জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের পলিশা এলাকায় ‘গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে’ মো. শাহীন আলম (৪৩) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে পরিবার। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর আগে গরু চুরির অভিযোগে ডিবি পুলিশ একাধিকবার বাড়িতে গিয়ে হুমকি ও হয়রানি করেছে বলে দাবি ওই পরিবারের। আজ সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই ব্যক্তির পরিবার।

পুলিশ জানিয়েছিল, ১৭ মার্চ রাত তিনটার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দলকে দেখে শাহীন আলম পালাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি মাটিতে পড়ে মারা যেতে পারেন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি গরুচোর চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। তবে শাহীন আলমের স্ত্রী জরিনা বেগমের দাবি, তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য তিনি হত্যা মামলা করেছেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা প্রকাশ করা হোক।

এই দাবিতে আজ দুপুরে প্রথমে জামালপুর শহরের নাছিরপুর এলাকার বোর্ডঘর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী অংশ নেন। পরে নিহত ব্যক্তির বাড়ির পাশের একটি গোডাউনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ১০ থেকে ১২ বছর আগে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন। তখন কিছু লোক মনে করতেন, আমার স্বামী চুরি করা গরু কিনে ব্যবসা করেন। ফলে কোথাও গরু হারানো গেলেই লোকজন বলত আমার স্বামী জড়িত। এভাবেই আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হতো। যার কারণে পুলিশ তাঁকে হয়রানি করত। এরই মধ্যে বেশির ভাগ মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। এতে প্রমাণিত আমার স্বামী চোর ছিল না। এসব কারণে আমার স্বামী ৪ থেকে ৫ বছর আগে মাংসের ব্যবসাও ছেড়ে দেন। এর পর থেকে দুই ছেলে ও আমার স্বামী নিজস্ব গাড়ি (পিকআপ ভ্যান) চালান।’

জরিনা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ ৫ মাস আগে পাশের লাঙ্গলজোড়া এলাকায় দুটি গরু চুরি হয়। যাঁদের গরু চুরি হয়, তাঁরা বিত্তবান ও প্রভাবশালী। তাঁদের পরিবারের একজন পুলিশে চাকরি করেন। ফলে জোর খাটিয়ে দুই থেকে তিনজন ডিবির সমন্বয়ে তাঁরা ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হামলা করেন। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই হামলা করা হয়েছিল। এতে আমি আতঙ্কিত হয়ে স্বামীকে কয়েক দিন বাড়ির বাইরে থাকতে বলি। ওই গরু চুরির বিষয়ে আমি অভিযোগকারীদের (গরুর মালিক) সঙ্গেও কথা বলি। আমার স্বামী এলাকায় এলে তাঁদের সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে তাঁরা জানান। অন্যথায় এলাকায় এলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলবেন তাঁরা।’

নিহত শাহীন আলমের স্ত্রী জরিনা বেগম আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর নামে কোনো মামলা না হলেও বারবার ডিবি পুলিশ বাড়িতে আসত। তারা (ডিবি) নানা সময় আমাদের বাড়িতে হুমকি দিয়ে যেত যে আমার স্বামীকে পেলে তারা (ডিবি) মেরে ফেলবে। চুরি না করা সত্ত্বেও তারা বিত্তবান এবং তাদের কাছে প্রশাসনিক পাওয়ার থাকার কারণে আমাদের এভাবে নির্যাতন করে আসছিল।’

চুরি না করা সত্ত্বেও ডিবি পুলিশের হয়রানি এবং হারিয়ে যাওয়া গরুর মালিকদের হুমকির কারণে ৪ থেকে ৫ মাস ধরে শাহীন আলম ঢাকায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন জরিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘১৭ মার্চ রাত ৮টার দিকে ফোন দিয়ে আমাদের খোঁজখবর নেন। এটাই ছিল আমার সঙ্গে শেষ কথা। পরদিন সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছে। তার লাশ মাদারগঞ্জে আছে। দ্রুত থানায় গিয়ে আমার স্বামীর বীভৎস লাশ দেখতে পাই। তার মুখে এবং শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা দেখে আমি বুঝতে পারি, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে কেউ হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওই দিন প্রথমে থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কথার কোনো মিল ছিল না। ফলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ওই ঘটনার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত দাবি করি।’

নিহত শাহীন আলম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ র ব ভ গ য় তদন ত আম র স ব ম ক শ হ ন আলম পর ব র আম দ র এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ