Risingbd:
2025-06-16@03:05:49 GMT

সদকাতুল ফিতরের বিধান ও কল্যাণ

Published: 29th, March 2025 GMT

সদকাতুল ফিতরের বিধান ও কল্যাণ

পবিত্র রমজান মুসলমানের জীবনে একটি অনন্য সময়। এ সময় মুসলিমরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। তারা দীর্ঘ এক মাস আল্লাহপ্রেমের সাধনা ও সকল প্রকার পাপ থেকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। রমজান মাসে নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর ইবাদত ও সাধনা সম্পন্ন করার চষ্টো করে। তারপরও মানবীয় দুর্বলতা, পারিপার্শ্বিক কারণ ও জীবনের নানা ব্যস্ততার কারণে রোজাদারের নানা ধরনে ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়। সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সে ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতিবিধান হয়। 

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.

) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদকাতুল ফিতর রোজাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাজের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসাবে গণ্য। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

আলোচ্য হাদিস থেকে সদকাতুল ফিতরের আরেকটি উদ্দেশ্য জানা গেল, তা হলো সমাজের অসহায় ও দরিদ্র্য মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা। মূলত ঈদুল ফিতর মুসলিম জাতির ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানরা পরস্পরের ভাই। একজন ভাই তার অপর ভাইকে রেখে আনন্দ-উৎসব করতে পারে না। এজন্য ইসলাম সদকাতুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন যেন দরিদ্র্য মানুষও ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর ঈদের আনন্দে তাদের শরিক করতেই ঈদের নামাজের আগেই তা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ফকিহ আলেমরা বলেন, সদকাতুল ফিতর রমজানের শেষ দিকে আদায় করা উচিত। কেননা এতে গরিব মানুষদের ঈদের প্রয়োজন পূরণের সহায়তা হবে। (আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৫৫)

আরো পড়ুন:

রমজানে কী পেলাম, কী হারালাম

মহিমান্বিত কদরের রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা 

সদকাতুল ফিতরের বিধান

সাদকাতুল ফিতর এমন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব যার হাতে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্যতীত অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে। জাকাত ফরজ হয় না এমন ব্যক্তির ওপর সদকাতুল ফিতর ফরজ হতে পারে। কেননা জাকাত ও সদকাতুল ফিতরের নিসাবের মধ্যে পার্থক্য আছে। জাকাত শুধু সোনা-রুপা টাকা-পয়সা এবং ব্যবসা পণ্যের ওপরই ফরজ হয়। আর সদকাতুল ফিতর প্রয়োজন অতিরিক্ত সব ধরনের সম্পদের ওপর ওয়াজিব হয়।

যে যার পক্ষ থেকে আদায় করবে 

ব্যক্তি সদকাতুল ফিতর নিজের পক্ষ থেকে এবং তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে আদায় করবে। স্বামীর জন্য স্ত্রীর এবং প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ বাবার সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে নিজেরাই আদায় করবে। তবে স্বামী ও পিতা আদায় করে দিলে আদায় হবে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫১২; ফাতহুল কাদির : ২/২৮১) 

এমনকি পবিত্র রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশক। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৯২)

প্রবাসী ব্যক্তি যদি নিজে সদকাতুল ফিতর আদায় করেন। তবে তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের নির্ধারিত খাদ্যমূল্য অনুসারে আদায় করবেন। তিনি যদি স্ত্রী ও সন্তানের সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে তিনি নিজের অবস্থানস্থলের খাদ্যের মূল্য অনুযায়ী আদায় করবেন। তবে কেউ যদি তার পক্ষ থেকে দেশে সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে নিজ দেশের নির্ধারিত খাদ্যের মূল্য অনুসারে সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৫৫)

যাদের দেব

জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত যে কোনো গরিব মুসলমানকে সাদকাতুল ফিতর দেওয়া যায়। তবে অন্য সকল দানের মতো আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম। শর্ত হলো তারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হবেন। ভাই-বোন, চাচা-ভাতিজা, মামা, খালা, ফুফুদের মতো নিকটাত্মীয়দেরও সদকাতুল ফিতর দেওয়া যায়। তবে নিজ পিতামাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ, তেমনি নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধীনদেরও সদকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে না।

সদকাতুল ফিতরের হিসাব নির্ধারণ

হাদিসে সদকাতুল ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে দুটি পরিমাপ ও চারটি খাদ্যপণ্যের নাম এসেছে। পরিমাপ হলো ‘এক সা’ ও ‘আধা সা’। ‘সা’ প্রাচীন আরবের প্রচলিত একটি পরিমাপ। যা আধুনিক পরিমাপ অনুসারে তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। আর চারটি খাদ্যদ্রব্য হলো, জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (সহিহ বুখারি)

প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, চার ধরনের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায়ের উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন নিজের সামর্থানুসারে যে কোনো পণ্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সদকাতুল ফিতর প্রদানকারী দরিদ্র্য মানুষের প্রয়োজনকে সামনে রেখে মূল্য নির্ধারণ করবে। 

চলতি বছর (১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) বাংলাদেশ সরকারের সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির পক্ষ থেকে জানা হয়েছে, বাংলাদেশে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনম্নি ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা। গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১১০ টাকা দান করতে হবে; ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম যবের বাজারমূল্য বিবেচনায় ৫৩০ টাকা, খেজুরের বাজার মূল্যে ২ হাজার ৩১০ টাকা, কিশমিশের বাজার মূল্যে ১ হাজার ৯৮০ টাকা ও পনিরের বাজার মূল্য বিবেচনায় ২ হাজার ৮০৫ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আল্লাহ সবার রোজাকে ত্রুটিমুক্ত করুন। আমিন। 

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
 

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন ম সলম ন পর ম প পর ম ণ গ রহণ রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ