাকলেও, হঠাৎ একটি জোড়া ঘুষির আঘাতে মুরারকে নকআউট করে গড়েন ৪৫ বছর ২৯৯ দিনে সবচেয়ে বেশি বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার রেকর্ড! এই রেকর্ড ২০ বছর টিকে ছিল।
ফোরম্যানের শেষ লড়াই ছিল ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে। সেই লড়াইয়ে তিনি হেরে যান শ্যানন ব্রিগসের কাছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এভাবেও ফিরে আসা যায়

খেলার মাঠে খেলা তো হয়ই, এর বাইরে হয় বিচিত্র অনেক কিছুই। মাঠে ও মাঠের বাইরের বিচিত্র সব ঘটনা নিয়েই এ আয়োজন।

হার দিয়ে শুরু, চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ—ইংল্যান্ডের নারী ইউরো জয়ের পথটা মোটেই মসৃণ ছিল না এবার। নকআউট পর্বে তো প্রতিটি ম্যাচেই শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল দলটি। আর তাতে বিরল কীর্তিতেও নাম উঠে গেছে দলটির। ফুটবল ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় দল ইংল্যান্ড, যারা নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই পিছিয়ে পড়ার পর শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

প্রথম দলটিও একটি নারী দল, আর সেই টুর্নামেন্টও ছিল মহাদেশীয়। ২০২২ সালে নারী এশিয়ান কাপে চীনের শিরোপা জয়ের পথটাই যেন ছিল একটানা নাটকীয়তা আর অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প। কোয়ার্টার ফাইনালে ভিয়েতনামের বিপক্ষে প্রথমে গোল খেয়ে বসেছিল তারা, এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে জেতে ৩-১ ব্যবধানে। সেমিফাইনালে জাপানের বিপক্ষে দুবার পিছিয়ে পড়ে দুবারই সমতায় ফেরে চীন, দ্বিতীয় গোলটি আসে ১১৯তম মিনিটে। টাইব্রেকারে গিয়েও দশম ও শেষ শটের আগে তারা একবারের জন্যও এগিয়ে ছিল না।

তবে ফাইনালে সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধ শেষে ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল চীন। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝপথেও একই স্কোরলাইন। এরপর ট্যাং জিয়ালির পেনাল্টি থেকে আসে এক গোল, ৭২তম মিনিটে ঝাং লিনইয়ান সমতায় ফেরান দলকে। আর অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে বদলি খেলোয়াড় শিয়াও ইউইয়ের গোলে লেখা হয় আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনের অন্যতম সেরা গল্প।

২০২২ সালে মেয়েদের এশিয়ান কাপজয়ী চীন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এভাবেও ফিরে আসা যায়
  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট