মদিনায় মুনাফেকির উদ্ভব কেন হয়েছিল
Published: 3rd, April 2025 GMT
মদিনায় মুনাফেকির উদ্ভব হওয়ার কিছু সুস্পষ্ট কারণ ছিল। মক্কার প্রথম দিকের মুসলিমরা শক্তিশালী বা প্রভাবশালী ছিলেন না। যার ফলে তাদের দেখে অন্যরা তাদের পক্ষে আসতে রাজি হয়নি। মক্কার জনগণ, বিশেষত নেতৃবৃন্দ, নবীজির (সা.) প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল, মুসলিমদের ওপর অত্যাচার করেছিল এবং নতুন ধর্মের অগ্রগতিকে রুখে দেওয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব করেছিল।
এই অত্যাচারের ফলে অনেক মুসলিম আবিসিনিয়া এবং পরে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিছু মুসলিমকে এমন অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল যে, তারা ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমনকি অনেক মুসলিম অত্যাচারের কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
মদিনায় পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নবীজি (সা.
তবে মদিনায় এমন অনেক ছিল যারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, হয় তারা নবীজির (সা.) বার্তা শোনেনি বা তারা নবীজির (সা.) আগমনকে তাদের প্রভাবের জন্য হুমকি মনে করেছিল। তারা বুঝেছিল যে, মদিনায় মুহাম্মদ (সা.) এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে শত্রুতা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা জানত যে, তাদের নিজের উপজাতির সদস্যদের একটি বড় অংশ আউস ও খাযরাজ মুসলিম হয়ে গেছেন এবং নবীজির (সা.) প্রতি নিষ্ঠাবান সমর্থন প্রদান করছেন। তাই যারা এখনো হৃদয়ে শির্ক ধারণ করে রেখেছে এবং নিজেদের মধ্যে বিরাগ পোষণ করছিল, তাদের কাছে একমাত্র বিকল্প ছিল মুনাফেকি প্রদর্শন করা। তারা মুসলিম হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে ইসলামের দায়িত্ব পালন করছে বলে দাবি করত, কিন্তু আসলে তারা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছিল।
প্রায়ই তাদের মুনাফেকির পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন মুসলিমরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন তারা সব সময় এমন পরামর্শ দিতে থাকে যে, যা আসলে মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর। যদিও তারা কখনো নিজেদের অবিশ্বাসী বলত না, কিন্তু আসলে কুফরি অবস্থানে ছিল। তবে নবীজি (সা.) এবং তার সাহাবিরা তাদের প্রকৃত মুনাফেকি বুঝতে পেরেছিলেন।
আরও পড়ুনযেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এল১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নবীজি (সা.) ছিলেন চারপাশে মুশরিকদের দিয়ে ঘেরা। তারা মদিনার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি বড় পরাজয়ের জন্য যেকোনো সুযোগের সন্ধান করছিল। ওদিকে মদিনার ইহুদিরাও ইসলামকে শত্রু ভাবত। তারা মোনাফেকদের সঙ্গে একটি প্রাকৃতিক জোট তৈরি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে।
এ-সময় কোরআন বারবার তাদের ষড়যন্ত্রগুলো প্রকাশ করে নবীজি ও তার অনুসারীদের সতর্ক করে দেয়। তারা দ্রুত মহানবীর (সা.) অবস্থান শক্তিশালী করে এবং ইসলামের শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়। ফলে মোনাফেকরা শক্তিশালী একক দল বা সুস্পষ্ট শত্রু হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। বরং ইসলামের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তারা দুর্বল হতে থাকে এবং তাদের প্রভাব কমে যেতে থাকে। আল্লাহ তাদের কৌশলগুলো নস্যাৎ করে দেন এবং মহানবীকে (সা.) বিজয় দান করেন।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট কম
আরও পড়ুনজামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি২৫ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম র অন স র কর ছ ল র জন য মদ ন য় হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ কম
তৃতীয় দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় আজ শুক্রবার থেকে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। বাড়তি শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কত শতাংশে স্থির হয় সেটি ফয়সালা না হওয়ায় মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগামী মৌসুমে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম দিচ্ছে। আবার কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময় চলে এলেও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা আগের মতো উদ্বিগ্ন নন। কারণ, দুই-তিন দিন ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসার মৌসুম। তবে পাল্টা শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। তাতে তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। সেটি অনুমান করে মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুতির চেয়ে ১০-২০ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দিতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি নামিয়ে আনা গেলে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তার কারণ চীন থেকে ব্যাপক হারে ক্রয়াদেশ সরবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমরা খুব বেশি ভয় পাচ্ছি না এখন। তবে বাড়তি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমবে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রয়াদেশও কিছুটা কমতে পারে। বাড়তি শুল্ক কার্যকর ও শুল্কহার নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে আগামী ৩-৪ মাস হয়তো ক্রয়াদেশ কম থাকতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে পারলে ক্রয়াদেশ বাড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেন। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কহার কমাতে তৃতীয় দফার আলোচনা করতে বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এই দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষ করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ইভিন্স গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
জানতে চাইলে ইভিন্স গ্রুপের পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ আসার গতি বর্তমানে কিছুটা ধীর। পাল্টা শুল্ক শেষ পর্যন্ত কত দাঁড়ায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে বাড়তি এই শুল্ক শেষ পর্যন্ত মার্কিন ক্রেতাদের দিতে হবে। ফলে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে দেশটিতে বেসিক বা নিত্য ব্যবহার্য তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। আমরা এসব সস্তা পোশাকই বেশি রপ্তানি করি। ফলে আমাদের রপ্তানি কমতে পারে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে রপ্তানি করে ৩০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার একটি বড় অংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম বলেন, ‘মার্কিন বড় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সোর্সিং অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ক্রয়াদেশ ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে। এপ্রিলে আমরা যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ৫ শতাংশের মতো মূল্যছাড় দিয়েছিলাম, সেটি বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক শীর্ষ বড় বাজার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। এ ছাড়া মাথার টুপি বা ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা ইত্যাদি বেশি রপ্তানি হয়।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বর্তমানে ক্রয়াদেশ কিছুটা কম। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের পণ্যে শুল্ক কত দাঁড়াচ্ছে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এ ছাড়া আমাদের পাল্টা শুল্ক কমবে বলে আমরা আশাবাদী।’