সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও লন্ডনের একটি আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁর ‘আইনজীবীরা প্রস্তুত’। 

ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে তিনি এ কথা জানান।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপাতত সম্পর্কের বিষয়ে কোনো অনুশোচনা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘আপনারা আমার আইনি চিঠিটি দেখুন এবং দেখুন আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আছে কি না.

.. (বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ) একবারের জন্যও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি কিন্তু তাদের কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায় রয়েছি।’

এমপি টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কারণ, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি তদন্তে তার নাম উঠে আসে। পরে বিরোধীদের ব্যাপক চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, ‘মাসখানেক হয়ে গেল অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু (বাংলাদেশের) কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ 

টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি লিখে বলেছিলেন যে, অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’। 

চিঠিতে বলা হয়, দুদককে ‘২০২৫ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে অথবা তার আগে’ টিউলিপ সিদ্দিককে প্রশ্ন করতে হবে, অন্যথায় ‘আমরা ধরে নেব যে, উত্তর দেওয়ার মতো কোনো বৈধ প্রশ্ন নেই।’

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি। স্কাই নিউজ মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জবাব পায়নি।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মূলত তার খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কের ওপর কেন্দ্র করে তৈরি। শেখ হাসিনা প্রায় ২০ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত আগস্টে সারা দেশে তার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের পর তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

হাসিনার বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার শাসনামলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ক্ষমতার অন্যান্য অপব্যবহার নিয়মিত ঘটেছে। তবে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, পুরোটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের যে কয়টি বাড়িতে বসবাস করতেন, সেগুলোর সঙ্গে তার খালার দল আওয়ামী লীগের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। অবশ্য অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মান নিয়ন্ত্রক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের জিম্মায় তুলে দেন, অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য।

স্যার লরি ম্যাগনাস সে সময় বলেছিলেন, তিনি ‘কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাননি’ তবে যোগ করেন, তার খালার সঙ্গে সম্পর্কের ‘সম্ভাব্য সুনামগত ঝুঁকি’ সম্পর্কে টিউলিপ সিদ্দিকের আরও সতর্ক না হওয়া ‘দুঃখজনক’। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তার পদে থাকা সরকারের জন্য ‘বিচ্যুতি’ তৈরি করবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি কোনো ভুল করেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট উল প স দ দ ক ট উল প স দ দ ক য গ কর ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়

নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা: আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কিন্তু খুব একটা সূক্ষ্ম তারের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু চারদিকে আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন, চারদিকে একটু চোখ–কান খোলা রাখেন। দেখবেন কতগুলো ঘটনা ঘটছে, যে ঘটনাগুলোর আলামত ভালো না। এদিকে একটু লক্ষ রাখতে হবে।’

দেশের মানুষ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কী, সেটি বোঝে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই সংস্কার হোক। সাধারণ মানুষ কিন্তু চায় যে একটা নির্বাচন হোক, সে নির্বাচন থেকে নতুন সরকার আসুক। যে সরকার তারা নির্বাচিত করতে পারবে, যে প্রতিনিধি তারা নির্বাচন করবে। তাদের কথা বলার লোক তারা পার্লামেন্টে (সংসদ) নিতে চায়। এটা খুব সহজ হিসাব।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই যে বিষয়গুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এই বিতর্কগুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এর পেছনে আপনি যদি মনে করেন এমনি এমনি করা হচ্ছে, তা নয়। এর পেছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যটা সেই এক–এগারোতে ফিরে যাবেন, সেই উদ্দেশ্যটা, সেই একেবারে ফিরে চলে যাবেন এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা দখল করা পর্যন্ত। এ দেশে গণতন্ত্রকে চলতে দিতে চায় না। একটা মহল আছে যারা বারবার গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও এই কাজটা করেছেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করে।’

বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেসি (উদার গণতন্ত্র) চায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশের জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। সে ভোট দিক। ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি সে নির্বাচিত করুক। পার্লামেন্ট (সংসদ) তৈরি হোক, সরকার তৈরি হোক। তারা চালাবে পাঁচ বছর। সেই পাঁচ বছরে যদি তারা ব্যর্থ হয়, না পারে, আবার নির্বাচন হবে। নির্বাচনে জনতা তাদের বাদ দিয়ে দেবে, অন্য দলকে দেবে। তাই তো? এই জায়গাটায় যেতে এত তর্ক–বিতর্ক কেন?

নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের জন্য সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ডেডলাইন (সময়সীমা), এর পরে হলে আপনি যে সম্মান নিয়ে এসেছেন, সমগ্র বিশ্বে আপনার যে সম্মান, সেই সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’

সভায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত এক বছরে বাংলাদেশের জন–আকাঙ্ক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং পুরা জিনিসটাই আপনি সংস্কারের নামে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে এত বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন; শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমার ব্যক্তিগত অপিনিয়ন (মতামত), সংস্কারের নামে অপসংস্কার কুসংস্কার তৈরি করে নিয়ে যাবেন। একটু থামেন, আপনার তো এত ম্যান্ডেট নাই। সবকিছু নিয়েই আপনি বসে পড়েছেন। জুলাই সনদ হবে, জুলাই ঘোষণা হবে, সবই ঠিক। আর কত সময় নেবেন?

তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কিন্তু খুব বেশি সময় নাই। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় যেন না ঘটে। আইনজীবীসহ সারা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আবার রাজপথের আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমাদেরকে বাধ্য করবেন না।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য দেখি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখি না। গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন, আইনজীবীরা কালো কোট পরে মাঠে নামলে কেউ থাকতে পারে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে বিদায়ের চিন্তা করুন।’ সরকারে থাকা দুই তরুণ উপদেষ্টাকে যেন তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতি জানান তিনি।

সভার শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়
  • সুরাইয়া মতিনের মৃত্যুতে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের শোক
  • ‎আবু সাঈদ হত্যা: ৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের আদেশ 
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট
  • শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
  • কিশোরগঞ্জে আইনজীবীর বাড়িতে ডাকাতি, ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট
  • আবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন
  • দুদকের মামলায় রাজশাহীর সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কারাগারে
  • বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ