বিশ্বের প্রথম হ্যাকিংয়ের ঘটনা কবে ঘটেছিল
Published: 1st, April 2025 GMT
এখন হরহামেশাই হ্যাকিংয়ের ঘটনা শোনা যায়। পাসওয়ার্ড চুরি থেকে শুরু করে বিটকয়েন ওয়ালেট হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে। এখন খুব সাধারণ মনে হলেও বিশ্বের প্রথম হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার আগে!
সাধারণভাবে হ্যাকিং বা কোনো সিস্টেমে অনুপ্রবেশের ধারণাটি আধুনিক সাইবার অপরাধ হিসেবে মনে করা হয়। আধুনিক অপরাধ হলেও বিশ্বের প্রথম হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি উনিশ শতকের শুরুতে ঘটেছিল। তখন ইন্টারনেট বা কম্পিউটারেরই অস্তিত্ব ছিল না। বিশ্বে প্রথম হ্যাকিংয়ের ঐতিহাসিক ঘটনাটি ফ্রান্সের টেলিগ্রাফ সিস্টেমে ঘটেছিল ১৮৩৪ সালে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ১৮৩৪ সালে প্রথম পরিচিত হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি ঘটে। তখন ফরাসি প্রতারক ফ্রাঁসোয়া ব্ল্যাংক ও জোসেফ ব্ল্যাংক আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য চ্যাপ টেলিগ্রাফ সিস্টেম ব্যবহার করেন। সেই সময় ফ্রান্সের প্যারিস ও বোর্দোর মধ্যে শেয়ারবাজারের তথ্য পাঠানোর জন্য অপটিক্যাল টেলিগ্রাফের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হতো। সেই সিস্টেম সেমাফোর সিস্টেম নামেও পরিচিত।
১৮ শতকের শেষের দিকে ক্লদ চ্যাপ এই সিস্টেমটি বিভিন্ন বার্তা জানানোর জন্য তৈরি করেন। বিভিন্ন বাহুযুক্ত টাওয়ারের ওপর নির্ভরশীল ছিল এই সিস্টেম। ব্ল্যাংক ভাইয়েরা সেই টেলিগ্রাফ সিস্টেমের ওপর নজর দেন। টেলিগ্রাফ সিস্টেম ব্যবহার করে প্যারিস থেকে বোর্দোয় শেয়ারবাজারের তথ্য পাঠানো সম্পর্কে কৌতূহলী হন তাঁরা। বাজারে অন্যদের চেয়ে দ্রুত তথ্য পেলে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়া যায়। এই ধারণায় তাঁরা সংকেতের মধ্যে গোপন বার্তা ঢোকানোর একটি উপায় তৈরি করেন।
চ্যাপ সিস্টেমে টেলিগ্রাফ অপারেটরদের ব্যক্তিগত বার্তা পাঠানোর সুযোগ ছিল না। ব্ল্যাংক ভাইয়েরা রিলে স্টেশনের মধ্যে একজন অপারেটরকে ঘুষ দিয়ে সরকারি বার্তায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। তাঁরা এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করেন যেখানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে একটি বিশেষ কোড পাঠানো হতো। রিলে পয়েন্টে থাকা কর্মী এই পরিবর্তনগুলো ব্যাখ্যা করে ব্ল্যাংক ভাইদের শেয়ারবাজারের তথ্য আগেই জানিয়ে দিত। সাধারণ মানুষের কয়েক ঘণ্টা আগে শেয়ারের দাম কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা জেনে ব্ল্যাংক ভাইয়েরা শেয়ারে বেশ লাভ পেতে শুরু করেন। তাঁদের এই কাজ দুই বছর কেউ ধরতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে এই ত্রুটির কথা সরকার জেনে যায়। সেই সময় এই ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কোনো আইন না থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করা যায়নি।
১৮৩৪ সালের সেই টেলিগ্রাফ হ্যাক ইতিহাসের প্রথম নথিভুক্ত হ্যাকিংয়ের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। কম্পিউটারের ব্যবহার না থাকলেও অননুমোদিত প্রবেশাধিকার ও তথ্য বিকৃতির কারসাজির জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের নজির সেটাই ছিল প্রথম।
সূত্র: মার্কপ্যাক ডট ওআরজি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম হ য ক র প রথম য় র ঘটন ব যবহ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য: মাহমুদুর রহমান মান্না
‘এরা সংস্কারের কথা বলে, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। অর্থনীতিতে নেই, পুলিশের কোনো সংস্কার হচ্ছে না, শিক্ষায় নেই, কোথাও নেই। তাহলে এই সংস্কারটা কী?’ এ প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে মান্না বলেছেন, ‘টাস্কফোর্স আছে, কিন্তু তার কোনো মূল্য নেই। পুলিশ বা প্রশাসনে কী সংস্কার হচ্ছে, সেটাও জানানো হচ্ছে না। কোনো কমিটি পর্যন্ত নেই। তাই প্রশ্ন জাগে, এই কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য?’
আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন মান্না। ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
আলোচনায় বাজেট নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্য নিরসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। বাজেট না হয়ে এটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে এমন কোনো কথা হয়েছে কি না, যেটা বাইরে বলা যাবে না, সেই প্রশ্ন করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। এরপরও নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মান্না।
নির্বাচন ছাড়া যাওয়ার কোনো পথ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি হঠাৎ কিছু ঘটিয়ে দেয়, সেটা বলা যায় না। কিন্তু আমরা তো জানি, সেই ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নাই। সেই অর্থে মাইনাস নির্বাচন-এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচন ইস্যুতে বরফ জমে ছিল, এখন সেটি গলতে শুরু করেছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, ‘বিএনপি বলেছিল ওই তারিখে নির্বাচন হতে পারবে না। সরকার বলেছিল একমাত্র ওই দল বিরোধিতা করছে। এখন যেভাবে কথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে বরফ গলছে। আমি এটা ইতিবাচক মনে করি। আমি গণতন্ত্র চাই, সেই জন্যই নির্বাচনের ওপর এত জোর দিচ্ছি।’
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ঘাটতি দেখছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর যেখানেই যাই কেউ তো আমাদের ফেরত দিচ্ছে না। সবাই আমাদের ডাকছে আসো, তোমাদের কী লাগে সংস্কারের জন্য, কী করতে হবে, দেশটা বদলাবার জন্য কী করতে হবে, একদম সর্বোচ্চ জায়গা থেকে বলা হয়েছে। অথচ দেখলেন এই পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনবার জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার) কী আচরণ করলেন। উনি ঠিক করেছেন নাকি আমরা কোনো কথাবার্তা না বলে গেছি?’
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে লিখিত বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাসার হাওলাদার প্রমুখ।