সিলেটের প্রতিটি ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন হকাররা। ফুটপাত ছাপিয়ে তাদের দখলদারিত্ব এবার চলে গেছে মূল সড়কেও। বৈষম্যবিরোধী হকার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এবার নিজেরাই ‘সিস্টেম ম্যানেজ’ করছেন। কয়েক হকারের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
হকারদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো দলীয় নেতা বা ভায়া নয়। এবার নিজেরাই সামাল দিচ্ছেন পুলিশ, সিটি করপোরেশনসহ সব দপ্তর। নগর ও প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় থাকা দায়িত্বশীলদের ম্যানেজ করার প্রত্যক্ষ বার্তা দিয়েছেন তারা। সে অনুযায়ী ফুটপাত দখলে নিয়েছেন তারা। এদিকে হকাররা ফুটপাত দখল করায় ঈদে নগরীতে যানজট বেড়েছে কয়েক গুণ। যদিও প্রশাসন বলছে, তাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে লালদীঘিরপাড়ে সিসিকের মালিকানাধীন জরাজীর্ণ মার্কেট ভেঙে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। নগরজুড়ে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরভবন লাগোয়া ওই মাঠে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। পরে এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সিলেট মেট্রোপলিন পুলিশ (এসএমপি)। প্রাথমিকভাবে লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৭০ হকারকে পুনর্বাসন করা হয় সেখানে।
প্রত্যেক হকারের জন্য ৭ ফুট/৩ ফুট জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে এই স্থানে। সিসিকের পক্ষ থেকে বাঁশ ও টিন দিয়ে অস্থায়ী মার্কেটও নির্মাণ করে দেওয়া হয়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে মাঠে মাছ ও শুঁটকি, সবজি, তৈজসপত্র এবং বিবিধ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পৃথক লেন করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া নগরীর প্রতিটি ফুটপাতে ‘মানুষের চলাচলের জন্য, হকারদের বসা নিষেধ’ লেখা সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। আরিফুল হক মেয়র থাকাকালে ফুটপাত তদারকি করতেন। ফুটপাতে হকার দেখামাত্র নিজেই অভিযান চালাতেন। কোনো কোনো সময় তাঁর গাড়ি দেখে হকারদের দৌড়ও দিতে দেখা গেছে।
২০২৩ সালে আনোয়ারুজ্জজামান চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হলে তিনিও হকারদের পুনর্বাসন এবং ফুটপাত মুক্ত রাখার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভেস্তে যায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ। সিসিক নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে এখন আর সেভাবে বসেন না হকাররা। উল্টো নগরীর ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বেশ কিছু অংশ দখল করে পসরা সাজিয়ে রেখেছেন তারা।
সাধারণ পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হকারদের কারণে ফুটপাত দিয়ে যেমন চলাচল দায়; ঠিক তেমনি সড়কেও চলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঈদে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। এ জন্য হকার নেতারা একে অপরকে দোষারোপও করছেন। কেউ কেউ বলছেন, আগে ছিল একদল এখন এসেছে আরেক দল। সবার একটাই চিন্তা, নিজের আখের ঘোছানো। এ কারণে সিলেটে ফুটপাতের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। আর এটি সমাধান না হওয়ায় ব্যবসায়ী আর ফুটপাতের ভাসমান হকাররা দিন দিন মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছেন, যা কোনো পক্ষের জন্য মঙ্গল হবে না। শিগগির এর সমাধান না হলে হকার আর ব্যসায়ীদের মধ্যে বড় ধরনের অনাকঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন রুবেল বলেন, লালদীঘিরপাড় মাঠে হকারদের অস্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে পদে পদে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নিরীহ হকাররা। মাঠে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা না থাকায় বৈষম্যের শিকার হন হকাররা। যতবার তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে, ততবারই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা হারিয়ে রাস্তায় বসেছে। সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা ভুলেও মাঠ পরিদর্শনে যাননি। কখনও গেলে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে চলে আসেন।
হকারদের একাংশের ভাষ্য, নিরীহ অসহায় হকারদের কোনো খবর নেননি কেউ। কোনো দাবি মানা হয়নি তাদের। তারা সব সময় বলে আসছিলেন, লালদীঘিরপাড়ের মার্কেটের সামনের অংশে থাকা মাছ ও সবজির বাজার যেন ভেতরে নেওয়া হয়। সেটি করা হয়নি। চারটি রাস্তা করে দেওয়ার কথা বলা হলেও, সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। তারা সুন্দর একটি পরিবেশে ব্যবসা করতে চান। পুলিশ আর সিটির টানাটানি থেকেও মুক্তি চান হকাররা।
এদিকে হকার নেতারা সব ধরনের বৈষম্য দূর করে নিরীহ হকারদের ব্যবসা করার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, ফুটপাতে এখন আর কাউকে চাঁদা দেন না তারা। হকার সমিতির এক নেতা সমকালকে বলেন, সদ্য অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে হকারদের লালদীঘিতে নিয়ে যান। হালকা মাটি ভরাট ও একটি বাথরুম তৈরি ছাড়া তিনিও আর কোনো উন্নয়ন করেননি। অথচ মাটি ভরাট ও দোকান নির্মাণের নামে হকারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়েছে। এই মাঠ নিয়ে বিভক্তি আছে। এক পক্ষ চায় সবজি ও মাছের আড়ত পেছনে নিতে। আরেক পক্ষ চায় সামনে। তাদের দলাদলির কারণে মাঠের কাজ হচ্ছে না। আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রশাসন।
এ ব্যাপারে হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সচিব নিয়াজ মো.
নেওয়া হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ফুটপাত নিয়ে নগরবাসী সমস্যায় রয়েছে। অভিযান চালানো হয়েছে বেশ কয়েকবার। তার পরও তারা ঘুরেফিরে ফুটপাতে চলে আসে। তাদের নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে না পৌঁছালে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টপ ত ফ টপ ত দ র ব যবস ব যবস য় ন হক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক
গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।
জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’
অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।
জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া