মিয়ানমারে বিপর্যয়ের ওপর আরেক বিপর্যয়
Published: 29th, March 2025 GMT
শুক্রবার যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের কেন্দ্রস্থলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এতে বহু লোক নিহত হয় এবং দেশটির সামরিক জান্তা তৎক্ষণাৎ আন্তর্জাতিক মহলে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। ভূমিকম্পটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল ও বহুমুখী অঞ্চলজুড়ে। এতে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধকবলিত গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ কম্পন অনুভব করা গেছে, যা যানজটপূর্ণ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের চকচকে সুউচ্চ ভবন পর্যন্ত স্পর্শ করেছে। এমনকি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরবর্তী এলাকা ও পাহাড়বেষ্টিত ইউনান প্রদেশেও ঝাঁকুনি টের পাওয়া গেছে। চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধের জন্য বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন মিয়ানমারের জান্তা সরকারপ্রধান মিন অং হ্লাইং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। আর ‘সাহায্য করতে ইচ্ছুক যে কোনো সংগঠন ও জাতিকে দেশটির অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে এগিয়ে এসে লোকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য খোলাখুলি আহ্বান জানিয়েছেন।’
মিয়ানমারের কিছু অংশে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাহায্যের জন্য মিন অং হ্লাইংয়ের অপ্রত্যাশিত আহ্বান মূলত দেশটিতে ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের মাত্রা তুলে ধরে। তার জান্তা বাহিনী দেশটিকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছে। রক্তাক্ত ও অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বংসী সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে চার বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে মিয়ানমার বিপর্যস্ত। এতে জান্তা বাহিনী দেশব্যাপী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট সংঘাতে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশটির যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, যার কর্তৃত্ব এখন বিদ্রোহী নৃ-গোষ্ঠী ও মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে। এতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এগুলো সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে এনইউজি বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের অধীনে পিডিএফ বা পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স। সুতরাং আপনি চলমান ঘটনার পুরো চিত্র বুঝতে পারবেন না।
ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে প্রতিবেদন এখনও পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। পরিস্থিতির পুরো চিত্র সামনে আসতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির পরিচালক অবস্থা ‘ভয়াবহ’ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন। মোহাম্মদ রিয়াস এক বিবৃতিতে বলেছেন, যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত ও যাতায়াত ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে সীমিত পরিমাণে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। উদ্ধার কমিটির প্রধান আরও বলেন, ‘অবকাঠামো ও বাড়িঘরের ধ্বংস, জীবনহানি ও ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর আহতদের ঘটনা খাটো করে দেখা উচিত নয়।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহায়তাদানকারী দলগুলোর অবাধ প্রবেশের জন্য ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য ভূমিকম্পের ‘চেয়ে খারাপ ঘটনা আর কিছু হতে পারে না’। মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু বলেন, ভূমিকম্পটি একটি বিপর্যয়ের ওপর আরেকটি বিপর্যয়। ২০ মিলিয়নের বেশি লোকের ইতোমধ্যে মানবিক সহায়তা দরকার হয়ে পড়েছে এবং প্রায় ৩৫ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে ভিটেমাটি হারিয়েছে। এ সময় অ্যান্ড্রু সিএনএনকে বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনে উদ্ধার অভিযান শুরু হলে কী ঘটবে তা ভাবলে আমি শিউরে উঠি।’
মান্দালয়ের স্থানীয় সময় ১২টা ৫০ মিনিটে ভূমিকম্পটি ঘটে। রাজতন্ত্রকালে মান্দালয় ছিল রাজধানী। এখানে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন লোক বাস করে এবং বহু ঐতিহাসিক মন্দির, প্রাসাদ ও ভবন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভের মতে, ভূমিকম্পের পরপরই কয়েকটি ধাক্কা অনুভূত হয়, যার মধ্যে একটি ছিল ৬ দশমিক ৪ মাত্রার। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মধ্য সেগাইং অঞ্চল, যা গৃহযুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত। জান্তা বাহিনীর সঙ্গে মিলিশিয়া ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে এবং সবাই চেকপয়েন্টে নজরদারি রেখেছে। এর ফলে কঠিন হয়ে পড়েছে সড়ক কিংবা নদীপথের ভ্রমণ। সেগাইং প্রধানত গ্রামীণ এলাকা, যেখানে বেশির ভাগ বসতভিটা কাঠ ও তালপাতার। জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝে মাঝে সংঘাতের কারণে এ অঞ্চলে যোগাযোগ দুরূহ হয়ে পড়ে।
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে উদ্ধার অভিযান ভিন্ন হতে পারে। এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি হলো মিয়ানমার। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করা ও জনগণের দুর্ভোগ উপেক্ষা করার বহু রেকর্ড রয়েছে। সেই তুলনায় থাইল্যান্ড অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র, যাদের বেশ দক্ষ ও অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মী রয়েছে।
রস অ্যাডকিন, অ্যালক্স স্ট্যামবগ ও কোচ ওলার্ন: সিএনএন থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র গ রস ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।