বাংলাদেশে পরিসংখ্যানভেদে প্রায় ২০ লাখ তরুণ প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশযোগ্যতা লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কাজ পান না, অনেকে পেলেও যোগ্য কাজটি পান না কিংবা অনেকেরই আকাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক মেলে না। বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান আর দারিদ্র্য বিমোচন যেহেতু একই সূত্রে গাঁথা, তাই এখানে ক্রমাগত বিনিয়োগও প্রণিধানযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে, বিশেষত ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সংকট চলছে। ডলার–সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁদের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে ঋণ ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানের ওপর, সেভাবে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। যদিও প্রতিবছর কর্মক্ষম বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁদের একটি বড় অংশই কাজ না পেয়ে বেকার থাকছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের শুরুতে বেকার মানুষ কম থাকলেও বছরের শেষে ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বেড়েছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬ লাখ ৬০ হাজার বেকার আছেন। ২০২৩ সালের একই সময়ে গড় বেকারসংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। 

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক দশকে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেড়েছে গড়ে দেড় শতাংশ হারে। যদিও একই সময়ে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও তাঁদের বেশির ভাগই ছায়া বা প্রচ্ছন্ন বেকার বা আংশিক বেকার। অর্থাৎ তাঁদের শ্রমশক্তি পুরো কাজে আসছে না।

বর্তমানে তাই বেকারত্বও বড় ধরনের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতির জন্য। মূলত অর্থনীতির প্রতিটি খাত এভাবে চক্রাকারে একে অন্যকে প্রভাবিত করে। তাই একটা সমস্যার সমাধান ছাড়া অন্য সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়ে। বেকারত্ব দূর করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান। নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে বিনিয়োগও আবশ্যক। আর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে প্রয়োজন এর প্রতিবন্ধকতাগুলো, যেমন জ্বালানিসংকট, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করা। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত।

গত দেড় দশকে সেভাবে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়নি। এমনকি তথাকথিত উচ্চ প্রবৃদ্ধির সময়েও জিডিপির অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়েনি। আবার শ্রমবাজারে শোভন চাকরির অভাব রয়েছে। কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সিংহভাগই রয়েছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। ঋণ প্রবৃদ্ধি না হওয়া, বিনিয়োগস্বল্পতা, জ্বালানির অভাব ইত্যাদি কারণে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলেও সরকারি খাতেও খুব বেশি কর্মসংস্থান সৃজন হয়নি।

এদিকে দেশের অর্থনীতির বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক হওয়ায় উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ, তাঁরা উৎপাদন খাত ও কারখানা পর্যায়ে কাজ করতে সেভাবে আগ্রহী নন। আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মে নিশ্চয়তা নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে এবং মজুরিও তুলনামূলক কম থাকায় এ খাতে উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা যুক্ত হতে চান না।

যদিও সরকারি চাকরিতে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় একসময় মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। আবার বেসরকারি ও সরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধাজনিত ব্যবধান বাড়ায় তরুণেরা ঝুঁকেছেন সরকারি চাকরির দিকে। যদিও বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, কেবল ৫ শতাংশ কর্মরত সরকারি চাকরিতে। যেখানে দেশে কোনো না কোনো কাজে যুক্ত থাকার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন সাত কোটির বেশি মানুষ, সেখানে সরকারি চাকরিতে জনবলের সংখ্যাও খুবই নগণ্য।

সারা বিশ্বে এখন অখামারি বা নন-ফার্ম কৃষি খাত আকারে-আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকন্তু প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প এবং প্রক্রিয়াজাত খাতেও শিক্ষিত তরুণদের নিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে। ঠিকভাবে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স বিকাশ লাভ করলে উদ্যমী নারীদেরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে উদ্যমী নারীদের লাভজনক ব্যবসায় প্রশিক্ষিত করে তোলাও প্রয়োজনীয়। অনেকে পছন্দ করুন আর না করুন, কর্মসংস্থান নিশ্চিতে বিনিয়োগের ধারাকে অবারিত করতে আমাদের শিগগিরই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পথেও এগোতে হবে। 

মূলত এটি নির্দেশ করে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের অভাবকে। বিবিএসের ওই জরিপ বলছে, দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যুক্ত শ্রমজীবীর হার ৮৪। আর প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন মাত্র ১৬ শতাংশ। এ বাস্তবতায় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি বেকার সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। এর জন্য শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন খাতে জনবল নিয়োগ পরিকল্পনা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদেরও মত, দেশে সরকারি চাকরিজীবীর হারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তাই এ খাতে আরও বেশি লোকবল প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনশৃঙ্খলার মতো জায়গায়ও আরও জনবল প্রয়োজন। তা ছাড়া সরকারি খাতে জনবল কম থাকার বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। বিভিন্ন খাতে সেবা প্রদান ও নীতিমালা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। সরকারি খাতে পর্যাপ্ত জনবল না থাকলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তাসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোয় সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়। 

আরেকটি প্রায় নির্মম বাস্তবতা হলো দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার বিচারে সবার জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই অধিকসংখ্যক উদ্যোক্তা তৈরির দিকেও নজর দিতে হবে।

এ জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় হতে পারে বৃহত্তর কৃষি খাত—খামার ও অখামারি কৃষি খাত। একসময় জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল বেশি। দেশের শ্রমশক্তিও ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত অর্ধশতকে দেশের অর্থনীতির কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কৃষিনির্ভরতা কাটিয়ে শিল্পের দিকে এগিয়েছে দেশ। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান কৃষিকে ছাড়িয়ে গেলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না শ্রমবাজারে। এ পরিস্থিতিতে কৃষিতে আধুনিকায়ন, যথাযথ প্রশিক্ষণ ও উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য উৎপাদনের সুযোগ থাকলে এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। 

সারা বিশ্বে এখন অখামারি বা নন-ফার্ম কৃষি খাত আকারে-আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকন্তু প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প এবং প্রক্রিয়াজাত খাতেও শিক্ষিত তরুণদের নিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে। ঠিকভাবে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স বিকাশ লাভ করলে উদ্যমী নারীদেরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে উদ্যমী নারীদের লাভজনক ব্যবসায় প্রশিক্ষিত করে তোলাও প্রয়োজনীয়। অনেকে পছন্দ করুন আর না করুন, কর্মসংস্থান নিশ্চিতে বিনিয়োগের ধারাকে অবারিত করতে আমাদের শিগগিরই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পথেও এগোতে হবে। 

মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ রমশক ত প রব দ ধ পর য প ত চ কর র চ কর ত কম র স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতির স্বার্থে খোলামেলা আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলামেলা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারসহ সব পক্ষ আন্তরিক হলে আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান।

জাতীয় নির্বাচ‌নে দ‌লের চূড়ান্ত প্রার্থী তা‌লিকা সময়মতো ঘোষণা করা হ‌বে ব‌লে বলেও জানান তিনি। এছাড়া,  জোটবদ্ধ হ‌য়ে নির্বাচ‌নে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তি‌নি।

বিএন‌পির প্রার্থী তা‌লিকা ঘোষণা করা হ‌য়ে‌ছে, জামায়া‌তের তা‌লিকা ক‌বে ঘোষণা করা হ‌বে জান‌তে চাই‌লে দলের আমির ব‌লেন, “তারাও (বিএনপি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি। আমি দেখেছি ২৩৭ টা আসনে তারা তালিকা প্রকাশ করেছেন, আবার এটিও চূড়ান্ত নয়। এরমধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে।” 

“আমরা কিন্তু এক বছর আগেই এই তালিকা আঞ্চলিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকাটা সময়মতো আমরা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করব। তবে যেহেতু আমরা একা ইলেকশন করব না, আরো অনেককে আমরা ধারণ করব, দেশ এবং জাতির স্বার্থে সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্তভাবে যথাসময়ে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রার্থী ঘোষণা করব।” 

আসন্ন নির্বাচন যথাসম‌য়ে অনুষ্ঠা‌নের বিষ‌য়ে আশাবাদ ব‌্যক্ত ক‌রে জামায়া‌তের আমির বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, আমরা আপনারা দেশবাসী সবাই দেখতে চাই।” 

মতানৈক্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য: রাজনী‌তি‌তে মতানৈক্য কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়া‌তের আমির বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, আমাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকবে, তবে দোয়া করেন মতবিরোধ যেন না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সব দল তো এক দল নয়। সবগুলো দল ভিন্ন ভিন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও মতপার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক।” 

“আমরা সকলের মতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। তবে আমরা নিজেরা যে মতটা প্রকাশ করি আমরা চেষ্টা করি চিন্তাভাবনা করে জাতির স্বার্থেই সে মতগুলা প্রকাশ করা হয়। অতএব, মতানৈক্য এটা ডেমোক্রেসির সৌন্দর্য। এটার জন্য এখানে বিরোধ লেগে গেছে অথবা দেশ একেবারে অস্থির হয়ে গেছে আমরা এইটুকু চিন্তা করতে রাজি নই” বলেন তিনি।  

খোলামেলা আলোচনার আহ্বান:

জুলাই সনদ বাস্তবায়‌নে আদেশ জা‌রি ও গণ‌ভো‌টের বিষ‌য়ে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অলরেডি দিয়ে দিয়েছি।”

সরকার রাজনৈতিক দলসমূহকে সময় বেঁধে দিয়েছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না, উনারা সময় বেঁধে দেই নাই; আমি শুনেছি ভাল করে। উনারা অনুরোধ করেছেন যে, এক সপ্তাহ সময়ের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলা বসে যদি একটা কনসেনসাসে পৌঁছাতে পারে, তাহ‌লে তারা সিদ্ধান্ত দি‌য়ে দে‌বে। সরকার ভালো কথাই ব‌লে‌ছে।” 

তি‌নি ব‌লেন, “আমরাই সবার আগে আহ্বান জানিয়েছি যে, আসুন, আমরা খোলামেলা আলোচনা করে জাতির স্বার্থে একটা সমাধানে পৌঁছি। আমরা আশা করি, অন্যরা আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।” 

এর আগে গতকাল সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আমি ‘আমির’ নির্বাচিত হইনি:

আবারো দ‌লের আমির নির্বা‌চত হওয়া প্রস‌ঙ্গে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “আমি ‘আমির’ নির্বাচিত হইনি। আমার সহকর্মীরা আমার ওপর একটা দায়িত্বের ভার অর্পণ করেছেন, এই দায়িত্বটা বড় ভারী। আপনারা দোয়া করবেন, দেশ এবং দ্বীনের জন্য এই দায়িত্ব পালনে আল্লাহ যেন আমাকে সাহায্য করেন। আর পাশাপাশি আমি আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে জামায়া‌তের আমির ব‌লেন, “আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাবার আগে আরেকবার আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করব। আসলে আপনারা ব্যক্তিগতভাবে জাতির বিবেক আর আপনাদের হাউসগুলো দর্পণ। আমরা সমাজের এই দর্পণ এবং জাতির বিবেকের কাছে দেশ গড়ার অভিযাত্রায় জামায়াতে ইসলামী যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে যা দেশ এবং জাতির কল্যাণে আমরা এই সবগুলোতে আপনাদেরও কাছে চাই। কারণ আপনারা এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। আপনারা শুধু সাংবাদিক নন, আপনারা এই দেশের নাগরিকও বটে। অতএব, আমরা যারা নাগরিক অধিকারটা নিশ্চিত করে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই, এই ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা হবে অগ্রগণ্য, আমরা সেটা প্রত্যাশা রাখি। কারণ সাংবাদিকরা যখন জাতির কল্যাণে সিদ্ধান্ত নেন, জাতি তখন কল্যাণের পথ খুঁজে পায়।”

বি‌দেশ সফ‌রের কথা তু‌লে ধ‌রে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, “আপনারা হয়ত জানেন গত মাসের ১৯ তারিখ আমি ওমরা করার উদ্দেশ্যে দেশ থেকে বের হয়েছিলাম। তিন দিনে ওমরা সম্পন্ন করার পর ২২ তারিখ সকাল ৯টায় আমেরিকার জেএফকে এয়ারপোর্টে আমি আল্লাহর মেহেরবাণীতে সেখানে পৌঁছাই এবং সেখানে ৮ দিনব্যাপী বিভিন্ন স্তরে সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি শহরে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখা করার সু‌যোগ হ‌য়ে‌ছে।”

“সেখান গুরুত্বপূর্ণ দুটি কথা দুটি মেসেজ তাদেরকে দিয়েছি। একটা হচ্ছে বাংলাদেশ আমাদের সকলের। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং নিষ্পেশন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পর বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মুক্তির এই সংগ্রামে দেশবাসীর সাথে প্রবাসে যারা ছিলেন, তারাও সমানতালে লড়াই করেছেন। তাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই অবদানের জন্য তাদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আর আমরা বলেছি, প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় অধিকার ভোটাধিকার এত দিন ছিল না। এ দাবি সবার আগে আমরা তুলেছিলাম। আমরা এ দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল জায়গায় প্রবাসীদের হয়ে কথা বলেছি। আমরা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই; এই প্রথমবারের মত ব্যাপক ভিত্তিক আমাদের প্রবাসীদেরকে ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে।”

ভোটার হওয়ার জন্য অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এ জন্য যে সফটওয়ার ইনস্টল করা হয়েছে তা প্রোপারলি ফাংশন করে নাই, যার কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভোটার হতে পারেননি। আমাদের দাবি থাকবে নির্বাচন কমিশনের কাছে কমপক্ষে আরও ১৫ দিন এই সময় বর্ধিত করা হোক এবং যে জটিলতাগুলো রয়েছে- এগুলো সহজ করে তাদেরকে ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। আরও কিছু সমস্যা আছে; কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলব একজন নাগরিকের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড যথেষ্ট। পাশাপাশি তার যদি একটা ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকে-তাহলে আর কিছুরই প্রয়োজন হয় না। এর বাই‌রে যে সব শর্ত তা যেন শিথিল ক‌রে দেয়।” 

তুরস্ক সফর সফল হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে দল‌টির আমির ব‌লেন,  “তুরস্কে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের আমার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। আর বাংলাদেশি যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমার বসা হয়েছে, তাদের কথাও শোনার সুযোগ হয়েছে। আমি আসলে নিজের কোনো প্রয়োজনে দেশ থেকে বের হইনি। আমি বের হয়েছিলাম দেশ এবং জনগণের প্রয়োজনে। যেখানেই গিয়েছে জনগণের স্বার্থকে দেশের স্বার্থকে সামনে রেখেই কথা বলার চেষ্টা করেছি।” 

তিনি বলেন, “দুনিয়ার সকলের সাথেই আমরা সম্মানজনক সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্কটা হবে মিউচুয়াল রেসপেক্ট এবং ইকিউয়িটির ভিত্তিতে।” 

সৌদি আরবে পবিত্র ওমরা পালন এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর শেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান মঙ্গলবার ভো‌রে ঢাকায় ফেরেন।

এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দ‌লের সি‌নিয়র নেতারা তা‌কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

দ‌লের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সংসদ সদস্য মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম ও এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলালসহ কেন্দ্রীয় আরো অনেক নেতাকর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ