কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঁদাবাজি ও থানায় ভাঙচুরের ঘটনায় শ্রমিক দলের নেতাকে গ্রেপ্তার ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পর এবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তার শ্রমিক দলের নেতা আবুল কালামের ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হকের আদালতে মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় মুরাদনগর থানার ওসি মো.

জাহিদুর রহমানকে ১ নম্বর এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল হক সিদ্দিকীকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাঁরা ছাড়াও মামলায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা-কর্মী। মামলায় এক নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার আবুল কালামকে। ওই মামলার বাদী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবুল ফয়সালকে ২৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার ইফতারের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা উবায়দুল সিদ্দিকী চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। এ ঘটনার পর পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নেয়। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ।

অভিযুক্ত শ্রমিক দল নেতা আবুল কামাল স্থানীয় সাবেক সাংসদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বৈষম্যবিরোধী নেতা আবু ফয়সালের করা চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের মামলায় প্রধান আসামি। অন্যদিকে থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক মো. আলী আক্কাস বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামি যুবদল নেতা মাসুদ রানা। এ ঘটনায় মাসুদ পলাতক থাকলেও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এদিকে আজ আদালতে করা মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, মামলার ১ নম্বর সাক্ষী (শ্রমিক দল নেতা) একজন অটোরিকশাচালক। তিনি কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কে দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মামলার ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামি (বৈষম্যবিরোধী নেতা-কর্মী) একটি সক্রিয় চাঁদাবাজ চক্র। তাঁরা কোম্পানীগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি করে আসছেন। ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামিরা কিছুদিন ধরে ১ নম্বর আসামির (থানার ওসি) নাম ব্যবহার করে এবং বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ১ নম্বর আসামির ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছিল। ২৪ মার্চ বিকেলে ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামি কোম্পানীগঞ্জ নগরপাড় সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে ১ নম্বর সাক্ষীর কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি চাঁদাবাজির কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। এ সময় ২ নম্বর আসামি ১ নম্বর আসামিকে কল দিলে তাঁর অধীন পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাঁর ভাইকে আটক করে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুনকুমিল্লায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক শ্রমিক দল নেতাকে ছাড়াতে থানায় হামলা, গ্রেপ্তার ৬২৫ মার্চ ২০২৫

আরজিতে আরও বলা হয়, আটকের খবর পেয়ে কিছু লোক নিয়ে থানায় গেলে ওই দিন সন্ধ্যায় ১ নম্বর আসামি তাঁর ভাইকে ছেড়ে দিতে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ওসি সাধারণ জনগণকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ও সরকারবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র দেখাতে অন্য আসামিদের উসকানি দিয়ে মুরাদনগর থানা চত্বরে এনে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এ সময় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ও ৪ নম্বর আসামি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মব তৈরি করে থানা চত্বরে ভাঙচুর চালান। তাঁরা স্থানীয় সাধারণ জনতাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী মামলাটিকে সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি ঘটনার ভিডিও আছে। এ ঘটনায় মিথ্যা গল্প সাজানোর সুযোগ নেই। পরিবহন চাঁদাবাজ ও থানায় হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। তাঁরাই ওই দিন তাঁদের ওপর হামলা করেছিল। এরপর আসামিকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় হামলা করে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফ ইবনে আলম প্রথম আলোকে বলেন, যিনি মিথ্যা মামলাটি করেছেন, তিনিও থানায় হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি। কারা ওই দিন রাতে থানায় হামলা করেছেন, সবকিছুর ভিডিও আছে। তাঁদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এদিকে শ্রমিক নেতাসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও থানায় হামলার মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুরাদনগর সদর ও উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার এলাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের ব্যানারে সব ধরনের দোকান ও যান চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করা হয়। দুপুর ১২টার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়।

আরও পড়ুনশ্রমিক দলের নেতার মুক্তির দাবিতে মুরাদনগরে ৬ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগ২৬ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর থ ন কর ম দ র ব এনপ র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ