সরবরাহ চুক্তিতে না আসায় শাস্তির মুখে চালকল মালিক
Published: 23rd, March 2025 GMT
আমন মৌসুমে চাল সরবরাহে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেনি জয়পুরহাটের ৬১ চালকল। এ কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে সরকারি দরের চেয়ে বাজারদর ছিল বেশি। লোকসানের আশঙ্কায় অনেক চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হয়নি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হয়েছিল এ অভিযান। এ মৌসুমে ১৩ হাজার ৭৮৬ টন চাল ও ৪ হাজার ৮৩৯ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হয়। তবে ধান এসেছে ৩৫০ টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেলায় মোট ৩৬০টি নিবন্ধিত চালকলের মধ্যে ২১টি অটো চালকল রয়েছে। বাকি সব হাসকিং চালকল। সরকার আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য ৩৩ টাকা কেজিতে ধান, ৪৭ টাকা কেজিতে চাল কেনার দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি ছিল। যে কারণে কৃষক শুরু থেকেই খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী ছিলেন। নিবন্ধন রক্ষায় চালকলের মালিকরা নিশ্চিত লোকসান জেনেও গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। কৃষকরা বাজারের চেয়ে কম দামে সরকারকে ধান দিতে বাধ্য নন।
আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় ৬১টি চালকল মালিক লোকসানের ভয়ে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গত ১২ জানুয়ারির মধ্যে চাল সরবরাহে চুক্তির জন্য সময় বেঁধে দিয়ে এসব চালকল মালিককে ১ জানুয়ারি নোটিশ দেন। এর পরও তারা সাড়া দেননি।
চুক্তির বাইরে থাকা কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা এলাকার শাওন চালকলের মালিক কামরুল হাসান বলেন, ‘এবার চুক্তি করলে কেজিতে ৫-৬ টাকা লোকসান গুনতে হতো। তহবিলই গায়েব হতো। সব ভেবে এবার চাল সরবরাহের চুক্তি করিনি। শুনতে পাচ্ছি নিবন্ধন বাতিল করেছে, তো ভালো হয়েছে।’ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও বিচ্ছিন্ন করেনি। নিবন্ধন যখন বাতিল করেছে, তখন বিদ্যুৎ সংযোগও বিছিন্ন করবে। দু’দিন আগে হোক আর পরে।
পাঁচশিরা বাজারের কৃষকবন্ধু চালকলের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার মিলের নামে বরাদ্দ করা ৯ দশমিক ১ টন চাল সরকারকে দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলাম। লোকসান জেনেও পুরো বরাদ্দের চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছি।’ শুধু নিবন্ধন রক্ষার জন্যই তাঁকে লোকসান গুনে গুদামে চাল দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সরকারি এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চুক্তির বাইরে থাকা কালাইয়ের সাদিক চালকলের মালিক আবু সাঈদ ফকির। তিনি গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, ‘আসলে বলার কিছু নেই। চাল সরবরাহ করতে আমরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় নিবন্ধন বাতিল করেছে। আবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করবে। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।’
আবু সাঈদ ফকির আরও বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ধান-চালের দাম অনেক বেশি। আমরা কিনতে না পারলে সরকারকে সরবরাহ করব কোথা থেকে? এ বছর দিতে পারিনি, আগামীতে দেব। তাই বলে কি আমাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে?’
ধান সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রশাসনের সীমাবদ্ধতার কথা উঠে আসে কৃষক আফজাল হোসেনের কথা। পাঁচবিবি উপজেলার চাটখুর গ্রামের আফজাল বলেন, ‘গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এবার সরকারি গুদামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। তাই সব ধান বাজারেই বিক্রি করেছি।’
জেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল বারীর মতে, লোকসান জেনেও সবাই ব্যবসা করতে চাইবে না। ৬১টি চালকলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে বলে শুনেছেন। এ ব্যাপারে করণীয় বিষয়ে সমিতিই সিদ্ধান্ত নেবে।
জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ ছ ন ন কর চ ল সরবর হ আমন ম স ম সরবর হ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।