পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেড়ার শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বসেছিল ব্যতিক্রমী এক বাজার। বাজারে প্রায় ৮০০ অসহায় ও দরিদ্র মানুষ মাত্র দুই টাকায় ১০ রকমের পণ্য পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এ বাজারের নাম ‘দুই টাকায় আমেজ’।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বেড়া পৌর এলাকার সান্ডিয়ালপাড়া ঈদগাহ মাঠে বাজারের আদলে গড়ে তোলা বিভিন্ন স্টল থেকে দরিদ্রদের মধ্যে বিভিন্ন পদের ঈদ উপহার দেওয়া হয়। প্রতীকী দুই টাকার বিনিময়ে দেওয়া পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, লবণ, সেমাই, সাবানসহ ১০ ধরনের পণ্য।

ঈদসামগ্রী বিতরণের এ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের একটি সংগঠন। তাদের এ আয়োজনে অবশ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তার পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়ন ছিল।

বেলা ১১টায় শুরু হওয়া কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

মোরশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান ফকির, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য আব্দুল বাসেদ খান, জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাজী ইউনুস আলী, বেড়া রিকশা-ভ্যান চালক সমবায় সমিতির সভাপতি ময়েন উদ্দিন খাজা প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘বেড়ার শিক্ষার্থীরা যেভাবে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে, সেভাবে একজনের বিপদে আরেকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের মধ্যে ছিলাম। এখন পরিবর্তন এসেছে। আমাদের দেশের সব অসহায় মানুষের শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থানের ব্যবস্থার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, সান্ডিয়ালপাড়া ঈদগাহ মাঠে বাজারের আদলেই বানানো হয়েছে স্টল। স্টলের টেবিলে থরে থরে সাজানো চাল, ডাল, সেমাই, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, সাবান। সেখানে আসা নারী-পুরুষদের হাতে পর্যায়ক্রমে পণ্য তুলে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পণ্যের দাম দুই টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও কারও কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ। বেড়া পৌর এলাকার শেখপাড়া মহল্লার রেখা খাতুন (৫০) বলেন, ‘ঈদের সামনে এতগুলা জিনিস পায়া খুব আনন্দ হতেছে। অভাবের সংসারে এসব জিনিস পায়া খুব উপকার হলো।’

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের সভাপতি মেহেরাব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মিলে ভালো কিছু করার জন্য টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আমরা এই কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এখন অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমাদের সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি অনেক হৃদয়বান মানুষ সহায়তা করছেন বলেই আমরা এভাবে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি।’

১০ বছর আগে বেড়ার ঐতিহ্যবাহী সরকারি বিপিন বিহারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে গঠন করে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের একটি সংগঠন। তারা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অসহায়দের সহায়তা দেওয়া শুরু করে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তাদের আগ্রহে মুগ্ধ হয়ে অনেক সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তি তহবিল সংগ্রহে এগিয়ে আসেন। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।

‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।

এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ