উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি হচ্ছে বলে অনেক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। এতে দেশীয় সুতা উৎপাকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না বলেও জানাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ বা মূল্য সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি লিখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাকসুদা খন্দকার স্বাক্ষরিত এক চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) দেওয়া তথ্য, অংশীজনের মতামত এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানে সাব্যস্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশে সব ধরনের সুতা আমদানিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দাম অপেক্ষা স্থলবন্দর থেকে সুতা আমদানিতে উল্লেখযোগ্য হারে অবমূল্যায়ন করা হয়। দেশীয় সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ অবমূল্যায়িত দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছে না।

এতে আরও বলা হয়– চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতার গড়মূল্য প্রায় সমান। অথচ স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানি করা সুতার দাম অনেক কম। ভারতের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করে দ্রুত শিপমেন্ট করার কারণে দেশের ভেতরে কম দামে প্রবেশ করছে। ফলে দেশীয় সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পখাত অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে সব স্থলবন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানি বন্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি বা  এসআরওতে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংশোধনী জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

এর আগে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদকে দেওয়া এক চিঠিতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানায় সুতা ও বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি এনিবআরকেও দেওয়া হয়।

এনবিআরে দেওয়া চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি উল্লেখ করেন, বিগত সরকার নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির অনুমতি দেয়। এসব স্থলবন্দরে সুতার মান যাচাই করে শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বা কারিগরি সক্ষমতা নেই। শুধু আংশিক আমদানির অনুমোদন দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট শিল্পের পর্যবেক্ষকদের মতে, এর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সুতাকলগুলো।

চিঠিতে আরও বলা হয়, কার্যাদেশ কম পাওয়াসহ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয় মিলগুলো। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প যখন গভীর সংকটে, তখন বাংলাদেশে ভারতের টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা দেশের স্বার্থবিরোধী।

এতে আরও বলা হয়, স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ফলে বিদেশি সুতা নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে, আমদানি ব্যয় বাড়বে। একইসঙ্গে বাড়বে বেকারত্ব।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ত আমদ ন ব ট এমএ আমদ ন ব যবহ উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ