বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পর এবার ওসিসহ বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
Published: 27th, March 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঁদাবাজি ও থানায় ভাঙচুরের ঘটনায় শ্রমিক দলের নেতাকে গ্রেপ্তার ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পর এবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তার শ্রমিক দলের নেতা আবুল কালামের ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হকের আদালতে মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় মুরাদনগর থানার ওসি মো.
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার ইফতারের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা উবায়দুল সিদ্দিকী চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। এ ঘটনার পর পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নেয়। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ।
অভিযুক্ত শ্রমিক দল নেতা আবুল কামাল স্থানীয় সাবেক সাংসদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বৈষম্যবিরোধী নেতা আবু ফয়সালের করা চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের মামলায় প্রধান আসামি। অন্যদিকে থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক মো. আলী আক্কাস বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামি যুবদল নেতা মাসুদ রানা। এ ঘটনায় মাসুদ পলাতক থাকলেও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এদিকে আজ আদালতে করা মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, মামলার ১ নম্বর সাক্ষী (শ্রমিক দল নেতা) একজন অটোরিকশাচালক। তিনি কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কে দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মামলার ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামি (বৈষম্যবিরোধী নেতা-কর্মী) একটি সক্রিয় চাঁদাবাজ চক্র। তাঁরা কোম্পানীগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি করে আসছেন। ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামিরা কিছুদিন ধরে ১ নম্বর আসামির (থানার ওসি) নাম ব্যবহার করে এবং বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ১ নম্বর আসামির ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছিল। ২৪ মার্চ বিকেলে ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামি কোম্পানীগঞ্জ নগরপাড় সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে ১ নম্বর সাক্ষীর কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি চাঁদাবাজির কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। এ সময় ২ নম্বর আসামি ১ নম্বর আসামিকে কল দিলে তাঁর অধীন পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাঁর ভাইকে আটক করে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক শ্রমিক দল নেতাকে ছাড়াতে থানায় হামলা, গ্রেপ্তার ৬২৫ মার্চ ২০২৫আরজিতে আরও বলা হয়, আটকের খবর পেয়ে কিছু লোক নিয়ে থানায় গেলে ওই দিন সন্ধ্যায় ১ নম্বর আসামি তাঁর ভাইকে ছেড়ে দিতে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ওসি সাধারণ জনগণকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ও সরকারবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র দেখাতে অন্য আসামিদের উসকানি দিয়ে মুরাদনগর থানা চত্বরে এনে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এ সময় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ও ৪ নম্বর আসামি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মব তৈরি করে থানা চত্বরে ভাঙচুর চালান। তাঁরা স্থানীয় সাধারণ জনতাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী মামলাটিকে সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি ঘটনার ভিডিও আছে। এ ঘটনায় মিথ্যা গল্প সাজানোর সুযোগ নেই। পরিবহন চাঁদাবাজ ও থানায় হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। তাঁরাই ওই দিন তাঁদের ওপর হামলা করেছিল। এরপর আসামিকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় হামলা করে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফ ইবনে আলম প্রথম আলোকে বলেন, যিনি মিথ্যা মামলাটি করেছেন, তিনিও থানায় হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি। কারা ওই দিন রাতে থানায় হামলা করেছেন, সবকিছুর ভিডিও আছে। তাঁদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এদিকে শ্রমিক নেতাসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও থানায় হামলার মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুরাদনগর সদর ও উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার এলাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের ব্যানারে সব ধরনের দোকান ও যান চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করা হয়। দুপুর ১২টার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুনশ্রমিক দলের নেতার মুক্তির দাবিতে মুরাদনগরে ৬ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগ২৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর থ ন কর ম দ র ব এনপ র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে গণপিটুনিতে মা, ছেলে ও মেয়ে নিহত
কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে গণপিটুনিতে একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঙ্গুরা বাজার থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়াইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনিতে নিহতরা হচ্ছেন- রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে রাসেল মিয়া, মেয়ে জোনাকি ও রুমা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। নিহতদের মাদক ব্যবসায়ী দাবি করে স্থানীয়রা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। তদন্তের পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোকসানা আক্তার ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছেন। বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে মুরাদনগর, বাঙ্গরাসহ বিভিন্ন থানায় বহু মামলা রয়েছে। তাই লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।