সাদা বলেও স্টোকসকে অধিনায়ক করতে ইংল্যান্ডকে ‘অপ্রথাগত’ পরামর্শ মরগানের
Published: 29th, March 2025 GMT
সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের পরবর্তী অধিনায়ক কে হবেন, এই নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। সম্ভাবনার বিচারে অবশ্য এগিয়ে হ্যারি ব্রুক। তবে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক এউইন মরগান ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) একটু অপ্রথাগত পরামর্শ দিয়েছেন। মরগানের পরামর্শ, টেস্ট দলের অধিনায়ক বেন স্টোকসকে সাদা বলে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক করার। তবে স্টোকসকে শুধু বড় কোনো টুর্নামেন্টেই অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে অগুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে স্টোকসের ‘সহকারী’কে অধিনায়ক করার পরামর্শ দিয়েছেন মরগান।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম রাউন্ড থেকেই ইংল্যান্ডের বিদায়ের পর পদত্যাগ করেছেন ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক জস বাটলার। ইংল্যান্ডকে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক মরগানের পরামর্শ, স্টোকসকে মূল অধিনায়ক করে তাঁর সহকারীকে অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তোলার।
বেন (স্টোকস) আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকবে। বড় টুর্নামেন্টের আগে সে প্রস্তুতি নেবে, সেখানে অধিনায়কত্ব করবে, এরপর বাইরে চলে যাবে। এরপর আরেকটি বড় টুর্নামেন্ট না আসা পর্যন্ত শুধু টেস্ট ক্রিকেট নিয়েই ভাববে।এউইন মরগান, ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়কইসিবির ছেলেদের ক্রিকেট ডিরেক্টর রব কি এ মাসের শুরুর দিকে স্টোকসকে অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলেছিলেন। কি বলেছিলেন ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক হিসেবে স্টোকসকে বিবেচনা না করাটা ‘মূর্খতা’ হবে। ৩৩ বছর বয়সী স্টোকস ২০২২ সাল থেকেই ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়ক। তবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরে আর সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেননি স্টোকস।
হ্যারি ব্রুকের সম্ভাবনা আছে ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক হওয়ার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট কসক
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’