বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলনে নামা তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ওপর আগের সরকারের মতো আক্রমণ করা হচ্ছে। তাঁরা শখ করে আন্দোলনে নামেননি। তাঁদের এখন ঘরে থাকার কথা ছিল। মালিকেরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছেন বলে শ্রমিকেরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরে এক সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে ‘মাছ, মাংস, চাল, মজুরির স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক ওই সমাবেশের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সমাবেশের সভাপতি ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা, শ্রম অধিকারকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার বলছে, তারা একটি নতুন ব্যবস্থা চায়, নতুন বন্দোবস্ত চায়। তারা নতুন বাংলাদেশ করার কথা বলছে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ করার কথা বলছে। কিন্তু সে নতুনের কোনো কিছুই আমরা দেখতে পারছি না।’

বকেয়া বেতনের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, হাসিনার আমলে পুলিশ যেভাবে শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ করেছে, এ সরকারের সময়ও পুলিশের আক্রমণে কোনো পরিবর্তন নেই। সেই সময়ে পুলিশ যেভাবে অন্যায়-অত্যাচার করেছে, তার কোনো রকম পার্থক্য আমরা এই সরকারের সময় দেখি না। সেই সময়ের মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বলত, এখনকার শ্রম উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের মুখেও আমরা একই রকম কথা শুনছি।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছে বলেই গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। আর সরকার পরিবর্তন হয়েছে বলেই আপনারা উপদেষ্টা হয়েছেন। সে জন্য আপনাদের প্রতিদিন সকালে শ্রমিক ও আন্দোলনকারীদের সালাম দেওয়া উচিত।’

‘শ্রমিকদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে’ বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যে মন্তব্য করেছেন, তার নিন্দা জানান আনু মুহাম্মদ। বলেন, ‘আন্দোলনে উসকানি দেওয়া মানে কী? আন্দোলনে উসকানি তো দিচ্ছে মালিকেরা। এখানে যারা আন্দোলন করছে, তারা শখ করে আন্দোলন করছে না, তাদের এখন ঘরে থাকার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে মালিকেরা প্রতারণা করেছে, জালিয়াতি করেছে। এ জন্যই তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।’ শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ, হামলার বিচার ও জড়িতদের শাস্তি এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সভাপতি মোশাহিদা সুলতানা, গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, লেখক–গবেষক শিক্ষক মাহা মির্জা ও কল্লোল মোস্তফা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ সরক র র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ