শহুরে জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত এই আমরাই মাঝেমধে৵ হাঁপিয়ে উঠি নাগরিক যান্ত্রিকতায়। দূষণ থেকে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে চাইলে আমাদের ছুটে যেতে হয় শহরের বাইরে। আমাদের এই ব্যস্ত ও কোলাহলপূর্ণ নাগরিক জীবনে ঋতু পরিবর্তনের অপরূপ সৌন্দর্য, নির্মল প্রাকৃতিক হাওয়া আর নির্জনতা যেন কল্পকথায় পরিণত হয়েছে। আর এখন তো ঢাকায় বসে ষড়্ঋতু কখন শুরু হচ্ছে, কখন শেষ—বোঝাটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

আবার আমাদের তুমুল ব্যস্ততার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক নানা প্রযুক্তি। জীবন ও যোগাযোগকে সহজ করতে ব্যবহার করা মুঠোফোনের স্ক্রিনে আমরা আটকে থাকছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ সময়ে এসে নিজের ফোন থেকে দূরে থাকার কথা আমরা যেন একমুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারি না। হাত থেকে ফোন রাখার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের মনে হতে থাকে, যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমাদের চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে! আর এই ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতায় ডুবে থাকতে গিয়ে সবাই ক্রমে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে একঘেয়ে প্রাত্যহিক জীবন থেকে ছুটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কিছু নিবিড় মুহূর্ত জীবনে এনে দিতে পারে অদ্ভুত প্রশান্তি। আর এখন সময়টাও তেমন—ঈদে এবার লম্বা ছুটি। তাই কোথাও থেকে ঘুরে এসে প্রশান্ত মনে করতে পারেন নতুন পরিকল্পনা।

ডিভাইস থেকে কিছু সময় বিচ্ছিন্ন থাকুন

আমাদের কিছু সময়ের জন্য হলেও ডিভাইস থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা প্রয়োজন। বিচ্ছিন্ন থাকার সময়টাতেই আমরা আমাদের চারপাশের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে পারব। হাত থেকে স্মার্টফোন নামিয়ে রেখে আমরা আমাদের প্রিয়জনের কথা শুনব, তাদের সঙ্গে অর্থবহ সময় কাটাব। প্রকৃতির সান্নিধ্য পুরোপুরি উপভোগ করব। নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করব, বিষয়গুলো বোঝার ও বাকিদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করব।

প্রশান্তির খোঁজে গ্রামের দিকে যাত্রা

শহরের যানজট, কর্মব্যস্ততা, মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে ছুটি কাটানো বা পুরোপুরি প্রশান্তি পাওয়া প্রায় দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ কারণে সবারই আসলে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামে কাটানো প্রয়োজন। আমাদের অনেকেরই গ্রামে আত্মীয়স্বজন রয়েছেন, অনেকেরই গ্রামের শিকড় এখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি। গ্রামের শান্ত, ধীরস্থির প্রকৃতি ও জীবন আমাদের নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মুক্ত ও প্রশান্ত রাখতে পারে। পাশাপাশি এই সময়ে নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কেও আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ তৈরি হবে।

মানসিক প্রশান্তির জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্য

আমাদের মানসিক প্রশান্তির জন্যও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা প্রয়োজন। গ্রামীণ পরিবেশের নির্মল বাতাসে কিছুটা সময় কাটালে আমাদের মানসিক চাপ কমে আসতে পারে। সেই সঙ্গে মাঠে ঘোরাঘুরি, পুকুরে সাঁতার কাটা বা গাছের ছায়ায় বসে গল্প করার অভিজ্ঞতাও আমাদের পরবর্তী জীবনে রঙিন স্মৃতি হিসেবে রয়ে যেতে পারে। গ্রামের মেলায় ঘুরে বেড়ানো বা স্থানীয় কোনো আনন্দ-উৎসবে অংশ নেওয়া আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য কেবল আনন্দই নিয়ে আসবে না; একই সঙ্গে আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের পরম্পরা বজায় রাখবে।

শিক্ষার্থীদের শিকড়ে ফেরাতে স্কুলগুলোর করণীয়

শিক্ষার্থীদের গ্রামে বা প্রকৃতির মধে৵ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, তেমনি এ ক্ষেত্রে স্কুল ও শিক্ষকদের ভূমিকাও অসামান্য। প্রতিটি অঞ্চলেরই নিজস্ব ঐতিহ্য, রীতি, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও ইতিহাস রয়েছে। শিক্ষার্থীরা গ্রামে গিয়ে এসব বিষয়ে হাতে–কলমে জানতে পারে। তারা বুঝতে পারবে, নগরের কোলাহল আর ডিভাইসের ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতার বাইরেও বিশাল এক দুনিয়া পড়ে রয়েছে।

একজন শিক্ষক এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী করে তুলতে পারেন। শিক্ষার্থীরা ঘুরে এসে নির্দিষ্ট ওই গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তার আনন্দের মুহূর্তের অভিজ্ঞতা বাকিদের সামনে উপস্থাপন করতে পারে। এমনকি গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে ধারণা দিতে শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রামে ভ্রমণের আয়োজন করতে পারে স্কুল। সে ক্ষেত্রে, গ্রামের মানুষের জীবন কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা; জানতে পারবে ওই গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে।

গ্রাম ও প্রকৃতির সান্নিধ্য আর নিজের শিকড় একজন মানুষকে কেবল মানসিক প্রশান্তিই দেবে না, এটি শিক্ষার্থীদের জীবনের মানে বোঝাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। একজন শিক্ষার্থীর সামনে অবারিত জগৎ উন্মোচিত হবে। তাহলে আর দেরি কেন! প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও থেকে এখনই বেরিয়ে আসুন; ঘুরে আসুন গ্রাম থেকে, আপনার নিজের শিকড়ের সন্ধানে!

*লেখক: কুমকুম হাবিবা জাহান, হেড অব সিনিয়র স্কুল, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাঁতারকূল, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন