পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মাংসের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তাই খুচরা বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশি মাংস বিক্রি করে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে। ঢাকা মহানগরে এবার ঈদের প্রথম পাঁচ দিনেই গরু মাংসের বাজার রয়েছে ৩২০ কোটি টাকার মতো।

রাজধানীর মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৬ রমজান থেকে মাংস বিক্রি বেড়েছে। মাংসের এই বাড়তি চাহিদা অব্যাহত থাকে সাধারণত চাঁদরাত পর্যন্ত।

দৈনিক ক্ষুদ্র মাংস প্রস্তুতকরণ ও বিক্রেতা সোসাইটি (দৈক্ষুমাপ্রবিস) বলছে, ঢাকা মহানগরে গরুর মাংস বিক্রির দোকান আছে এক হাজারের মতো। এবার ঈদের আগের পাঁচ দিনে (২৬ থেকে ৩০ মার্চ) গড়ে প্রতিটি দোকানে চারটি করে গরু বিক্রি হতে পারে। প্রতিটি গরুর ওজন গড়ে ২০০ কেজি। প্রতি কেজি মাংস ৮০০ টাকা করে হলে এই পাঁচ দিনে ঢাকা মহানগরে ৩২০ কোটি টাকার মতো গরুর মাংস বিক্রির সম্ভাবনা আছে। তবে তারা ছাগলের মাংস বিক্রির হিসাব দিতে পারেনি।

দৈক্ষুমাপ্রবিসর সাধারণ সম্পাদক মো.

ভুট্টু প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় প্রতিটি দোকানে গড়ে দুটি গরুর মাংস বিক্রি হয়। ঈদুল ফিতরে তা দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়।

ভুট্টু আরও বলেন, ঈদুল আজহায় খুচরা মাংস বিক্রেতাদের তেমন বেচাকেনা হয় না। কারণ, মুসল্লিরা নিজেরা পশু কিনে কোরবানি দেন। আর ঈদুল ফিতরে খুচরা মাংস ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি মাংস বিক্রি করে থাকেন। এরপর বেশি মাংস বিক্রি হয় শবে বরাতে। এবারের ঈদুল ফিতরেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে মাংসের দোকান ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে ক্রেতাদের বেশ ভিড়। দোকানিরাও মাংস বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কারওয়ান বাজারে জাহাঙ্গীর এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার (২৯ মার্চ) তাঁরা ১২টি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেছেন। আর একই দিন প্রায় ৪০টি ছাগলের মাংস বিক্রি করেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন‘শুধু এহানেই ৬৫০ টাকায় গরুর গোস্ত পাবেন’০৩ মার্চ ২০২৫

ঈদে অসংখ্য মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদ্‌যাপন করতে যান। তবু স্থানীয়রা ছাড়াও বহু মানুষ ঈদে ঢাকাতেই থাকেন। রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজারের একটি বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. রিফাত ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী এবার ঢাকায় ঈদ করবেন। তবে ঈদের পরদিন তাঁরা পঞ্চগড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন।

রিফাত ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু ঈদের দিন ঢাকায় থাকবেন, তাই আজ (শনিবার) তিনি দেড় কেজি গরুর মাংস কিনেছেন। পশ্চিম তেজতুরী বাজারের একটি দোকান থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে তিনি এই মাংস কিনেছেন।

দিনে মুরগির চাহিদা বেড়েছে এক হাজার টন

গরু-ছাগলের পাশাপাশি ঈদুল ফিতরে মুরগির চাহিদাও অনেক থাকে। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারে দেশি ও সোনালি মুরগির চাহিদা বেশি। আর স্বল্প আয়ের পরিবারে চাহিদা বেশি থাকে ব্রয়লার মুরগির।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, এবার ঈদুল ফিতরে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টন মুরগির বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে।

বিপিএর সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৫০০ টন মুরগির চাহিদা থাকে, আর সরবরাহ থাকে ৫ হাজার টনের মতো। ঈদুল ফিতরের সময় সেই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫০০ টনের মতো। খামারিরাও ঈদ সামনে রেখে উৎপাদন বাড়িয়েছেন, তাই মুরগির সংকট নেই। তবে উৎপাদন খরচ বেশি থাকায়, বিশেষ করে এক দিনের বাচ্চার দাম এবার বেশি থাকায় ঈদ সামনে রেখে মুরগির দাম বেড়েছে।

আরও পড়ুনকেজিতে ২০০ টাকা ছাড়াল ব্রয়লার মুরগির দাম২৭ মার্চ ২০২৫হিসাব নেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে

ঈদুল ফিতরে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া ও হাঁস-মুরগির মতো গবাদিপশুর কী পরিমাণ চাহিদা ও সরবরাহ রয়েছে, তার হিসাব নেই সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে। অধিদপ্তরটির মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদুল আজহার সময় তাঁরা এসবের চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ করেন। কিন্তু ঈদুল ফিতরের সময় তা করেন না।

দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া ও হাঁস-মুরগি। তবে দেশে প্রতিদিন কী পরিমাণ প্রাণিসম্পদের প্রয়োজন হয়, সেই হিসাবও রাখে না বলে জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কী পরিমাণ প্রাণিসম্পদের চাহিদা থাকে, সে রকম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে ঈদসহ প্রতিদিনের গবাদি পশুপাখির চাহিদা ও সরবরাহের হিসাব রাখা অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুনমুরগির দর চড়া, বেড়েছে মসলারও ২৯ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ভ ব ক সময় ম রগ র চ হ দ প রথম আল ক সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।

ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’

ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।

জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প