শিশুদের ওপর রোজা ফরজ নয়। পালন করলে সওয়াব পাওয়া যাবে, ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে না। (সালেহ আল-উসাইমিন, ফিকহুল ইবাদাত, ১৮৬)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক নারী তার শিশু সন্তানকে তুলে ধরে রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, তার জন্য কি হজ আছে? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, এবং এজন্য সে সওয়াব পাবে। (মুসলিম, হাদিস: ১৩৩৬)
কখন শিশুর ওপর রোজা ফরজ
নামাজের মতোই রোজার বিধান। রাসুল (সা.
গ্রহণযোগ্য মত হলো, ফরজ হওয়ার মানদণ্ড হলো সাবালকত্ব। সাবালক হওয়ার আগে কারও ওপর রোজা ফরজ নয়। (লাজনায়ে দায়েমা লিল-ইফতা, ফাতাওয়া নাম্বার ১৭৮৭)
আরও পড়ুনরমজানে ৬টি অভ্যাস১০ মার্চ ২০২৫শিশু রোজার জন্য জেদ করলে
শিশু বিনা কষ্টে রোজা রাখতে সক্ষম হলে তাকে রোজা রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত। যদি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, তার বয়স কম, স্বাস্থ্যও খারাপ, রোজা তার জন্য ক্ষতিকর, তবে তাকে রোজা না রাখার জন্য বলতে হবে। এমন অবস্থায় রোজা না রাখার জন্য তার ওপর কঠোরতাও আরোপ করা যাবে। (ইবনে উসাইমিন, ফাতাওয়া ও রাসায়েল, ১/৪৯৩)
শিশুর রোজা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
শিশুর রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্যও সেসব কিছুই শর্ত, যারা বড়দের জন্য শর্ত। তাকেও সেসব জিনিস থেকে বিরত থাকতে হবে, যার কারণে বড়দের রোজা নষ্ট হয়ে যায়। (আবদুল্লাহ ইবনে জাবরিন, ফাতাওয়াস সিয়াম, ৩৩)
শিশুর রোজার সাওয়াব
শিশুর রোজার সাওয়াব শিশু নিজেই লাভ করবে। তবে তার পিতা-মাতা রোজা শেখানোর কারণে সওয়াব পাবেন। (আবদুল্লাহ ইবনে জাবরিন, ফাতাওয়াস সিয়াম, ৩৩)
আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে আমনের ক্ষতির শঙ্কা, ধান কাটার পরামর্শ কৃষি বিভাগের
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিলনা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। এ বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছিলেন আমন ধান। পেকে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। পরিকল্পনা ছিল, পরিবারের যোগান মিটিয়ে, কিছু ধান বিক্রি করে পুরো বছর চালাবেন ১০ জনের সংসার। তবে, তার সেই স্বপ্ন নষ্ট করে দিল দমকা হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টি। ধান হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তা এখন নষ্ট হতে বসেছে।
এই কৃষক বলেন, “সাংসারে স্ত্রী, ছেলে, নাতীসহ ১০ জন আছে। এ বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। জমির ধানও পেকেছিল। ভেবেছি, কয়েকদিন পর ধান কেটে ঘরে তুলব। এই ধান আর ঘরে তুলতে পারলাম না। ঝড়ো হওয়া আর বৃষ্টিতে হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে ধান এখন নষ্ট হতে বসেছে। সারা বছর কীভাবে চলব তা চিন্তাই করতে পারছি না।” শুধু সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসই নয়, এমন অবস্থা কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষকের।
আরো পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
দিনাজপুরে টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত
কৃষি বিভাগ বলেছে, ধান দ্রুত কেটে নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১২ হাজার ৩০৮ হেক্টর জমিতে আমান ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর, উফশী জাতের ৮ হাজার ২০৩ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষকরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তীব্র বাতাস বয়ে যাওয়ায় হেলে পড়ে পাকা আমন ধান। জমিতে জমে থাকা পানিতে কেটে রাখা ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা গেছে। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট থাকায় হেলে পড়া ধান কাটতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। দ্রুত পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে তা মাঠেই নষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
কৃষক মহানন্দ দে বলেন, “বৃষ্টি আগে ধান কাটা শেষ করতে পারলে বিঘা প্রতি ৪০ মণ পেতাম। ধান হেলে পড়ায় ও তলিয়ে যাওয়ায় ২০ মণ পাব কিনা সন্দেহ রয়েছে। ধান কাটতে আগে ৭-৮ জন শ্রমিক লাগলেও এখন লাগবে অন্তত ১৫ জন। ফলে আমরা ধান হারানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
জমি থেকে ধান কাটায় ব্যস্ত চাষিরা
সিঙ্গারকুল গ্রামের কৃষক বিশ্বম চন্দ্র সরকার বলেন, “পাকা ধান বৃষ্টির কারণে নষ্ট হতে বসেছে। এ ধান না যাবে খাওয়া, না যাবে বিক্রি করা। এমনকি খড় পচে যাচ্ছে যা গরুকেও খাওয়ানো যাবে না। দেনা করে ফসল ফলিয়েছি। এখন ধার কীভাবে মেটাব, আর সারা বছর কীভাবে চলব সেই চিন্তায় দিন কাটছে।”
কৃষক মফিজুর ইসলাম বলেন, “এমন একটা দুর্যোগ গেলেও কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের খোঁজ নেননি। শুধু আজ নয়, কোনো সময়ই আমাদের খোঁজ রাখেন না তারা। আমরা কোনো পরামর্শও পাই না তাদের কাছ থেকে। এখন যদি সরকার আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, “গত শনিবারের বৃষ্টিতে জেলায় ধানসহ কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। ক্ষতি কমাতে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দিতে ঊর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের জানানো হবে।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ