Risingbd:
2025-05-01@03:05:00 GMT

সদকাতুল ফিতরের বিধান ও কল্যাণ

Published: 29th, March 2025 GMT

সদকাতুল ফিতরের বিধান ও কল্যাণ

পবিত্র রমজান মুসলমানের জীবনে একটি অনন্য সময়। এ সময় মুসলিমরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। তারা দীর্ঘ এক মাস আল্লাহপ্রেমের সাধনা ও সকল প্রকার পাপ থেকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। রমজান মাসে নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর ইবাদত ও সাধনা সম্পন্ন করার চষ্টো করে। তারপরও মানবীয় দুর্বলতা, পারিপার্শ্বিক কারণ ও জীবনের নানা ব্যস্ততার কারণে রোজাদারের নানা ধরনে ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়। সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সে ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতিবিধান হয়। 

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.

) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদকাতুল ফিতর রোজাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাজের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসাবে গণ্য। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

আলোচ্য হাদিস থেকে সদকাতুল ফিতরের আরেকটি উদ্দেশ্য জানা গেল, তা হলো সমাজের অসহায় ও দরিদ্র্য মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা। মূলত ঈদুল ফিতর মুসলিম জাতির ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানরা পরস্পরের ভাই। একজন ভাই তার অপর ভাইকে রেখে আনন্দ-উৎসব করতে পারে না। এজন্য ইসলাম সদকাতুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন যেন দরিদ্র্য মানুষও ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর ঈদের আনন্দে তাদের শরিক করতেই ঈদের নামাজের আগেই তা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ফকিহ আলেমরা বলেন, সদকাতুল ফিতর রমজানের শেষ দিকে আদায় করা উচিত। কেননা এতে গরিব মানুষদের ঈদের প্রয়োজন পূরণের সহায়তা হবে। (আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৫৫)

আরো পড়ুন:

রমজানে কী পেলাম, কী হারালাম

মহিমান্বিত কদরের রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা 

সদকাতুল ফিতরের বিধান

সাদকাতুল ফিতর এমন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব যার হাতে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতীত অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে। জাকাত ফরজ হয় না এমন ব্যক্তির ওপর সদকাতুল ফিতর ফরজ হতে পারে। কেননা জাকাত ও সদকাতুল ফিতরের নিসাবের মধ্যে পার্থক্য আছে। জাকাত শুধু সোনা-রুপা টাকা-পয়সা এবং ব্যবসা পণ্যের ওপরই ফরজ হয়। আর সদকাতুল ফিতর প্রয়োজন অতিরিক্ত সব ধরনের সম্পদের ওপর ওয়াজিব হয়।

যে যার পক্ষ থেকে আদায় করবে 

ব্যক্তি সদকাতুল ফিতর নিজের পক্ষ থেকে এবং তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে আদায় করবে। স্বামীর জন্য স্ত্রীর এবং প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ বাবার সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে নিজেরাই আদায় করবে। তবে স্বামী ও পিতা আদায় করে দিলে আদায় হবে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫১২; ফাতহুল কাদির : ২/২৮১) 

এমনকি পবিত্র রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশক। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৯২)

প্রবাসী ব্যক্তি যদি নিজে সদকাতুল ফিতর আদায় করেন। তবে তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের নির্ধারিত খাদ্যমূল্য অনুসারে আদায় করবেন। তিনি যদি স্ত্রী ও সন্তানের সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে তিনি নিজের অবস্থানস্থলের খাদ্যের মূল্য অনুযায়ী আদায় করবেন। তবে কেউ যদি তার পক্ষ থেকে দেশে সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে নিজ দেশের নির্ধারিত খাদ্যের মূল্য অনুসারে সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৫৫)

যাদের দেব

জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত যে কোনো গরিব মুসলমানকে সাদকাতুল ফিতর দেওয়া যায়। তবে অন্য সকল দানের মতো আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম। শর্ত হলো তারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হবেন। ভাই-বোন, চাচা-ভাতিজা, মামা, খালা, ফুফুদের মতো নিকটাত্মীয়দেরও সদকাতুল ফিতর দেওয়া যায়। তবে নিজ পিতামাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ, তেমনি নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধীনদেরও সদকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে না।

সদকাতুল ফিতরের হিসাব নির্ধারণ

হাদিসে সদকাতুল ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে দুটি পরিমাপ ও চারটি খাদ্যপণ্যের নাম এসেছে। পরিমাপ হলো ‘এক সা’ ও ‘আধা সা’। ‘সা’ প্রাচীন আরবের প্রচলিত একটি পরিমাপ। যা আধুনিক পরিমাপ অনুসারে তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। আর চারটি খাদ্যদ্রব্য হলো, জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (সহিহ বুখারি)

প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, চার ধরনের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায়ের উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন নিজের সামর্থানুসারে যে কোনো পণ্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সদকাতুল ফিতর প্রদানকারী দরিদ্র্য মানুষের প্রয়োজনকে সামনে রেখে মূল্য নির্ধারণ করবে। 

চলতি বছর (১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) বাংলাদেশ সরকারের সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির পক্ষ থেকে জানা হয়েছে, বাংলাদেশে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনম্নি ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা। গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১১০ টাকা দান করতে হবে; ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম যবের বাজারমূল্য বিবেচনায় ৫৩০ টাকা, খেজুরের বাজার মূল্যে ২ হাজার ৩১০ টাকা, কিশমিশের বাজার মূল্যে ১ হাজার ৯৮০ টাকা ও পনিরের বাজার মূল্য বিবেচনায় ২ হাজার ৮০৫ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আল্লাহ সবার রোজাকে ত্রুটিমুক্ত করুন। আমিন। 

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
 

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন ম সলম ন পর ম প পর ম ণ গ রহণ রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ