রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর হয়ে ওঠে পরিবার, বন্ধু ও সম্প্রদায়ের মিলনমেলা। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিনটি উদযাপিত হয় নানা রীতি, পোশাক ও রান্নার স্বাদে। প্রতিটি সংস্কৃতিতে ঈদের মূল উপাদান হলো– আনন্দ, ঐক্য ও উদারতা। লিখেছেন শাহেরীন আরাফাত
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে। এখানকার মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন দেশের অভিবাসী নিয়ে গঠিত– বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এই বৈশ্বিক মিশেল ঈদকে করে তোলে এক আন্তঃসাংস্কৃতিক উৎসব। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, হিউস্টনের মতো বড় শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় মাঠ বা কনভেনশন সেন্টারে ঈদের নামাজের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গণে বা কমিউনিটি সেন্টারে সম্মিলিত ভোজ আয়োজিত হয়। এসব খাবারের মধ্যে থাকে বিরিয়ানি, ম্যান্ডি, শরমা, সমুচার পাশাপাশি আমেরিকান ফিউশন ডিশ। যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ সরকারি ছুটির দিন নয়, তাই অনেকেই ছুটির জন্য আবেদন করেন বা বিকেলে উদযাপন করেন।
রাশিয়া
আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটিতে মুসলিম জনগোষ্ঠী জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম। রাশিয়ার কয়েকটি প্রদেশে মুসলিমের সংখ্যা বেশি। এসব প্রদেশে ঈদের দিনটি ছুটি থাকে। চেচনিয়া ও দাগেস্তান প্রদেশে ঈদের ছুটি তিন দিন। চেচনিয়ায় ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই বাড়িঘর একেবারে ঝকঝকে তকতকে করে ফেলা হয়। চাঁদ রাতে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি হয় মিষ্টান্ন আর স্ন্যাকস। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, সময় কাটানো ছাড়াও ঈদের বিশেষ খাবার হিসেবে গরুর মাংসের রয়েছে আলাদা কদর। এ দিনে অনেক জায়গায় ‘মানতি’ নামের এক ধরনের খাবার বানানো হয়। আটার রুটির ভেতর ভেড়া বা গরুর মাংসের কিমার পুর দিয়ে ভাপানো হয়। পরে পরিবেশন করা হয় মাখন এবং মেয়নেস দিয়ে। এ খাবার খুবই জনপ্রিয়। ঈদের দিন মেয়েরা উজ্জ্বল পোশাক পরেন।
চীন
দেশটিতে মুসলিমের সংখ্যা বেশি জিনজিয়ান ও নিংজিয়া প্রদেশে। ঈদ উপলক্ষে সেখানে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য প্রদেশেও ঈদের দিনটি সরকারি ছুটি থাকে। এ দিনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সরকারিভাবে ভেড়ার মাংস সরবরাহ করা হয়। ঈদের দিনে আটা ও ময়দা দিয়ে প্রস্তুত ‘জিয়াং’ নামের এক ধরনের বিশেষ খাবার খুবই জনপ্রিয়। স্যুপ অথবা ভাত দিয়ে এটি খাওয়া হয়। ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদে।
তুরস্ক
সাংস্কৃতিক প্রাচুর্য ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ তুরস্কে জমকালো উপায়ে ঈদ উদযাপন হয়ে থাকে। ঈদের দিনকে তুর্কিরা ‘রামাদান বেরামি’ বা রামাদান উৎসব ও ‘সেকার বেরামি’ বা মিষ্টির উৎসব বলে আখ্যায়িত করেন। বাকলাভা ও হালভার মতো মিষ্টান্ন উৎসবে বিশেষ আমেজ তৈরি করে। শিশুরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। তুরস্কে ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হলো– সূর্য, বালি ও সমুদ্র। ৯৮ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে ঈদের ছুটিতে পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করে। প্রথম দিন পরিবারের সঙ্গে কাটানোর পর, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন অনেকেই সমুদ্রের নীল জলরাশির পাশে অবকাশ যাপন করেন। সৈকতে মাছ ধরা, সাঁতার কাটা এবং প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডা– এই ঈদ হয়ে ওঠে এক বিশ্রামের উৎসব!
ইন্দোনেশিয়া
বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত দুই ঈদে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। ইন্দোনেশিয়াতেও একই অবস্থা দেখা যায়। ইন্দোনেশীয় ‘মুদিক’ শব্দটির বাংলা অর্থ ‘বাড়ি যাচ্ছি’। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের দেশটিতে প্রায় ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করেন। ঈদের দিনকে ইন্দোনেশিয়ায় বলা হয় ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতরি’। ঈদের দিনে স্থানীয়রা বিগত বছরের কৃতকর্মের জন্য আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চান। বিশেষ এ দিনটিতে নারীরা পরেন ‘কেবায়া কুরঙ্গ’ আর পুরুষরা ‘বাজু কোকো’; যা দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। ঈদের দিন বিশেষ খাবার হিসেবে তারা কেতুপাত, দোদোল, লেমাংসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রান্না করে থাকে।
ইরান
ইরানে ঈদুল ফিতর অনেকটা নীরবেই উদযাপিত হয়। শিয়া অধ্যুষিত দেশটিতে ঈদের প্রধান জামাত পড়ান তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। দুই থেকে তিন দিন ছুটি থাকে ঈদের সময়। প্রতিটি বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে ঈদ উদযাপন হয়। অনেক ধনী ব্যক্তি ঈদের দিনে গরু বা ভেড়ার মাংস গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে থাকেন। ইরানে একটি জনপ্রিয় প্রবাদ আছে– ঈদ শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার উৎসব। এদিন ইরানিদের টেবিলে থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবার– সাবজি পোলো বা মাহি, রেশতে পোলো, শোল-এ জারদ, গাজ ও সোহান।
সৌদি আরব
নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে ঈদ উদযাপন শুরু হয়। বড় মাঠ বা মসজিদে জমায়েতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। ঈদের দিন পুরুষরা ‘কান্দর’ নামের সাদা পোশাক পরিধান করেন। মাথায় দেন ‘গাহফিহ’ নামের টুপি। নারীরা এ দিনে ‘থাউব’ নামের বিশেষ পোশাক পরে থাকেন। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি পরিদর্শন এবং শিশু ও বয়স্কদের জন্য উপহার দেওয়া সৌদি ঐতিহ্যের অংশ। ঈদের দিন সৌদি মুসলিমরা বাজার থেকে বেশি পরিমাণে চাল কিনে আনেন। তা বাড়ির প্রবেশ দরজার বাইরে রেখে দেন। যাতে অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষ তা নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে পারেন। সৌদি আরবে বাজপাখির খেলা, উটের দৌড় ও লোকনৃত্য ঈদের বিশেষ আকর্ষণ।
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডে ঈদ উদযাপন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অনন্য। গ্রীষ্মে সূর্য অস্ত যায় মধ্যরাতের পর, ভোর হয় মাত্র এর দুই ঘণ্টা পর! তার মানে এ নয় যে, আইসল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানরা প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা রোজা রাখেন। ইসলামী নির্দেশনা অনুযায়ী, তারা নিকটতম কোনো দেশ বা অন্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সময় মেনে রোজা রাখেন। আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের পর মুসলিমরা একত্র হন ইন্দোনেশিয়ান, মিসরীয় ও ইরিত্রিয়ান খাবারের আন্তর্জাতিক ফিউশন ভোজে। শিশুরা নতুন জামা পরে উপহার বিনিময় করে এই সুবিশাল প্রকৃতির কোলে।
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ঈদুল ফিতরের উৎসব শুরু হয় সকালের নামাজের মধ্য দিয়ে। তারপরে ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাই অ্যানুয়াল ঈদ ডে’। সেখানে বিভিন্ন আয়োজন দেখতে জড়ো হয় মানুষ। বিভিন্ন কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। এতে মুসলিম-অমুসলিম সবাই যোগ দেন। বসে হরেক রকমের খাবারের দোকান। সবাই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে দিনটিতে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
উজবেকিস্তান
মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানেও ঈদুল ফিতর অন্যতম এক আনন্দের দিন। স্থানীয়দের কাছে দিনটি পরিচিত ‘রুজা হায়িত’ নামে। দেশটিতে তিন দিনব্যাপী ছুটি নিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়। ঈদের আগের দিনটিকে তারা বলে আরাফা। এই দিনে প্রায় প্রতিটি উজবেক পরিবারে ঐতিহ্যবাহী প্যাস্ট্রি কুশ টিল, বুগিরসক; অভিজাত প্যাস্ট্রি ওরামা, চাক-চাক ইত্যাদি খাবার তৈরি করা হয়। রাতে ঘরে ঘরে উজবেক প্লভ রান্না হয়। এটি বিরিয়ানির মতো খাবার হলেও অঞ্চলভেদে রান্নায় অনেক বৈচিত্র্য থাকে।
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ২২ কোটি। এর মধ্যে অর্ধেকই মুসলিম। তাই ঈদ বেশ ঘটা করেই উদযাপন করা হয় নাইজেরিয়ায়। দেশটির অধিকাংশ মুসলমান থাকেন উত্তর প্রান্তে, সেখানে রোজার ঈদের স্থানীয় নাম আস সাল্লাহ, যার অর্থ সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে নতুন পোশাক পরে সব বয়সী মানুষ ঈদের সকালে নামাজ পড়তে যান। স্থানীয় ভাষায় এটি ‘দুরবার’ নামে পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে সুয়া, জল্লফ রাইস ও মইন মইন ঈদের বিশেষ খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।
তিউনিশিয়া
মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ঈদ শুরু হয়ে যায় চাঁদরাত থেকেই। সেখানে রমজান মাসজুড়ে অনেক রাত পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। চাঁদরাতে খাবার স্টল, দোকানপাট খোলা থাকে ফজর পর্যন্ত। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাতভর ঘুরে বেড়ায়। তিউনিশিয়ান মুসলিমদের পছন্দের খাবার হলো খেজুর আর অলিভ অয়েলে তৈরি মিষ্টি খাবার আসসিদা। ঈদের নামাজের পর সেটি না হলে যেন চলেই না। আরও থাকে বাকলাভা, কাক ভারকা, ঘ্রাইবা, ম্লাবেস, মাকরৌদ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী পেস্ট্রি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ উৎসব ঈদ র ন ম জ ইন দ ন শ য় প শ ক পর ঈদ র দ ন জনপ র য় র উৎসব র জন য পর ব র অন ষ ঠ ন কর ন মসজ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।