মদিনায় মুনাফেকির উদ্ভব হওয়ার কিছু সুস্পষ্ট কারণ ছিল। মক্কার প্রথম দিকের মুসলিমরা শক্তিশালী বা প্রভাবশালী ছিলেন না। যার ফলে তাদের দেখে অন্যরা তাদের পক্ষে আসতে রাজি হয়নি। মক্কার জনগণ, বিশেষত নেতৃবৃন্দ, নবীজির (সা.) প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল, মুসলিমদের ওপর অত্যাচার করেছিল এবং নতুন ধর্মের অগ্রগতিকে রুখে দেওয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব করেছিল।

 এই অত্যাচারের ফলে অনেক মুসলিম আবিসিনিয়া এবং পরে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিছু মুসলিমকে এমন অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল যে, তারা ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমনকি অনেক মুসলিম অত্যাচারের কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

মদিনায় পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নবীজি (সা.

) সেখানে হিজরত করার আগে দুইটি প্রভাবশালী উপজাতি, আউস ও খাযরাজের মধ্যে বেশ অনেক শক্তিশালী অনুসারী তৈরি করে নিয়েছিলেন। মদিনায় যখন হিজরত করেন, তত দিনে সেখানে ইসলামের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি নিশ্চিত হয়েছিল। মদিনায় এমন কোনো পরিবার ছিল না, যেখানে ইসলামের অনুসারী ছিল না।

আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তবে মদিনায় এমন অনেক ছিল যারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, হয় তারা নবীজির (সা.) বার্তা শোনেনি বা তারা নবীজির (সা.) আগমনকে তাদের প্রভাবের জন্য হুমকি মনে করেছিল। তারা বুঝেছিল যে, মদিনায় মুহাম্মদ (সা.) এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে শত্রুতা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা জানত যে, তাদের নিজের উপজাতির সদস্যদের একটি বড় অংশ আউস ও খাযরাজ মুসলিম হয়ে গেছেন এবং নবীজির (সা.) প্রতি নিষ্ঠাবান সমর্থন প্রদান করছেন। তাই যারা এখনো হৃদয়ে শির্‌ক ধারণ করে রেখেছে এবং নিজেদের মধ্যে বিরাগ পোষণ করছিল, তাদের কাছে একমাত্র বিকল্প ছিল মুনাফেকি প্রদর্শন করা। তারা মুসলিম হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে ইসলামের দায়িত্ব পালন করছে বলে দাবি করত, কিন্তু আসলে তারা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছিল।

প্রায়ই তাদের মুনাফেকির পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন মুসলিমরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন তারা সব সময় এমন পরামর্শ দিতে থাকে যে, যা আসলে মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর। যদিও তারা কখনো নিজেদের অবিশ্বাসী বলত না, কিন্তু আসলে কুফরি অবস্থানে ছিল। তবে নবীজি (সা.) এবং তার সাহাবিরা তাদের প্রকৃত মুনাফেকি বুঝতে পেরেছিলেন।

আরও পড়ুনযেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এল১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নবীজি (সা.) ছিলেন চারপাশে মুশরিকদের দিয়ে ঘেরা। তারা মদিনার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি বড় পরাজয়ের জন্য যেকোনো সুযোগের সন্ধান করছিল। ওদিকে মদিনার ইহুদিরাও ইসলামকে শত্রু ভাবত। তারা মোনাফেকদের সঙ্গে একটি প্রাকৃতিক জোট তৈরি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে।

 এ-সময় কোরআন বারবার তাদের ষড়যন্ত্রগুলো প্রকাশ করে নবীজি ও তার অনুসারীদের সতর্ক করে দেয়। তারা দ্রুত মহানবীর (সা.) অবস্থান শক্তিশালী করে এবং ইসলামের শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়। ফলে মোনাফেকরা শক্তিশালী একক দল বা সুস্পষ্ট শত্রু হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। বরং ইসলামের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তারা দুর্বল হতে থাকে এবং তাদের প্রভাব কমে যেতে থাকে। আল্লাহ তাদের কৌশলগুলো নস্যাৎ করে দেন এবং মহানবীকে (সা.) বিজয় দান করেন।

 সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট কম

আরও পড়ুনজামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি২৫ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম র অন স র কর ছ ল র জন য মদ ন য় হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ