‘জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান না হওয়া’য় ঢেকে রাখা হলো মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল
Published: 27th, March 2025 GMT
লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার গঠন, স্বাধীন ভূখণ্ডে নব রবির উদয়, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয়ে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, জাতীয় পতাকা হাতে উল্লসিত জনতা ইত্যাদি।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসন সেই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক)।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
সনাকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত লালমনিরহাটে ২০২৪ সালর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং গতকাল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
লালমনিরহাট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল স্মৃতিস্মারকটি যদি চলমান সময়ের জন্য অনুপযুক্ত হয়, প্লিজ! কর্তৃপক্ষ, ম্যুরালটি ধ্বংস করে দিন, তবু সারা বছর সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে বিশেষ বিশেষ দিনে কাপড় দিয়ে ঢেকে সার্কাস করবেন না।’
লালমনিরহাট সনাকের সভাপতি বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।