বর্ষার বক্তব্য নিয়ে তারকাদের সমালোচনা
Published: 25th, March 2025 GMT
কয়েক দিন আগে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দেন চিত্রনায়িকা বর্ষা। কারণ হিসেবে এ অভিনেত্রী বলেন— “ছেলেরা বড় হচ্ছে, বড় হয়ে তারা যদি দেখে, তার মা সিনেমার নায়িকা, তখন কী ভাববে? এসব চিন্তা করেই সিনেমা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বর্ষা অভিনয় ছাড়ার বক্তব্যের একটি ফটো কার্ড নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপা খন্দকার। পাশাপাশি বর্ষার বক্তব্যর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে লেখেন— “আপনার সন্তান যদি আপনাকে চলচ্চিত্রের তারকা হিসেবে দেখে, এটা হবে গর্বের মুহূর্ত।”
অভিনয় ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বর্ষা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে আপত্তি করেছেন দীপা খন্দকার। তার এ পোস্টে শোবিজ অঙ্গনের অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। বর্ষার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিয়েছেন কিছু প্রশ্ন।
আরো পড়ুন:
তামিমের সুস্থতায় তারকাদের প্রার্থনা
ফারিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চাকরি হারালেন সেই যুবক
অভিনেতা জিতু আহসান লেখেন, “সম্মানের সঙ্গে বলছি, তার মানে সিনেমার নায়িকারা খারাপ? ছেলে ১৪-১৫ বছর বয়সে মাকে সিনেমার নায়িকা দেখলে খারাপ, তাহলে উনি এখন যে নায়িকা (জোর করে) সেটা খারাপ না? আর এটা এত যে খারাপ পেশা, সেখানে স্বামীর প্রযোজনা সিনেমায় জোর করে নায়িকা হয়ে থাকার দরকার কি?”
জিতু আহসানের কমেন্টের জবাবে দীপা খন্দকার লেখেন, “ভাই, আমি বুঝিয়েছি, সন্তান যদি ওই বয়সে মাকে নায়িকা দেখে তাহলে এটা একটা গর্বের মুহূর্ত হবে। আর আমি আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অভিনয় করতে চাই। সুতরাং উনার কথার সঙ্গে সহমত পোষণের প্রশ্নই আসে না।”
এরপর আরেকটি মন্তব্য করেন দীপা। তাতে তিনি লেখেন, “ওই মহিলার কথা শুনে আমার খারাপ লাগছে। একটা মশাও তো তার স্বামীকে চিনত না। মিডিয়াতে এসে মানুষ চেনার পর সেই মিডিয়া খারাপ! যে পাতে খায়, সেই পাতে…।” এ মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন জিতু আহসান।
দীপা খন্দকার, জিতু আহসানের ভাবনার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তাদের ভক্ত ও সহকর্মীরাও। অনেকে বর্ষার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করছেন। অভিনেতা স্বাধীন খসরু লেখেন, “ভয়ংকর অপদার্থ।” গায়ক লুৎফর হাসান লেখেন, “আহারে মুনাফিক। যে পাতে খায়, সেই পাতেই ডট ডট।”
নাট্যনির্মাতা আশিকুর রহমান লেখেন, “এরা এমন ভণ্ড কেন? এরা নিজেরা ইয়াং বয়সে সিনেমার নায়িকা হবে, নেম-ফেম উপভোগ করবে। কিন্তু সন্তানকে শেখাবে সিনেমার নায়িকা একটা খারাপ জিনিস!” তা ছাড়াও নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিকসহ অনেকে আপত্তি জানিয়েছেন।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র বর ষ র কর ছ ন আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্তিশালী করার তাগিদ
ঢাকা স্থিতিশীল না হলে কূটনীতির জন্য বিদেশে বাংলাদেশের মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাই দেশের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। রাজনৈতিক সহমতের চর্চা করতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এ আলোচনার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আলোচনা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে সরকার। আমাদের কূটনীতির সবচেয়ে বড় বাধা হলো ঢাকা। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শুরু ও শেষ হয়। ঢাকা স্থিতিশীল না থাকলে মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো সহমতের অভাব। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে সহমত থাকতে হবে। আইডেন্টিটি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি—এই তিনটিকে নিয়ে এবং এর সঙ্গে মানুষের চাহিদা যুক্ত করতে পারলে পররাষ্ট্রনীতি ভালো ও শক্তিশালী হবে।’
‘বিপ্লবের’ যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পুনর্গঠন করতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে সরাতে হবে। পররাষ্ট্রনীতিতে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেবল আমলা দিয়ে হবে না। সার্ককে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।’ পানি ও নদী কূটনীতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানিবণ্টন নিয়ে আমরা নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছি। সব দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কীভাবে চলতে পারি তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বেশি করে থাকি। আমরা অনেক বেশি ঋণনির্ভর হয়ে গিয়েছি। সাইবার সিকিউরিটিকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। সার্ক ছাড়া আর বিকল্প নেই আমাদের জন্য। আঞ্চলিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য সার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন বা ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়া অনেক জটিল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে আমাদের ভারসাম্য আনতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের নৈতিক অবস্থান নিতে হবে। যেখানে তথ্য ও সত্যের ওপর ভিত্তি করে কারও কোনো পদক্ষেপ ভালো হলে সেটা গ্রহণ করব আর খারাপ হলে তা স্পষ্ট করে অগ্রাহ্য করব।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ঘাটতি আছে। আমাদেরকে প্রবাসীবান্ধব নীতি করতে হবে। আমাদের দেশের সব নীতি আমরা নির্ধারণ করব।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময়ে নানা পক্ষের মতামতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এখন আবার সেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সংকটে আছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো এখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা এখানে বাজেভাবে ফেঁসে গেছি। রাশিয়া ও আফগানিস্তান সংকটের সময় পাকিস্তান মানবিক করিডর করে দিয়েছিল, যার জন্য এখনো পাকিস্তানে সমস্যা হচ্ছে, যেমন অবাধে মাদক ও অস্ত্র সরবরাহ। আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকা দরকার। পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ শক্তির ওপর। এর জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ঠিক করতে হবে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের জবাবদিহি থাকতে হবে। ভারত, আমেরিকা বা চীনের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য আনতে হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের নতুন সম্পর্কটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।’
পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি উল্লেখ করে বিআইপিএসএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির বলেন, ‘গত ১৬ বছর কোনো পররাষ্ট্রনীতি ছিল কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান।’ তিনি আরও বলেন, কূটনীতিবিদদের বেতন অন্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেক কম। রাষ্ট্রের অন্য ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য যেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে রকম উদ্যোগ পররাষ্ট্রনীতিতে নেওয়া হয়নি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের এখন জাতীয় স্বার্থের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য একটা রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করতে হবে।’
গণ–অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতির আগে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্ত করতে হবে। আমাদের কি ২৫টি বোয়িং কেনার ক্ষমতা আছে? এটি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছোটখাটো একটা সংঘাত হবে, যেমনটি হচ্ছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াতে।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে এখনো টানাপোড়নে আছে। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও ভারসাম্য আনাটা অনেক জরুরি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক কূটনীতিক এম শফিউল্লাহ, সাবেক কূটনীতিক শহীদুল ইসলাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সেন্টার ফর নন–রেসিডেন্ট বাংলাদেশিজের চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী এবং এবি পার্টির সহকারী সদস্যসচিব নাসরীন সুলতানা মিলি।