পরমদা তো ইমরান হাশমি, দারুণ চুমু খায়: কৌশানী
Published: 2nd, April 2025 GMT
ভারতীয় বাংলা সিনেমার গুণী পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। ২০১২ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘হেমলক সোসাইটি’। আলোচিত এ সিনেমার আদলে সৃজিত নির্মাণ করছেন ‘কিলবিল সোসাইটি’। পূর্বের মতো সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন পরমব্রত চ্যাটার্জি। তবে কোয়েল মল্লিকের পরিবর্তে নেওয়া হয়েছে কৌশানী মুখার্জিকে।
‘কিলবিল সোসাইটি’ সিনেমায় পরমব্রত-কৌশানীর চুম্বন দৃশ্য রয়েছে। প্রথমবার সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করলেন কৌশানী। সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে পরমব্রতকে বলিউডের সিরিয়াল কিসার ইমরান হাশমির সঙ্গে তুলনা করলেন এই অভিনেত্রী।
‘কিলবিল সোসাইটি’ সিনেমায় যুক্ত হওয়ার গল্প জানিয়ে কৌশানী মুখার্জি বলেন, “সৃজিতদা আমাকে প্রথম ফোন করে ডাকেন। জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোর চুমু খেতে অসুবিধা আছে?’ আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, অসুবিধা তো নিশ্চয়ই আছে।’ তারপর সৃজিতদা জানান, সিনেমায় চুমু খাওয়াটা চিত্রনাট্যের জন্য জরুরি। আমি চিত্রনাট্য শুনলাম, শুনে আর না বলার প্রশ্নই ছিল না। কী অসাধারণ গল্প! সৃজিতদার সঙ্গে আমিও সহমত, কিছু জায়গায় গল্পের খাতিরে ওই দৃশ্যটা প্রয়োজনীয়। আর চুমু খাওয়াটাই তো সব নয়। বুঝেছিলাম ওই চরিত্রের নিশ্চয়ই অন্য অনেক কিছু করার আছে, তারপর কথাবার্তা এগিয়ে যায়।”
আরো পড়ুন:
আমি আর জিৎ ৬ বছর একসঙ্গে ছিলাম: স্বস্তিকা
শ্রাবন্তীকে আপত্তিকর স্পর্শ, তেড়ে গেলেন নায়িকা
চুম্বন দৃশ্যে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার কথা স্মরণ করে কৌশানী মুখার্জি বলেন, “এখন এটা অনায়াসে বলতে পারি, আমার অভিনীত সেরা চরিত্র এটি। পর্দায় ঠোঁট ঠাসা চুমু খাওয়া নিয়ে আমার এত বিরোধিতা সেই জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি এই চরিত্রের জন্য। এর আগে কিন্তু বনির সঙ্গেও পর্দায় চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করিনি।”
চুম্বন দৃশ্যের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কৌশানী মুখার্জি বলেন, “আলাদা করে কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়নি। সেটে ‘ইন্টিমেসি কোঅর্ডিনেটর’ থাকেন। স্বাচ্ছন্দ হতে অনেকটা সাহায্য করেছেন তিনি। শটের আগে আমি ভীষণ চাপে ছিলাম। সকাল থেকে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। কারো সঙ্গে কথা বলছিলাম না। আমার বিপরীতে পরমদা, পরমব্রত চ্যাটার্জি। পরমদা তো ইমরান হাশমি, দারুণ চুমু খায়। পর্দায় অনেককে চুমু খেয়েছে। তবে সৃজিতদাকে বলে রেখেছিলাম, এটা যেন এক টেকেই হয়ে যায়। এই দৃশ্যের রিটেক করা যাবে না।”
সৃজিতের একটি বক্তব্য উল্লেখ করে কৌশানী মুখার্জি বলেন, “শট নেওয়ার পর চিত্রগ্রাহককে সৃজিতদা বলেছিলেন, ‘তুই যদি শট না নিতে পেরেছিস বস, পরের চুমুটা তোকে আর আমাকে খেতে হবে। কৌশানী বলে দিয়েছে আর চুমু খাবে না।’ পরে এসব কথা শুনে আমাদের কী হাসি! পরমদাও খুব ভালোভাবে সবটা সামলেছে।”
নায়ক বনি সেনগুপ্তর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন কৌশানী মুখার্জি। পরমব্রত চ্যাটার্জির সঙ্গে চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করতে আপত্তি জানাননি প্রেমিক বনি? জবাবে কৌশনী মুখার্জি বলেন, “সঙ্গী হিসেবে তো যে কারো অসুবিধা হবে। বাড়ি ফেরার পর কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ একটা পরিস্থিতি ছিল। আমি ওর জীবনে আসার আগে পর্দায় বনি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেছে। ‘বরবাদ’ সিনেমায় ঋত্বিকার সঙ্গে ঠোঁটঠাসা চুমুর দৃশ্যে অভিনয় করেছে। আমরা সম্পর্কে আসার পর এটা পর্দায় প্রথম চুমু। একটা চ্যালেঞ্জ তো ছিলই, সেটা অতিক্রম করতে হয়েছে। এটা হওয়ারই ছিল।”
পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন সৃজিত। পরমব্রত-কৌশানী ছাড়াও ‘কিলবিল সোসাইটি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন— বিশ্বনাথ বসু, সন্দীপ্তা সেন, সৌমেন চক্রবর্তী প্রমুখ। আগামী ১১ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চ ম বন দ শ য পর দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল