দেশের নগরায়ণ ও আধুনিকতার ঢেউয়ে গ্রামবাংলার পুরোনো স্থাপত্য ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছুই তাই জানতে পারছে না। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের ভিড়ে এখনো কোনো রকমে টিকে রয়েছে পরিবেশবান্ধব মাটির কোঠাঘর।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চোখে পড়ে এসব কোঠাঘর। যা এখনো ধারণ করে আছে বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও গ্রামীণ আবেগ।

এক সময় বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে দেখা যেত মাটির দেয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া কোঠাঘর। ধনীদের বাড়িতেই যে এমন মজবুত ও দৃষ্টিনন্দন মাটির ঘর থাকে—এমনই ছিল প্রচলিত ধারণা। বাঁশের ছন, টিনসেড, আধাপাকা থেকে এখন পাকা ভবনের যুগে মানুষ অভ্যস্ত হলেও গ্রামবাংলার পুরোনো সেই নির্মাণশৈলী এখনো বয়ে চলেছে সময়ের স্রোতকে উপেক্ষা করে।

মাটির ঘরগুলো সাধারণত আড়াই থেকে তিন ফুট প্রস্থের দেয়ালে তৈরি করা হয়। দেয়ালের ওপর নানান নকশা, ফুল, ছোট কুঠুরি দিয়ে এগুলোকে করা হয় দৃষ্টিনন্দন। ধানের তুষ, কাঠের তক্তা, সুপারি বা তালগাছের আঁশ মিশিয়ে তৈরি করা হয় মাটির মন্থন। যা ঘরকে করে তোলে আরো টেকসই ও শক্ত।

সরেজমিনে পলাশ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ঘুরে দেখা গেছে, জিনারদী ইউনিয়নে এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ মাটির ঘর রয়েছে। যদিও সেসব ঘরের চারদিকে পাকা বারান্দা দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া যুক্ত হয়েছে। ঘোড়াশাল পৌর এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি মাটির ঘর দেখা যায়। ডাংগা, গজারিয়া ও চরসিন্দুর ইউনিয়নেও এখনো আছে এমন কিছু সংখ্যক ঐতিহ্যবাহী বসতঘর।

রাবান এলাকার বাসিন্দা পরিমল পাল বলেন, “এখন মাটির ঘর থাকলে অনেকেই গরিব বলে। অথচ আগে বলা হতো ধনীদের বাড়িতেই মাটির কোঠাঘর থাকে। মানুষের আয়-রোজগার বেড়েছে, বিদেশে কাজ করে টাকা পাঠাচ্ছে, সবার জীবনযাপনে এসেছে আধুনিকতা। তাই মাটির ঘর দিন দিন কমে যাচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “গরমে মাটির ঘরে ঠান্ডা, শীতে উষ্ণতা- এই স্বস্তি পাকা ঘরে পাওয়া যায় না।”

খাগৈর গ্রামের শিক্ষক নিরঞ্জন দাস বলেন, “মাটির ঘরে থাকা যে আরামের, সেই শান্তি পাকা বিল্ডিংয়ে পাওয়া যায় না। আমরা মাটির মানুষ, তাই মাটিই আমাদের শান্তিতে রাখে।”

ওই এলাকার সুজন দত্ত বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই পরিবেশবান্ধব মাটির কোঠাঘর। যেবাবে হারিয়ে যাচ্ছে তা একসময় যাদুঘরেই দেখা যাবে।”

যখন পুরোনো নির্মাণশৈলী দেশজুড়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, তখন পলাশের এই মাটির কোঠাঘরগুলো এখনো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বাংলার শিকড়, ঐতিহ্য এবং শত বছরের গ্রামীণ স্থাপত্যের সৌন্দর্য। এগুলো সংরক্ষণ করা দরকার।

ঢাকা/হৃদয়/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক ঠ ঘর ম ট র ঘর

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’  

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ও রংপুর-৩ (সদর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু বলেছেন, “বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিশেষ করে মনোনয়ন পাওয়ার পর বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।”

রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর চেম্বার অব কমার্স মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

একটি দল বেহেস্তের টিকিট দেখিয়ে ভোট চাচ্ছে: আমান উল্লাহ

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

সামসুজ্জামান সামু বলেন, “তারা অপপ্রচার করছে, আমি নাকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সম্পূর্ণ অসত্য। বিষয়টি স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরতেই আজকের এই মতবিনিময়।”

তিনি আরো বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই অপপ্রচারের সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নয়। যারা এ সব করছে, তারা বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে। ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় এসব অপপ্রচার।”

সামু বলেন, “আমি রংপুরে ৫০ বছর ধরে বসবাস করছি। রংপুরের মানুষ, আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ব্যবসায়ী সবাই জানে আমি কী করি? আমি যদি নিজেকে খুব সৎ বলি বা খুব খারাপ বলি, কেউ তা সরাসরি বিশ্বাস করবে না। মানুষ আমার কাজ, আচরণ ও চরিত্র দেখে আমাকে বিচার করবে।”

তিনি বলেন, “আমি কোনো ভীতু বা দুর্বল মানুষ নই। দলের কারো ভিন্নমত থাকতেই পারে, তা ভালোও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দলের কেউ আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না, যদি না তা দল ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যায়।”

সামু বলেন, ‘‘দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর রংপুর-৩ আসনের যে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, তাদের সবার সঙ্গে আমি দেখা করেছি। সবাই একসঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে রংপুর-৩ আসনের সকল নেতাকর্মী ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবে।’’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর-৩ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সুলতান আলম বুলবুল, জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, মহানগর বিএনপির সদস্য সাবেক কাউন্সিলর মকবুল হোসেন, শাহিনুল ইসলাম শাহীন, ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান তুহিনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। 

ঢাকা/আমিরুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ