তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে ইস্তাম্বুলের অন্তর্বর্তী মেয়র নির্বাচিত হলেন আসলান
Published: 27th, March 2025 GMT
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের অন্তর্বর্তী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নুরি আসলান। তিনি কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুর মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালন করবেন। গত সপ্তাহে দুর্নীতির অভিযোগে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে এখন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
গতকাল বুধবার স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনটিভি এবং তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আনাদুলুর খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলের পৌর সরকার নুরি আসলানকে অন্তর্বর্তী মেয়র নির্বাচিত করেছে। আসলান রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) সদস্য। ইমামোগলুও এই পার্টির নেতা।
প্রথম দফার ভোটে আসলান ১৭৩ ভোট পান। আর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এ কে পার্টি) প্রার্থী জেইনেল আবিদিন ওকুল পান ১২৩ ভোট। কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়ায়। এতে আসলান পান ১৭৭ ভোট। ওকুল পান ১২৫ ভোট।
আরও পড়ুনতুরস্কের প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বিরোধী দলীয় নেতার৫ ঘণ্টা আগেদ্বিতীয় রাউন্ডেও কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ভোট গড়ায় তৃতীয় রাউন্ডে। নিয়ম অনুযায়ী এই রাউন্ডে কোনো প্রার্থী সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই মেয়র নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এই রাউন্ডে আবার আসলান পান ১৭৭ ভোট। ওকুল পান ১২৫ ভোট। ফলে আসলান অন্তর্বর্তী মেয়র নির্বাচিত হন।
বিজয়ের পর সারাচানে ইস্তাম্বুল পৌরসভা ভবনে সিএইচপির চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল বলেন, এরদোয়ান চেয়েছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে মেয়র করতে। কিন্তু তা সফল হয়নি। এরদোয়ানের এজেন্ডা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এখন থেকে তুর্কিদের লড়াইয়ের ক্ষেত্র আরও বাড়ল জানিয়ে ওজেল বলেন, পুরো তুরস্কে আমাদের সংগ্রাম বেড়েছে।
কথা বলার সময় ওজেলের পাশে ছিলেন আসলান। নিজের দায়িত্বকে সাময়িক জানিয়ে আসলান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের মেয়র জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট নির্বাচিত হয়েছিলেন। শিগগিরই তিনি আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন। চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাব, মেয়র পদে তাঁকেই [ইমামোগলুকেই] ফিরিয়ে আনব।’
আরও পড়ুনরাজপথ থেকে সরকার পতনের ডাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের১৭ ঘণ্টা আগেইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ। ইস্তাম্বুলে, ২৬ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র ত রস ক আসল ন
এছাড়াও পড়ুন:
দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি
মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’
এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫